নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২২, ১০:৩৩ এএম | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২২, ১০:৩৪ এএম
পবিত্র কাবা শরীফের সামনে অবস্থান করছেন হজপালনকারীরা। ছবি: এএফপি
সৌদি সরকার এবার হাজীদের বিশ্রাম গ্রহণ ও খাবার পরিবেশনে বাড়তি কিছু সুবিধা দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে ছিল মিনায় তাঁবুগুলোতে প্রত্যেক হাজির জন্য আলাদা বালিশ, কভারসহ ছয় ইঞ্চি উঁচু ফোমের বিছানার ব্যবস্থা এবং ফল কাটার জন্য প্লাস্টিকের চাকু এবং দুই ধরনের চামচসহ প্যাকেটজাত খাবার পরিবেশন।
এছাড়া আরাফাতের ময়দানে এবার স্টিলের কাঠামো দিয়ে বড় ধরনের তাঁবুর ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। পাশাপাশি রাতে মুজদালিফার উন্মুক্ত প্রান্তরে অবস্থানের সময় যাতে হাজীদের কষ্ট পেতে না হয় সেজন্য এখানকার সড়কের পাশে অনেক স্থানে মোটা কার্পেট বিছানো হয়েছিল। এতে মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফা প্রান্তরে হাজীদের অবস্থান বেশ আরামদায়ক ছিল।
জানা গেছে, আগে মিনার তাঁবুতে হাজীদের জন্য বিশ্রামের জন্য বিছানাগুলো ছিল সাধারণ মানের। হাজীদের জন্য বরাদ্দ করা খাবারগুলো বালতির মধ্যে তুলে এনে তাঁবুতে পরিবেশন করতে হতো। আর তখন আরাফাতের ময়দানের তাঁবুগুলোও ছিল খুবই সাধারণ মানের এবং মুজদালিফা প্রান্তরে কোনো কার্পেট ছিল না। এবার মিনা ও আরাফাতের ময়দানে হাজীদের আরামের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
করোনার সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় কর্তৃপক্ষের বিধিনিষেধের কারণে ২০২০ এবং ২০২১ সালে সৌদি আরবের বাইরে অন্য কোনো দেশের মুসলমানরা হজ পালনের সুযোগ পাননি। তবে করোনার সংক্রমণ কমে আসায় সৌদি সরকার চলতি বছর বাইরের দেশের মুসলিমদের হজ পালনের সুযোগ দেয়। অবশ্য সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিটি দেশের জন্য নির্ধারিত কোঠার পরিমাণ ৪৫ থেকে ৫৫ শতাংশে কমিয়ে আনা হয়। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে ৬০ হাজার নারী-পুরুষকে হজ পালনের অনুমতি দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই মিনায় হাজীদের অবস্থানের মধ্য দিয়ে এবারের হজ শুরু হয়। পরদিন শুক্রবার ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের পর ওই দিন রাতেই তারা মুজদালিফায় যান এবং সেখানে অবস্থান শেষে পরদিন ফজরের পর আবার মিনার তাঁবুতে ফিরে যান।
এরপর ওই দিন জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ শেষে পশু কোরবানির পর মাথা মুণ্ডন করে মক্কায় গিয়ে বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করেন। পরে গত ১১ ও ১২ জুলাই আবারও কঙ্কর নিক্ষেপের জন্য তাঁরা ১০ জিলহজ রাতেই মিনায় ফিরে যান।
বাংলাদেশ থেকে আসা হাজীরা জানান, মক্কা, মিনা, আরাফাতের ময়দান ও মুজদালিফায় যাতায়াতের সড়কগুলোতে চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যান চলাচল বন্ধ রাখার কারণে এবার তাদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
মক্কায় অবস্থিত বাংলাদেশ হজ অফিসের কাউন্সিলর (হজ) মো. জহিরুল ইসলাম জানান, এবার মিনা, আরাফাতের ময়দান এবং মুজদালিফায় হাজীদের সুবিধার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। এ কারণে হাজিরা বিশেষত বাংলাদেশ থেকে যারা হজ করতে এসেছিলেন তাদের ওই সব স্থানে অবস্থান, রাত্রিযাপন এবং খাবার গ্রহণও বেশ আরামদায়ক ছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, হজ করতে এসে এবার মোট ১৫ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, আজ বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) থেকেই হজযাত্রীদের ফিরতি ফ্লাইট শুরু। আজ বৃহস্পতিবার থেকে সৌদি আরবের জেদ্দা বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশের হাজিদের ফিরতি ফ্লাইট আসা শুরু হবে। এদিন রাত ১০টায় হাজিদের প্রথম ফ্লাইটটি ঢাকায় পৌঁছবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
বিমানের মহাব্যবস্থাপক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, এরইমধ্যে হাজীদের হজ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বিমানের প্রথম ফিরতি ফ্লাইটটি বাংলাদেশি হাজিদের নিয়ে আজ জেদ্দা বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে। এই ফ্লাইটের আসন সংখ্যা ৪১৯। আগত হাজির সংখ্যা কমবেশি হতে পারে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ হজ অফিস (ঢাকা) জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সেরও (সাউদিয়া) ফ্লাইট রয়েছে। বিমান, সাউদিয়া এবং ফ্লাইনাসের ফ্লাইটে সব হজযাত্রী ফিরতে ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময় লাগবে।