দেশের সিংহভাগ আনারস উৎপাদন পার্বত্য চট্টগ্রামে

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২২, ০৩:৪১ পিএম

পাহাড় আনারস চাষের জন্য বেশি উপযোগী। ছবি- রাঙামাটি প্রতিনিধি

পাহাড় আনারস চাষের জন্য বেশি উপযোগী। ছবি- রাঙামাটি প্রতিনিধি

রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান- মৌসুমি ফল উৎপাদনে পার্বত্য চট্টগ্রামের এই তিন জেলার সুখ্যাতি দীর্ঘকালের। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত পাহাড়ে উৎপাদিত ফল দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে বাজারজাত করা হয় সারা দেশে। তবে আম, কাঁঠাল, লিচুর চেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে আনারস। 

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, দেশে উৎপাদিত আনারসের সিংহভাগই চাষ হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। বছরে গড়ে দেড় লাখ টনের অধিক আনারস উৎপাদন হয়ে থাকে পার্বত্য তিন জেলায়। 

কৃষক ও বাগান মালিকরা বলছেন, উৎপাদিত আনারসের ন্যায্যমূল্য ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা, সার ও কীটনাশকের মূল্য কমলে চাষিরা আরও লাভবান হবেন। পাশাপাশি নতুন করে বাগান সৃজনে উদ্যোক্তা হয়ে উঠবেন আরও অনেকে। 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো ঢালু হওয়ার কারণে এখানকার পাহাড় আনারস চাষের জন্য বেশি উপযোগী। পাহাড়ে উৎপাদিত আনারসের ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। 

আনারসের বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বাগান থেকে ২০-৩০ টাকা দরে কেনা বড় আকারের আনারস বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৫০ টাকায়।

এ দিকে স্থানীয় চাষিদের অভিযোগ, আনারস মৌসুমে তারা চাহিদা অনুযায়ী ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপিও সার ক্রয় করতে পারছেন না। আবার অনেকাংশে সার পাওয়া গেলেও সেটি ন্যায্যমূল্যের চেয়ে বেশি দরে ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন। যে কারণে যা খরচ হয়, আনারস বিক্রি করে বেশি লাভ হয় না। 

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সার ডিলাররা বলছেন, স্থানীয়ভাবে বোরো ধান আবাদের চাহিদা হিসেবে তারা সার বরাদ্দ পেয়ে থাকেন। আনারস মৌসুমের জন্য তারা আলাদাভাবে সার বরাদ্দ পান না। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম থেকে আলাদাভাবে সার ক্রয় করে এনে বিক্রি করলে দাম কিছুটা বেড়ে যায়। বিষয়টি এমন নয় যে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাই আনারস মৌসুমের জন্য পর্যাপ্ত সার বরাদ্দ পেলে কৃষকরাও ন্যায্যমূল্যে সার ক্রয় করতে পারবেন। এ জন্য কৃষি বিভাগের উদ্যোগী ভূমিকা প্রয়োজন। 

নানিয়ারচর উপজেলার হাতিমারা এলাকার আনারসচাষি সজীব চাকমা জানান, আমরা প্রতি বছরই আনারস চাষ করে থাকি। মূলত অক্টোবর-নভেম্বর মাস আনারসের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। কানিপ্রতি ৮ হাজার চারা লাগাতে পারি। এ বছর বাড়তি লাভের আশায় আনারস লাগিয়েছিলাম। আগাম ফলন এলে বাড়তি দাম পাওয়া যায়। এতে বেশি লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

উপজেলা মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম বলেন, নানিয়ারচরকে এক সময়ে বলা হতো আনারসের রাজধানী। এখন নানিয়ারচর ছাড়াও অন্যান্য উপজেলাতেও আনারসের চাষ হচ্ছে। নানিয়ারচরের অনেক কৃষকই আনারস চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। 

আবার অনেকেই কৃষকদের কাছ থেকে বাগান কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে আনারস সরবরাহ করছেন। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাঙামাটি কার্যালয়ের উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল জানান, রাঙামাটিতে বেশিরভাগই হানিকুইন জাতের আনারস চাষ হয়ে থাকে। জেলার নানিয়ারচর ও সদর উপজেলাতে আনারসের আবাদ করা হয়, তবে নানিয়ারচর উপজেলাতে বেশি। অন্যান্য উপজেলাগুলো চাষ হলেও বেশি ফলন হয় না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাঙামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌসুমি ফল উৎপাদনে বরাবরই উল্লেখজনক ভূমিকা রেখে আসছে। আমাদের কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা কৃষকদের সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দিয়ে পাশে থাকছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh