দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ নিয়ে শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২২, ১০:৩৬ এএম

করোনা সংক্রমণ বাড়ার পরেও নগরবাসীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। রাজধানীর মিরপুর সড়ক থেকে তোলা ছবি। ছবি: সংগৃহীত

করোনা সংক্রমণ বাড়ার পরেও নগরবাসীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। রাজধানীর মিরপুর সড়ক থেকে তোলা ছবি। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ এখন চলছে। আর মাত্র এক সপ্তাহ পরই দেশে পালিত হবে ঈদুল আযহা। ৯০ শতাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ এ দেশে বসবাস করেন। কোরবানির ঈদে সবাই নাড়ির টানে বাড়ি যান। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আসছে ঈদে করোনা সংক্রমণ আরো বাড়তে পারে বলে শঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, সবচেয়ে সংকট তৈরি করছে বুস্টার ডোজ নেয়ার ক্ষেত্রে মানুষের অনাগ্রহের বিষয়টি। আর করোনার নতুন উপধরন উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। কারণ এখন এই উপধরনের দাপট চলছে বলে জানান তারা।

সরকারের হিসেব অনুযায়ী, গত ২০ জুন শনাক্তের হার শতকরা ১০ ভাগ ছাড়িয়ে গেছে। ওই দিন সারাদেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো ৮৭৩ জন। মারা গেছেন একজন। আক্রান্তের হার ছিল শতকরা ১০ দশমিক ৮৭ ভাগ। আক্রান্তের এই হারকে করোনার উচ্চমাত্রা বলা হয়৷ এরপর ১২ দিনের মাথায় গত ২ জুলাই মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১০৫ জন৷ মারা গেছেন ছয় জন। আক্রান্তের হার ১৩ দশমিক ২২ ভাগ। তার একদিন আগে ১ জুলাই আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৮৯৭ জন। মারা গেছেন পাঁচ জন। আক্রান্তের হার ১৫ দশমিক ৩১ ভাগ।

গত ১২ দিনে দেশে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৯ হাজার ৫৮৭ জন৷ আর মারা গেছেন ২৮ জন। এপর্যন্ত সারাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ লাখ ৭৬ হাজার ৭৮৭ জন৷ মারা গেছেন ১৯ হাজার ১৬০ জন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা আবার বিশ্বের ১১০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে প্রথমে ঢাকা শহরে চতুর্থ ঢেউ শুরু হলেও এখন দেশের সব বিভাগ ও জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। তা না হলে সামনে কোরবানির সময়ে এটা আরো বেশি আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সরকার মাস্ক আবার বাধ্যতামূলক করার কথা বলেছে। কিন্তু এটা মনিটরিং করা হচ্ছে না। গরুর হাট বসে গেছে কিন্তু সেখানে কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। আর ঈদযাত্রায় যদি স্বাস্থ্যবিধির প্রতি এই উদাসীনতা থাকে তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে বাধ্য।’

তিনি  আরো বলেন, ‘উদ্বেগের বিষয় হলো মৃত্যুহার বাড়ছে৷ যারা বয়স্ক, যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের জন্য বিপদ বেশি। এবার দেখছি কেউ টেস্ট করাতে চাচ্ছেন না। করোনার সব উপসর্গ থাকার পরও টেস্ট করাচ্ছেন না। এর ফলে করোনা তাদের মাধ্যমে আরো দ্রুত ছড়াচ্ছে।’

সবাইকে টিকা ও বুস্টার ডোজ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘টিকা ও বুস্টার ডোজ যারা নিয়েছেন তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এর কারণ হলো টিকার কার্যকারিতা থাকে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চতুর্থ ডোজ শুরু করেছে৷ আরো কিছুটা দেখে আমাদের চতুর্থ ডোজের ব্যাপারে চিন্তা করা উচিত।’

বাংলাদেশে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনার টিকা দেয়া শুরু হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এপর্যন্ত  দেশে ১২ কোটি ৯০ লাখের বেশি মানুষ টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন৷ দুই ডোজ পেয়েছেন ১১ কোটি ৮০ লাখের কিছু বেশি মানুষ৷ আর বুস্টার ডোজ নিয়েছেন  দুই কোটি ৯৩ লাখ ১৫ হাজার মানুষ যা মোট জনগোষ্ঠীর ২৪ দশমিক ২৪ শতাংশ৷

১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী এক কোটি ৭৩ লাখ শিশু-কিশোর প্রথম ডোজ পেয়েছে৷ দুই ডোজ পেয়েছে এক কোটি ৪১ লাখ। সরকার চলতি জুলাই মাস থেকে পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের টিকা দেয়া শুরু করবে।

রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মোশতাক হোসেন জানান, ‘আমরা আগেই দেখেছি টিকাকে চ্যালেঞ্জ করে করোনা মানুষকে সংক্রমিত করছে। এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন ও মারা যাচ্ছেন তারা বিএ ফাইভ উপধরনে আক্রান্ত হচ্ছেন৷ এর ক্ষতি করার ক্ষমতা বেশি। আক্রান্তরা গত তিন সপ্তাহ আগে আক্রান্ত হয়েছেন৷ এখন তা প্রকাশ পাচ্ছে। গতকাল শনিবার (২ জুলাই) সংক্রমণ কিছুটা কমলেও আমার ধারণা মৃত্যু হার আরো বেড়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘তিন মাস আগে করোনায় মৃত্যু যখন শূন্যের কোঠায় নেমে আসে তখন আমরা উদাসীন হয়ে পড়ি৷ টিকার প্রতি আগ্রহ সরকার, সাধারণ মানুষ সবারই কমে যায়৷ এটা ঠিক হয়নি। আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরব, তবে সতর্ক থাকব৷ কিন্তু সেটা হয়নি৷ দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও মাস্ক ছাড়া প্রকাশ্যে চলাফেরা শুরু করেন৷ যা এখন নতুন করে বিপদ ডেকে আনছে।’

তার কথা, ‘সামনে কোরবানি। গরুর হাট বসে গেছে। এখানে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে৷ পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে ফেরির গাদাগাদি হয়তো কমবে৷ তারপরও ঈদযাত্রায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। টিকা কার্যক্রম আবার জোরদার করতে হবে। আমাদের পর্যাপ্ত টিকা আছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন টেস্ট অনেক কম হচ্ছে। টেস্ট অনেক বাড়িয়ে দেওয়া উচিত এবং বিনামূল্যে করা উচিত। তাহলে বাস্তব চিত্র যেমন বোঝা যাবে তেমনি পজিটিভ লোককে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। তবে সেজন্য সরকারকে গরিব মানুষের প্রতি আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তা না হলে তারা টেস্ট করাবেন না। তারা দিন আনেন দিন খান৷ তাদের আক্রান্ত হয়ে ঘরে থাকতে হলে আয় বন্ধ হয়ে যাবে। 

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh