সুনামগঞ্জের বন্যায় রেকর্ড পরিমান ক্ষয়ক্ষতি

জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া, সুনামগঞ্জ

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২২, ০৩:৩১ পিএম

বন্যার পানি কিছুটা কমলেও বাড়িঘর সবচেয়ে বেশি বিধ্বস্ত। ছবি- সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

বন্যার পানি কিছুটা কমলেও বাড়িঘর সবচেয়ে বেশি বিধ্বস্ত। ছবি- সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। গত ১৬ জুন থেকে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়া মানুষের দুর্গতি পিছু ছাড়ছে না। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় জেলায় ৯৫ ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এবার ভয়াবহ বন্যায় পূর্বের সব ক্ষয়ক্ষতির রেকর্ড অতিক্রম করেছে। 

বন্যার পানি কিছুটা কমলেও বাড়িঘর সবচেয়ে বেশি বিধ্বস্ত হওয়ায় এখনো বিপুল সংখ্যক মানুষ নিজের ভিটায় ফিরতে পারছেন না। এতে শ্রমজীবী, দরিদ্র মানুষেরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এছাড়াও সড়ক, মাছ ও গৃহপালিত পশু-পাখির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখনো অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। 

জেলায় সরকারি হিসাবে বন্যায় সাড়ে চার লাখ মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে জেলার সচেতন মহল বলছেন, এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কয়েক হাজার নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরবাড়ির। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তারা। এর আগে একাধিক বার বন্যা হলেও এত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়নি। 

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলার ১২টি উপজেলার চার হাজার ৭৪৭টি বসতঘর সম্পূর্ণ ও ৪০ হাজার ৫৪১টি বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি সম্পূর্ণভাবে নেমে গেলে চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো জেলার বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ও ত্রাণ তৎপরতা সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করেছেন তিনি।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় জেলার ২৫ হাজার ২০৪টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এক হাজার ৬৪২টি গবাদিপশু মারা গেছে। এর মধ্যে গরু ৪২২টি, মহিষ ৩৭টি, ছাগল ৬৬৯টি ও ভেড়া ৫১৪টি। এছাড়া ২৮ হাজার ৮০৫টি মুরগি ও ৯৭ হাজার ৮৩১টি হাঁস মারা গেছে। বন্যায় জেলায় এ পর্যন্ত ৩৮৪ কিলোমিটার সড়ক, ১৫৫টি সেতু কালভার্টের সংযোগ সড়ক এবং ৪টি সেতু-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখনো বিভিন্ন স্থানে পানি আছে। তাই বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হবে।

তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মুরাদ বলেন, এবার আমার ইউনিয়নের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। হাওর পাড়ের কৃষক পরিবারের অবস্থা এখন খুবই করুণ। তাদের মাটির বসতবাড়ি, গৃহপালিত পশু-পাখির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। 

আমাদের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে এবং সহায়তা বিতরণ অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সার্বিক পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টি থামলে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে। তবে জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চলে এখনো বন্যার পানি আছে। ফলে কিছু মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। 

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের তালিকা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই তাদের মধ্যে অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে যাতে তারা বাড়িঘর মেরামত ও অর্থ দিয়ে জীবন বাঁচাতে পারে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh