ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২২, ০৩:৫২ পিএম
ময়মনসিংহ জেলার মানচিত্র
আছে সুইমিংপুল; সাঁতার শেখায় রয়েছে শিশু-কিশোরদের প্রবল আগ্রহ। খানিকটা উদ্যোগের অভাবে তৈরি হচ্ছে না সাঁতারু দল। এমনি আক্ষেপ ময়মনসিংহের সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে আসা শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবকদের। তবে সাঁতারু দল তৈরিতে আশার কথা শুনিয়েছে জেলার সর্বোচ্চ কর্মকর্তা।
২০০১ সালে ময়মনসিংহ নগরীর টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় স্থাপন করা হয় সুইমিং কমপ্লেক্স। সুইমিং পুল লম্বায় ৫০ মিটার ও প্রস্থে ২৫ মিটার। নিয়মিত একজন পিয়ন এটি দেখাশোনা করেন। দিনে দুই ঘণ্টা সকাল-বিকাল সুইমিং পুলে শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণার্থী রয়েছে প্রায় ৫০ জন।
সুইমিং পুলটি ২০০১ সালে উদ্বোধন হলেও ২০০৯ সাল থেকে সাঁতার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে জনপ্রতি ভর্তি ফি ৫০০ টাকা ও মাসিক বেতন ছিল ২০০ টাকা। তা বেড়ে বর্তমানে জনপ্রতি ভর্তি ফি দুই হাজার ৬০০ টাকা ও মাসিক বেতন ৫০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সরকারি সুইমিং পুলে টাকার বিনিময়ে সন্তানদের সাঁতার শেখাতে আসা অভিভাবকদের তেমন কোনো অভিযোগ না থাকলেও জেলায় সাঁতারু দল না থাকায় আক্ষেপ করেন তারা।
সন্তানকে সাঁতার শেখাতে আসা ঠিকাদার বিমল বর্মণের স্ত্রী রাখী বর্মণ বলেন, কিছুদিন আগে এখান থেকে আমার এক ছেলে সাঁতার শিখেছে। এখন নিয়মিত মেয়েকে সাঁতার শেখাতে নিয়ে আসছি। অনেক সময় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাই। কোনো কোনো সময় আবার নদীপথেও ঘুরতে যাওয়া হয়। তখন যেন কোনো বিপদে পড়তে না হয়, তাই ছেলেমেয়েদের সাঁতার শেখাচ্ছি।
ব্যাংক কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ছেলেমেয়েদের সাঁতার শেখানো অভিভাবক হিসেবে আমার দায়িত্ব। আমি সপ্তাহে শুক্রবার ও শনিবার সন্তানকে নিয়ে সাঁতার শেখাতে আসি। এভাবে দুই মাস হলো এখানে আসি। আমার সন্তানরা এখন মোটামুটি সাঁতার কাটতে পারে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাঁতার প্রশিক্ষক মো. আব্দুস সামাদ কাজল বলেন, এই সুইমিং পুলের যাত্রা শুরু হয় আমার হাত ধরে। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত শুধু টিএডিএর বিনিময়ে কাজ করে আসছি। বাবা মৃত্যুর সময় বলেছিলেন, আমি যেন এই সুইমিং পুল না ছাড়ি। তাই এখনো এখানে সাঁতারে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। বাবার রেখে যাওয়া বাড়ি ভাড়ার টাকায় টেনেটুনে সংসার চলে। এই চাকরি স্থায়ী হবে আশায় ১৩ বছর ধরে অস্থায়ীভাবে কাজ করে আসছি।
তিনি আরো বলেন, সাঁতারু টিম তৈরি করতে হলে অবশ্যই জেলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগ নিতে হবে। তারপর আমাকে বলতে হবে। তখন আমি বেশ কয়েকজনকে সুইমিং উপযোগী করে তৈরি করতে পারব। যারা জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল আলম বলেন, আনুমানিক পাঁচ মাস হয়েছে আমি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। আগে সুইমিং পুলের অবস্থা খারাপ ছিল। এখানে নিয়মিত একজন কোচ দিয়ে শিশু-কিশোরীদের সাঁতার শেখানো হচ্ছে। তবে আমাদের পরিকল্পনা আছে, তাদের নিয়ে একটি দল গঠন করে জাতীয় পর্যায়ে পাঠানোর।
এ বিষয় জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, আমাদের একটি সাঁতারু টিম গঠন করা হবে। যারা জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করতে পারে। এছাড়া যারা নিয়মিত প্রশিক্ষণ নেন তারা ভালো সাঁতারু হতে পারেন। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।