২০ বছর পর মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হল তালেবানের প্রতিষ্ঠাতার গাড়ি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২২, ০২:৪০ এএম

আফগানিস্তানের দক্ষিণে জাবুল প্রদেশের একটি গ্রাম্য এলাকা থেকে মাটি খুঁড়ে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়। ছবি- সংগৃহীত

আফগানিস্তানের দক্ষিণে জাবুল প্রদেশের একটি গ্রাম্য এলাকা থেকে মাটি খুঁড়ে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়। ছবি- সংগৃহীত

তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের ব্যবহৃত টয়োটা গাড়িটি ২০ বছর পর মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয়েছে। আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসন শুরুর পরে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে আত্মগোপনে যেতে ওই গাড়িটি ব্যবহার করেছিলেন তিনি।

আফগানিস্তানের দক্ষিণে জাবুল প্রদেশের একটি গ্রাম্য এলাকা থেকে মাটি খুঁড়ে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়।

দেশটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, ‘ওই গাড়িটি জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। এর আগেও আফগানিস্তানের জাতীয় জাদুঘরে সাবেক রাজা ও প্রধানমন্ত্রীদের ব্যবহৃত বিভিন্ন গাড়ি ও কোচ সংরক্ষণ করা হয়েছে। এরমধ্যে হত্যাচেষ্টার সময় ঘাতকের গুলিতে জানালার কাচ চুরমার হয়ে যাওয়া গাড়িও রয়েছে।’

তালেবান সরকারের প্রভাবশালী নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানির ভাই আনাস হাক্কানি এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘ইতিহাসের সকল পরিস্থিতিতে অসাধারণ ভূমিকা রাখা ব্যক্তিটি এই গাড়িতে চলাচল করেছেন।’

‘তিনি আল্লাহর উপর ভরসা রেখে প্রায় ডজনখানেক দখলদার শক্তির বিরুদ্ধে এক অসম যুদ্ধে তালেবান যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দিয়ে জয় লাভ করেছেন। ফলে তার এই স্মৃতি চিহ্ন দেশের জাতীয় জাদুঘরে রাখা উচিত।’

মোল্লা ওমরের ছেলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবের নির্দেশে প্রায় ২০ বছর মাটির নিচে চাপা থাকার পর গাড়িটি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে তালেবানের একটি সূত্র।

এদিকে উদ্ধার করা গাড়িটির কয়েকটি ছবি টুইটারে পোস্ট করেছেন মুহম্মদ জালাল নামে এক তালেবান কর্মী।

এতে দেখা যায়, গাড়িটি প্লাস্টিকের শিট দিয়ে ঢেকে রাখা ছিল।

মুহম্মদ জালাল এক পোস্টে বলেন, ‘প্রয়াত আমির মার্কিন আগ্রাসনের শুরুর দিকে এই গাড়িতে করে কান্দাহার থেকে জাবুল প্রদেশে এসেছিলেন। গাড়িটি এখনো ভালো অবস্থায় আছে।’

তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের আত্মজীবনী ‘লুকিং ফর দ্য এনিমি”র লেখক বিট ড্যাম বলেন, “২০০১ সালের শেষদিকে মার্কিন-সমর্থিত সৈন্যরা যখন কাবুলে সরকার পতন ঘটায় তখন এই সাদা টয়োটা গাড়িতে করেই মোল্লা ওমর তার কান্দাহার ঘাঁটি ত্যাগ করেন।’

ওই সময় মোল্লা ওমরের মাথার জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করলেও মার্কিন ঘাঁটির আশপাশ দিয়েই চলাফেরা করতেন ওমর। 

বিট ড্যাম তার বইয়ে মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের এক সহযোগীর বরাতে লিখেন, ‘একবার মোল্লা ওমরের সন্ধান পেয়ে একটি বাড়িতে তল্লাশি চালায় মার্কিন সৈন্যরা। সেখানে তিনি লুকিয়ে থাকলেও সৈন্যরা তার গোপন কক্ষের দরজার সন্ধান পায়নি।’

২০১৩ সালে মোল্লা ওমর মারা গেলেও দুই বছর পর্যন্ত সেই কথা স্বীকার করেনি তালেবান। তবে ২০০১-এ আত্মগোপনে যাওয়ার আগেই দলের নেতৃত্বে কৌশলীভাবে নিজের অনুসারীদের বসিয়ে যান তিনি।

ওই সময় মার্কিন-সমর্থিত সরকারের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছিলেন তালেবানরা। তবে যুক্তরাষ্ট্র ওই আবেদন গ্রহণ করেনি।

গাড়িটিকে অমূল্য ও গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন বলে আখ্যা দিয়েছেন বিট ড্যাম। তিনি বলেন, ‘এক ঐতিহাসিক সময়ে মোল্লা ওমর এই গাড়িটি ব্যবহার করেছেন। একদিকে তিনি নিজের কার্যালয় ছেড়ে এই গাড়িতে করে শহর ছাড়লেন, আরেকদিকে তার নেতৃত্বের অনেকে মার্কিনিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওমর তার দাদার ভূমিতে যেতে চেয়েছিলেন। যদিও গাড়ি লুকানোর বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে তিনি ওই সময় অনিরাপত্তায় ভুগছিলেন। কারণ তখন তালেবানদের ধরপাকড় শুরু হয়ে গিয়েছিল। একারণেই হয়তো তিনি নিজের গাড়ি মাটির তলে পুতে লুকিয়ে ফেলেন।’

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh