চট্টগ্রামের চামড়া ব্যবসায়ীদের লোকসানের ঘানি

ইমরান সোহেল, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২২, ০৩:০৪ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

দুই দশক আগেও চট্টগ্রামে ২২টি ট্যানারি ছিল। এর মধ্যে ২০টি ট্যানারি বন্ধ হয়ে গেছে। সর্বশেষ গত এক দশক ধরে মাত্র দুটি ট্যানারি কোনো রকমে টিকে ছিল। আর এখন টিকে আছে মাত্র একটি ট্যানারি। এর মধ্যে আবার চামড়ার দাম ক্রমান্বয়ে কমেছে।

ট্যানারি ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে চামড়ার আড়তদাররাও গুটিয়ে ফেলেছেন ব্যবসা। শেষ দুই বছরে ৬৭ জন আড়তদার ব্যবসা গুটিয়েছেন। এ অবস্থায় আসন্ন কোরবানির ঈদে পশুর চামড়া নিয়ে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। কারণ গত দুই বছরে চাহিদা মোতাবেক চামড়া সংগ্রহও করা যায়নি।

দেশের চামড়া শিল্পে বড় ধরনের ভূমিকা আছে চট্টগ্রামের। শুধু কোরবানির ঈদের সময় চট্টগ্রাম থেকে পাঁচ লাখের কাছাকাছি চামড়ার জোগান দেন ব্যবসায়ীরা। সারা বছরের চামড়া মিলে সেটার পরিমাণ আরও কয়েক লাখ বেড়ে যায়। কিন্তু দেশের দারুণ সম্ভাবনাময় এই খাত দিনে দিনে ঘুণে ধরা অবস্থায় পতিত হয়েছে। চামড়াজাত পণ্যের দাম নিত্য যেখানে বেড়েছে, সেখানে চামড়ার দাম ক্রমান্বয়ে কমেছে। লবণের দাম বৃদ্ধি, কোরবানিতে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অদক্ষতা, ঋণের অভাব, প্রণোদনার ঘাটতি, রাসায়নিক দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম হ্রাসসহ নানা কারণে দাঁড়াতেই পারছেন না এ খাতের ব্যবসায়ীরা।

চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চামড়া খাত সবচেয়ে সম্ভাবনাময় একটি খাত। চট্টগ্রামে এ খাতটি এখন নাজুক অবস্থা পার করছে। এক সময় চট্টগ্রামে ২২টি ট্যানারি ছিল। বন্ধ হতে হতে শেষে দুটি ট্যানারি চালু ছিল। এর মধ্যে মদিনা ট্যানারি বন্ধ হয়ে গেছে এবং এখন শুধু টিকে গ্রুপের ট্যানারিটা চালু আছে। চামড়া খাতের জন্য এটি শুভ লক্ষণ নয়। তাই চামড়া খাতে পরিবর্তন আনতে হলে সবার আগে কমপ্লায়েন্সের দুরবস্থা দূর করতে হবে। চামড়া খাতের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানে কাজ করতে হবে।

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন বলেন, মাত্র একটি ট্যানারি চট্টগ্রামে টিকে আছে। ঢাকার উপর আমাদের পুরোটাই নির্ভর করতে হয়। গত বছরের বকেয়া এখনো অনেক আড়তদার পাননি। লোকসানের উপর লোকসান দিতে দিতে অনেক আড়তদার ব্যবসা ছেড়ে চলে গেছেন। এমনিতেই চামড়া খাতে মন্দা অবস্থা চলছে, লবণের দাম ও পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে নানামুখী সমস্যায় আছি আমরা। 

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ধারণা করছে, এ বছর চট্টগ্রামে ৮ লাখ ২১ হাজার পশু কোরবানি হতে পারে। অন্যদিকে গত দুই বছরে চামড়া পানির দামে বিক্রি করতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে লবণের চেয়ে চামড়ার মূল্য কম ছিল। শূন্য মূল্য হওয়াতে ছাগলের চামড়ায় লবণ দেওয়াও বন্ধ করেন অনেক আড়তদার।

এদিকে উপজেলার পশুর চামড়া শহরে ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ঈদের দিনসহ মোট তিন দিন পশুর চামড়া উপজেলা পর্যায়ে সংরক্ষণ করতে হবে। এতে উপজেলা পর্যায়ে চামড়া সংগ্রহ বাড়বে। এ ছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমও জোরদার হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh