বরিস জনসনের পতনের পাঁচ কারণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২২, ০৩:৫৯ পিএম

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ছবি: বিবিসি

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ছবি: বিবিসি

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ডাউনিং স্ট্রিটে এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এসময় নতুন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাসীন হওয়ার আগ পর্যন্ত এই অন্তর্বর্তী সময়ে একটি নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করবেন বলে জানান তিনি। 

বরিস জনসনের পতনের পাঁচটি কারণ খুঁজে বের করেছে গণমাধ্যম বিবিসি। এক নজরে সেই পাঁচটি কারণ জেনে নেওয়া যাক।

ক্রিস পিনচার কেলেঙ্কারি:

যার মধ্যে বরিসের সাথে ক্রিস পিনচারের সম্পর্ক অন্যতম একটি কারণ। পিনচারের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে এই এমপি ভুল করলেও তা আমলে নেননি বরিস। 

গত ২৯ জুন ক্রিস পিনচার একটি পার্টিতে গিয়ে অতিরিক্ত মদ্যপান করে দুইজন পুরুষকে জড়িয়ে ধরেন। এর জেরে পিনচার পদত্যাগ করেন। তবে সাথে বেরিয়ে আরেক ভয়ানক তথ্য। সেটি হলো পিনচার আগেও ওই ধরণের আচরণ করেছিলেন। কিন্তু বরিস সেটি জানা সত্ত্বেও তাকে প্রধান হুইপ করেছিলেন। এ খবর সামনে আসার পর কনজারভেটিভ পার্টির অন্য সদস্যরা ক্ষিপ্ত হন।

পার্টিগেট কেলেঙ্কারি:

করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০২০ সালে দেশজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে যুক্তরাজ্য। ওই সময় মৃত আত্মীয় স্বজনের শেষকৃত্যেও যেতে পারেননি জনসাধারণ।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পানীয় পার্টিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ছবি: বিবিসি

কিন্তু ওই সময় নিজের সরকারি বাসভবনে আইন অমান্য করে পানীয় পার্টির আয়োজন করেন বরিস জনসন। এটি তার পতনের আরেকটি কারণ।

জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি:

যুক্তরাজ্যে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া বরিসের পতনের আরেকটি কারণ। এবছরে দেশটিতে উল্লেখযোগ্যভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বর্তমানে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশ। 

মূল্যস্ফীতি বাড়ার অনেকগুলো কারণই ছিল জনসনের সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। উদাহরণ হিসেবে ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কথা বলা যায়। ওই যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক মাত্রায় অবরোধ আরোপ করায় জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের দাম হু হু করে বেড়েছে।

যুক্তরাজ্য সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় জ্বালানি তেলের ওপর থেকে শুল্ক কমানোসহ কিছু পদক্ষেপ নিলেও এপ্রিলে কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়, কর বাড়ানোর ফলে স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা খাতে ব্যয় নিশ্চিত করা যাবে। নতুন কর হারে ব্রিটেনে ৩৪ হাজার পাউন্ডের বেশি আয়ের জন্য আগের চেয়ে বেশি কর দিতে হচ্ছে।

পার্লামেন্টের বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা স্যার কির স্টারমার গত এপ্রিলে সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছিলেন, সরকার শ্রমজীবীদের ওপর কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ওয়েন প্যাটারসন দ্বন্দ্ব:

২০২১ সালের অক্টোবর মাসে যুক্তরাজ্যের সংসদীয় কমিটি তৎকালীন কনজারভেটিভ এমপি ওয়েন প্যাটারসনের সংসদ সদস্যপদ ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করে দেওয়ার জন্য প্রতিবেদন দিয়েছিল।

ওয়েন প্যাটারসন লবিং নিয়ম ভেঙে একটি কোম্পানিকে সুবিধা দিতে চেয়েছিলেন। বরিস ওই সময় সংসদীয় কমিটির বিরুদ্ধে যান এবং প্যাটারসনের সংসদ সদস্য পদ স্থগিত করার বিষয়টি বাতিল করে দেন।

কিন্তু পরবর্তীতে ঠিকই ওয়েন পদত্যাগ করেন। বরিস জনসনও স্বীকার করেন তার পক্ষে গিয়ে ভুল করেছিলেন তিনি। 

লক্ষ্য ও দূরদর্শিতার অভাব:

২০১৯ সালে ‘ব্রেক্সিট কার্যকর করা হোক’ - এই সরল নীতির ওপর ভর করে সবশেষ পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিত করেছিলেন বরিস জনসন।

অথচ তারপর থেকে জনসনের মধ্যে ডাউনিং স্ট্রিটে মনোযোগে ঘাটতি, নতুন ভাবনা-চিন্তা ও দূরদর্শিতার অভাব দেখা দেয় বলে তার সমালোচকরা দাবি করছেন।

এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর বরিসের সাবেক উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংস পরবর্তীতে তার প্রধান সমালোচকে পরিণত হন। সেই ডমিনিক কামিংস বারবার অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী একটি নিয়ন্ত্রণহীন ‘শপিং ট্রলি’তে পরিণত হয়েছেন।

বাকি সমালোচকেরাও প্রধানমন্ত্রীর দর্শন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে আদৌ তার কোনো দর্শন আছে কিনা।

কনজারভেটিভ এমপি ও সাবেক মন্ত্রী জেরেমি হান্ট গত জুন মাসে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ‘একাগ্রতা, দক্ষতা ও লক্ষ্যের’ অভাবে ভুগছেন।

রাজনীতির সব প্রচলিত নিয়ম-কানুন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বরিস জনসনের চার দশকের যে উত্তাল রাজনৈতিক জীবন, শেষ পর্যন্ত তা মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে। কিন্তু তিনি যে আবারো ফিরে আসবেন না, সেই সম্ভাবনা এখনই উড়িয়ে দেয়া যাবে না।

সূত্র: বিবিসি

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh