নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২২, ০১:২০ পিএম
শিক্ষক উৎপল হত্যা মামলার প্রধান আসামি আশরাফুল আহসান জিতু। ছবি : সংগৃহীত
সাভারের আশুলিয়ায় শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আশরাফুল আহসান জিতু মূলত বান্ধবীর সামনে নায়ক সাজতে গিয়ে তাকে স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করে।
জিতু ও তার বান্ধবীকে কলেজ ক্যাম্পাসে শাসন করার কারণেই গত ২৫ জুন স্কুলের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি উৎপলকে শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করে সে। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই জানিয়েছে হত্যার অন্যতম এই আসামি।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) দুপুরে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গতকাল বুধবার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ ও র্যাব-৪ এর যৌথ অভিযানে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জিতুকে গ্রেপ্তার করে। জিতু ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।
তিনি বলেন, সে স্কুলে সবার কাছে একজন উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, মারামারিসহ স্কুলের পরিবেশ নষ্টের জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও স্কুল চলাকালীন ছাত্রীদের ইভটিজিং ও বিরক্ত করতো। স্কুল প্রাঙ্গনে সবার সামনে ধুমপান, স্কুল ইউনিফর্ম ব্যতীত স্কুলে আসা-যাওয়া, মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করত। সে তার নেতৃত্বে এলাকায় একটি কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে। পরিবারের কাছে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে জিতু তার অনুসারি গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তাদের ওপর চড়াও হতো ও বিভিন্ন সময় এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে হামলা ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে শোডাউন দিতো।
কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, ঘটনার কয়েকদিন আগে ওই স্কুলের এক ছাত্রীর সাথে জিতুর অযাচিতভাবে ঘোরাফেরা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে নিহত শিক্ষক বারণ করেন। এ ঘটনায় সে তার শিক্ষকের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। ওই ছাত্রীর কাছে নিজের হিরোইজম প্রদর্শন করার জন্য তার ওপর হামলার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ জুন একটি ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প স্কুলে নিয়ে আসে এবং তা শ্রেণিকক্ষের পেছনে লুকিয়ে রাখে। নিহত শিক্ষককে আঘাত করার সুযোগ খুঁজতে থাকে।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে কলেজ মাঠে ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালীন শিক্ষক উৎপল কুমারকে মাঠের এক কোণে শিক্ষককে একাকী দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিতু স্ট্যাম্প দিয়ে অতর্কিতভাবে বেধড়ক আঘাত করতে থাকে। শিক্ষককে প্রথমে পেছন থেকে মাথায় আঘাত করে জিতু এবং পরবর্তীতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতরভাবে জখম করে।
র্যাব জানায়, জিতু এলাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করলেও পরবর্তীতে গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় সে এলাকা ত্যাগ করে। বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরার পর সে গাজীপুরের শ্রীপুরে ধনুয়া গ্রামে আত্মগোপনে থাকে। পরে সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে কুষ্টিয়া থেকে জিতুর বাবাকে গ্রেপ্তার করা হলেও জিতুকে গ্রেপ্তারের দাবিতে দেশজুড়ে প্রতিবাদ চলতে থাকে। এ ঘটনায় জিতুর বাবাকে বুধবারই পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে সাভারের হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ছাত্রীদের ফুটবল খেলা চলছিল। প্রভাষক উৎপল মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিলেন। এ সময় ওই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু ক্রিকেটের স্ট্যাম্প নিয়ে এসে উৎপলকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে আইসিউতে রাখা হয়। মৃত্যুর সাথে লড়ে সোমবার সকালে তিনি মারা যান।
শিক্ষক উৎপলকে হত্যার ঘটনায় ওই স্কুলছাত্রকে প্রধান আসামি করে এবং অজ্ঞাত আরো তিন-চার জনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। নিহত শিক্ষকের ভাই অসীম কুমার মামলাটি করেন।