ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২২, ০৮:৪০ পিএম
প্রথা ভেঙে আলোচনার জন্ম দেয়া সদ্য বিবাহিত দম্পতি। ছবি: ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আমাদের সমাজে বিয়ের যে প্রচলিত প্রথা আছে সেটা ভেঙে আলোচনার জন্ম দিয়েছে সদ্য বিবাহিত এক দম্পতি। সমাজের রীতিনীতি ভেঙে আজ বুধবার (১৩ জুলাই) বিকাল ৪টায় ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মনোহরপুর গ্রামে এই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী বর তার আত্মীয়-স্বজনসহ সহযাত্রীদের নিয়ে কনের বাড়ি যান বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে। কনের বাড়ি থেকে কনেকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। কিন্তু ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা পরিষদের আবাসিক এলাকার ইউএনওর গাড়িচালক আব্দুল কাদেরের মেয়ে ইতি সেলিনার ক্ষেত্রে কাজটি উল্টো হয়েছে। তিনি তার সহযাত্রীদের নিয়ে একই উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের সামসুদ্দিন লস্করের ছেলে দীপ্ত টিভির সাংবাদিক এম এ মালেক শান্তর বাড়িতে হাজির হন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রথাগতভাবে বিয়ের অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশমুখে যেভাবে বরকে বরণ করা হয়, তেমনি এই বিয়েতেও কনেকে ফুলের মালা পরিয়ে, মিষ্টি খাইয়ে বরণ করে নেন বরপক্ষের আত্মীয় স্বজন। এরপর বর কনে আসনে বসে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। এসময় কনে পক্ষের অতিথিদের আপ্যায়ন করানো হয়। বিবাহের পর কনে থেকে যান ছেলের বাড়িতে।
ব্যতিক্রমধর্মী এই বিয়ের অনুষ্ঠানকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে উৎসাহের কমতি ছিল না । বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে বরের বাড়িতে যেমন উৎসাহী মানুষের ভিড় ছিল তেমনি কনের বাসাতেও অনেক মানুষ জড়ো হন। এমন বিয়ের প্রথার প্রস্তাবটি আসে মূলত বর শান্তর পক্ষ থেকে। তারা চেয়েছেন এই বিয়ের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নারী পুরুষের বৈষম্য দূর করার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে।
এ ব্যাপারে কনে সেলিনা বলেন, ছেলেরা যদি পারে মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসতে তাহলে মেয়েরা কেন পারবে না। নতুন সিস্টেমে বিয়ে করতে পেরে আমি অনেক খুশি। প্রথমে ভেবেছিলাম এভাবে বিয়ে করবো, ঠিক হবে কিনা। কিন্তু পরে আমি রাজি হই। প্রথা ভেঙে বিয়ে এর আগে আর কেউ করেনি। বিয়েতে এজন্য অনেক আনন্দ হয়েছে। শুরুতে দুই পরিবারের আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশী আপত্তি জানালেও পরে তারা রাজি হন।
বর এম এ মালেক শান্ত জানান, পুরুষ শাসিত সমাজে নারী পুরুষের সমান অধিকারের বহিঃপ্রকাশে এই প্রথা ভেঙে বিয়ে করার বিষয়টিকে প্রতীকী। এখন থেকে তাদের দেখাদেখি অনেকে এমনভাবে বিয়ে করতে উৎসাহ পাবে। সমাজও তাদের প্রথা পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে।