কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২২, ০৮:০৩ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
গুনে গুনে প্রায়
আড়াই কোটি টাকা পাওয়া গেছে এক ব্যক্তির বাড়িতে। যার ঘরে এই বিপুল পরিমাণ টাকা মিলেছে,
এলাকায় তিনি ফকির হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নাম আমির হোসেন। তবে লোকজন তাকে চিনত বিশা পাগলা
নামে। বিশা পাগলা কবিরাজি করতেন, মাজারে মাজারে ঘুরতেন, ছিলেন বিভিন্ন পিরের মুরিদ।
ব্যক্তিজীবনে ছিলেন অবিবাহিত। তার কথিত এক মেয়ে আছে।
ঘটনাটি কুমিল্লার
তিতাস উপজেলার গাজীপুর গ্রামের।
জানা যায়, গাজীপুর গ্রামে বিশা পাগলার একটি টিনশেড ভবন আছে। গত ৮ জুলাই নিজ বাড়ির একটি ঘরে তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। পরে তার শোবার ঘরে পাওয়া যায় তিনটি বস্তা। মঙ্গলবার এসব বস্তা খোলা হলে বেরিয়ে আসে টাকা, স্বর্ণালংকার ও বিদেশি মুদ্রা।
আমির হোসেন
কুমিল্লা তিতাস
থানার ওসি সুধীন চন্দ্র দাস জানান, ঈদের দুদিন আগে শুক্রবার নিজ বাড়িতে তিনি অসুস্থ
হয়ে পড়েন। সেদিন সন্ধ্যায় বড় ভাই আওলাদ হোসেনকে তিনি বলেছিলেন, তার শরীরটা কেমন করছে।
এরপর তিনি তাকে পানি খাওয়ান। ঘণ্টাখানেক পরে বড় ভাই এসে দেখেন বিশা মারা গেছেন। পরদিন
মুন্সিবাড়ি পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তিনি তার শোবার ঘরে কাউকে ঢুকতে
দিতেন না। তার মৃত্যুর সময়ও ঘরটি তালাবদ্ধ ছিল। বিষয়টি নিয়ে তার প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের
মধ্যে কৌতূহল ছিল। সেই কৌতূহল থেকেই মঙ্গলবার তালা ভেঙে তার শোবার ঘরে ঢোকেন প্রতিবেশীরা।
এসময় তিনটি বস্তা দেখে তাদের সন্দেহ হয়। পুলিশ এসে বস্তাগুলো খুলে টাকা, বিদেশি মুদ্রা
ও স্বর্ণালংকার পায়। তিনি জানান, ৯ ঘণ্টা গণনা
শেষে পাওয়া যায় ২ কোটি ৪৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।
তিনি আরো বলেন,
ওয়ারিশদের নামে জয়েন্ট (যৌথ) অ্যাকাউন্ট খুলে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। এছাড়া
১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা দিয়ে মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
কী করতেন বিশা
পাগলা এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছি তিনি কবিরাজি করতেন,
মাজারে মাজারে ঘুরতেন। বিভিন্ন পিরের মুরিদ ছিলেন। কখনো কখনো ভিক্ষাও করতেন। তার কোনো
স্বজন নেই। একজন কথিত মেয়ে আছে।
বিশা পাগলার
কথিত মেয়ে তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘বাবা বিভিন্ন মাজারে ঘুরত। বিভিন্ন মানুষজন তার কাছে
আসত। টাকা পয়সা দিয়ে যেত। বাবা টাকাগুলো ঘরে রাখতেন। তবে এই টাকা দিয়ে কী করতে হবে
তা বাবা কিছুই বলে যাননি।’
স্থানীয়রা জানান,
বিশা পাগলার বাবা-মা মারা গেছেন অনেক আগে। মারা গেছেন তার এক বড় বোনও। তিন ভাই দুই
বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন মেজ। মঙ্গলবার রাত একটার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে তার টাকা
গোনা শুরু হয়ে বুধবার সকাল ১০টার দিকে শেষ হয়।’
এসময় স্থানীয়
জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ শত শত নারী-পুরুষ ওই বাড়ির আশপাশে জড়ো হন।
জাতীয় পরিচয়পত্র
অনুসারে আমির হোসেন ওরফে বিশা পাগলার জন্ম ১৯৬৭ সালের ১০ জানুয়ারি। বার্ধক্যজনিত কারণে
তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।