অবশেষে সুইডেন-ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোতে নিতে তুরস্কের সমর্থন

ডেস্ক রিপোট

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২২, ০৯:৫৭ এএম | আপডেট: ২৯ জুন ২০২২, ১০:০২ এএম

মাদ্রিদে ন্যাটো সম্মেলন। ছবি : টু্ইটার

মাদ্রিদে ন্যাটো সম্মেলন। ছবি : টু্ইটার

সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ন্যাটো সামরিক জোটে যোগ দেওয়ার প্রস্তাবকে অবশেষে সমর্থন দিয়েছে তুরস্ক। প্রথমদিকে ওই দুই দেশের ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার বিরোধিতা করেছিল দেশটি।

ন্যাটো সামরিক জোটের নিয়ম অনুযায়ী, নতুন কোনো সদস্য নিতে হলে জোটের সবগুলো দেশের সম্মতি থাকতে হয়। ফলে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার আগ্রহ জানালেও তুরস্কের আপত্তির কারণে তা আটকে গিয়েছিল।

তুরস্ক মনে করে, দেশ দুটি কুর্দি জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার বিরোধী রাশিয়া। পশ্চিমা এই সামরিক জোট সম্প্রসারণ করতে চাইছে, এমন দাবি তুলে ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করেছিল রাশিয়া।

কিন্তু মস্কোর সেই অভিযান উল্টো ফলাফল দিতে শুরু করেছে। এতদিন নিরপেক্ষ দেশ হিসাবে থাকলেও ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর এখন ন্যাটো জোটে যোগ দিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড।

এরই মধ্যে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সম্মেলনে যোগ দিতে স্পেনের মাদ্রিদে জড়ো হয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানসহ ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সরকারপ্রধানও। ন্যাটো সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে গতকাল মঙ্গলবার (২৮ জুন) চার ঘণ্টা আলোচনা হয়।

ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার সমর্থন প্রসঙ্গে এরদোয়ান বলেন, সন্ত্রাসী সংগঠন ইস্যুতে কোনো খোলামেলা বা স্পষ্ট মনোভাব নেই ওই দুই প্রতিবেশী দেশের, তাদের কীভাবে বিশ্বাস করবো আমি? 

পরে তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, যেখানে তুরস্কের উদ্বেগের বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে।

ন্যাটো মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ বলেছেন, সন্দেহভাজন জঙ্গিদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে পদক্ষেপ আরো জোরালো করার ব্যাপারে রাজি হয়েছে সুইডেন। সেই সাথে তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রির ওপর থাকা বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার বিষয়েও সম্মত হয়েছে নরডিক দেশ দুটি।

ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট নিনিস্তো বলেছেন, তিন দেশ একটি যৌথ স্মারকে স্বাক্ষর করেছে যার মাধ্যমে একে অপরের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে হুমকি মোকাবেলায় পূর্ণ সহযোগিতা আরও বাড়ানো হবে।

সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসন বলেছেন, এটা ন্যাটোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানের দপ্তর বলেছে, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের কাছ থেকে তারা যা চেয়েছে, সেটা পেয়েছে।

সুইডেনসহ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার অন্য দেশগুলোর জনগণের মধ্যে ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদানের জন্য কখনোই খুব বেশি সমর্থন ছিল না।

কিন্তু যখন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সম্প্রতি ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে স্পষ্টভাবে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, ন্যাটোর সদস্য হওয়ার দিকে তাদের যেকোনো পদক্ষেপের পরিণতি হতে পারে সামরিক, তখন উভয় দেশের মানুষ গভীরভাবে মর্মাহত হয়।

তারপর থেকে রুশ যুদ্ধবিমান নির্বিচারে সুইডিশ আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করে। ২০১৪ সালে রাশিয়ার একটি সাবমেরিন প্রবেশ করেছিল স্টকহোমের সীমানায়।

নিরপেক্ষ থাকাই যদি রাশিয়ার কাছ থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য যথেষ্ট না হয়, তবে হয়তো ন্যাটোতে যোগ দিলে দেশ দুটি প্রয়োজনীয় সুরক্ষা পেতে পারে বলে মনে করছে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের জনগণ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ার কাছে নিজেদের ১০ শতাংশ ভূমি হারালেও কোনো জোটে যোগ দেওয়া থেকে বিরত ছিল ফিনল্যান্ড। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড উত্তর ইউরোপের দেশগুলোকে আশঙ্কায় ফেলে দিয়েছে। ফলে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের মতো দেশগুলো নিজেদের অনিরাপদ ভাবতে শুরু করেছে।

ফিনল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার স্টাব বলেছেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি যখন রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করেছে, সেদিনই ফিনল্যান্ডের ন্যাটোয় যোগ দেওয়া হয়ে গেছে।

গত নভেম্বরেও সুইডেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিটার হলৎভিস্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে সুইডেন কখনো ন্যাটোতে যোগ দেবে না। কিন্তু এখন তিনি বলছেন, যদি তারা ন্যাটোতে যোগ দেন, তাহলে নরডিক দেশগুলোর নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে।

অনেকে ফিনিশ ও সুইডিশ মনে করেন, ইউরোপে এখন যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, ন্যাটোতে যোগ দিলে তা থেকে তারা সুরক্ষা পাবেন।

তবে কম হলেও ন্যাটোয় যোগ দেয়ার বিপক্ষে মনোভাবও রয়েছে একটি অংশের।

সুইডিশ পিস অ্যান্ড আরবিট্রেশন সোসাইটির সদস্য ডেবোরা সলোমন বলছেন, ন্যাটোয় যোগ দিলে রাশিয়ার সাথে পারমাণবিক উত্তেজনা আরো ঝুঁকি বাড়বে। সেই সাথে বিশ্বে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ আন্দোলনে সুইডেনের যে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রয়েছে, তা হারাতে হবে।

ন্যাটোয় যোগ দিলে বিশ্বে শান্তি রক্ষায় সুইডেনের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাও আর থাকবে না। ফিনল্যান্ডের দিক থেকে দেখতে গেলে, ইউক্রেন আক্রমণের সাথে ১৯৩৯ সালের ফিনল্যান্ড আক্রমণের মধ্যে কিছু মিল রয়েছে- যা দেশটিতে শীতকালীন যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত।

ন্যাটো কী?

ন্যাটো- নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন হচ্ছে একটি সামরিক জোট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১২টি দেশ মিলে এই জোট গঠিত হয়, যার মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স।

ন্যাটোর কোনো সদস্য আক্রমণের শিকার হলে অন্য সদস্য দেশগুলো তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে। এই জোট মূলত তৈরি হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে রাশিয়ার বিস্তার ঠেকানোর উদ্দেশ্যে।

ন্যাটোর পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে পূর্ব-ইউরোপের বামপন্থী দেশগুলোকে নিয়ে ১৯৫৫ সালে নিজস্ব আরেকটি সামরিক জোট গঠন করে সোভিয়েত রাশিয়া, ওয়ারশ প্যাক্ট নামে যা পরিচিত। সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৯৯১ সালে পতনের পর ওয়ারশ প্যাক্টের সাবেক সদস্য বেশ কয়েকটি দেশ পক্ষ পরিবর্তন করে ন্যাটোতে যোগ দেয়।

এখন ন্যাটোর সদস্য সংখ্যা সব মিলিয়ে ৩০টি। -বিবিসি


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh