নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২২, ০২:০২ এএম | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২২, ০২:০৪ এএম
জিনস। প্রতীকী ছবি
যুক্তরাষ্ট্রে ব্লু ডেনিম পোশাক শিল্প বিশেষত জিন্সের প্রধান রপ্তানিকারক হিসেবে আধিপত্য ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের পোশাক আমদানির তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ওটেক্সার তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রে ৩৩৬.৬ মিলিয়ন ডলারের জিনস পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। এতে করে বাৎসরিক ৫৪.১৬ ভাগ ব্যবসা বেড়েছে ঢাকার।
গত বছর একই সময়ে বাংলাদেশ ২১৮.৩৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের জিনস রপ্তানি করেছিল।
ইউরোপে যুদ্ধ ও বিশ্ব জুড়ে মুদ্রাস্ফীতির মধ্যেও বাংলাদেশের সরবরাহ এখনও আগের মতোই চলছে।
সোর্সিং জার্নালের প্রতিবেদন অনুসারে, ক্রেতাদের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। ফলে, জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত ১.৬১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের জিনস রপ্তানি করা গেছে।
২০২১ সালের মতো তাই এবছরেও টানা দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ জিনস রপ্তানিকারক হয়েছে বাংলাদেশ।
এই শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্কিন বাজারে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রধান কারণ হল বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য বিশ্ব জুড়ে সমাদৃত।
এছাড়া মার্কিন বাজারে এশিয়ার অন্য দেশগুলোর চেয়ে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ উল্লেখযোগ্য মূল্য সুবিধা দিতে পারে।
ফলে প্রস্তুতকারকদের প্রত্যাশা ২০২২ সালের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ টানা তৃতীয় বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ রপ্তানিকারক হবে।
অন্য দেশের কি অবস্থা
ওটেক্সার তথ্য মতে, পাকিস্তান, মেক্সিকো, বাংলাদেশ, চীন, ভিয়েতনাম এবং মিশরসহ অনেক দেশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিজেদের পণ্য বৃদ্ধি করছে।
বাংলাদেশ ছাড়াও মেক্সিকো সেখানে বাজার ধরার চেষ্টা করছে। একারণে তারা এবছর ২৬.১৭ ভাগ বেশি জিনস পাঠিয়ে ২৯৩.৬৬ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। তারা পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও চীনের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
পাকিস্তানও জিনস উত্পাদনে প্রভাবশালী হয়ে উঠছে। তারা চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে মার্কিন বাজারে ৬৭.২৯ ভাগ বেশি জিনস পাঠিয়েছে। এতে করে তারা ১৯৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে।
ভিয়েতনাম ৪০.২৭ ভাগ রপ্তানি বাড়িয়ে আয় করেছে ১৭০.৫৩ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া ২৪.৮২ ভাগ রপ্তানি বাড়িয়ে চীন আয় করেছে ১৪৬.৩৮ মিলিয়ন ডলার।
এর আগে ২০১৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে জিনস রপ্তানিতে শীর্ষ অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।
জিনস এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর প্রতিষ্ঠাতা মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ জিনস এক্সপো দেশকে বিশ্বের এক নম্বর জিনস রপ্তানিকারক দেশে পরিণত করতে অবদান রাখছে।
তিনি আরও বলেন, এ বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রে এক নম্বর ডেনিম রপ্তানিকারক দেশ থাকবে।
তার মতে, ডেনিম এক্সপো স্থানীয় ডেনিম শিল্পের স্থায়িত্ব, স্বচ্ছতা, উদ্ভাবন, সার্কুলারিটি এবং দায়িত্বের বিকাশে অবদান রাখছে ও সফলভাবে প্রচার করছে।
বিজিএমইএর পরিচালক ও বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের (বিএই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জানান, তারা আশা করছেন বছরের শেষ নাগাদ শীর্ষে থাকবে।
আমাদের ডেনিম শিল্প অবকাঠামো, প্রযুক্তি আপগ্রেডেশন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন ও বিনিয়োগ দেখেছে, তিনি যোগ করেন।
তাছাড়া মহামারী পরবর্তী আন্তর্জাতিক বাজারের বিভিন্ন বিষয় এবং অন্যান্য দেশের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের টানাপোড়েন বিবেচনায় বলা যায়, বছরের শেষেও বাংলাদেশ শীর্ষে থাকবে।
“আমরা শীঘ্রই মার্কিন বাজারে ডেনিম থেকে ১ বিলিয়ন রপ্তানি আয় দেখতে পাব,” তিনি যোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের সব রপ্তানি খাত বৈশ্বিক পরিস্থিতি, মন্দা ও ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির ন্যূনতম প্রভাবের সম্মুখীন হতে পারে।
আমাদের প্রবৃদ্ধি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে তা কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে ও ১ বিলিয়ন ডেনিম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা বিলম্বিত হতে পারে। তবে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।
তবে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলি ডেনিমের বাজারে খুব বেশি পিছিয়ে থাকবে না, তবে আমরা আশা করি তাদের থেকে এগিয়ে থাকব," তিনি যোগ করেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, অভ্যন্তরীণ ডিজাইন স্টুডিও, কয়েকটি অত্যাধুনিক ফ্যাব্রিক মিল ও স্থানীয় কাপড়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রায় ৫০-৬০% জিনস উৎপাদ দেশেই করতে পারে।
তারা বলছেন, “বিশ্বে অবস্থান শক্তিশালী করতে বকাঠামো, বন্দর ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জটিলতা নিরসন করতে হবে।”
সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। ফলে বহির্বিশ্বে ব্র্যান্ডগুলির বিক্রয়কেন্দ্রে কাপড়ের বিক্রি লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে।
তারা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জিনস রপ্তানির পথ কতটা সুগম হবে বা দুর্গম হবে সেটা বছরের শেষ দিকে বোঝা যাবে।