নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২২, ০৯:১২ এএম
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের মাঠ। ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে দেশের সব সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় শেরেবাংলা নগরে জাতীয় সংসদের উত্তর পাশে সচিবালয় স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। তবে সেখানে আপাতত এই প্রশাসনিক অবকাঠামো নির্মিত হবেনা। ওই স্থানে এখন পার্ক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সম্প্রতি একটি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় শেরেবাংলা নগরে আপাতত সচিবালয় হচ্ছে না বলে জানায় গণপূর্ত অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সচিবালয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে পার্ক করার জন্য নকশা অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন সেখানে পার্ক করতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির কাজ চলছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, শেরেবাংলা নগরে সচিবালয় স্থাপন প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য ২০১১ সালে পরিকল্পনা কমিশনে ডিপিপি পাঠায় গণপূর্ত অধিদপ্তর। ওই সময় প্রস্তাবিত ব্যয় ছিল ১ হাজার ১০২ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। প্রকল্পের কাজ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত হওয়ার লক্ষ্য ছিল।
এরপর ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ২ হাজার ২০৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তোলা হলেও লুই আই কানের মূল নকশা না থাকায় প্রকল্পটি স্থগিত রাখা হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর মার্কিন স্থপতি লুইয়ের করা জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশা দেশে আনা হলেও আর প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। তবে শেরেবাংলা নগরে সচিবালয় করার জন্য প্রতিবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হতো।
এদিকে সচিবালয়ের জন্য নির্ধারিত এ জায়গায় গত দুই যুগ ধরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হয়েছে। এ বছর বাণিজ্য মেলা শেরেবাংলা নগর থেকে থেকে সরিয়ে পূর্বাচলে মেলার জন্য নির্ধারিত স্থানে আয়োজন করা হয়।
এখন গণপূর্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শেরেবাংলা নগরে সচিবালয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে পার্ক করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রস্তাবিত ‘কার পার্কিং সুবিধাসহ সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের বহুতল অফিস ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পটি আবদুল গণি রোডে নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সেই পরিপ্রেক্ষিতে পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধান উল্লেখ করেন, ঢাকার শেরেবাংলা নগরে ২৬ একর ভূমি বাংলাদেশ সচিবালয় স্থানান্তরের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। আলোচ্য প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত বহুতল কার পার্কিং ভবনটি আবদুল গণি রোডে নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সচিবালয় স্থানান্তরিত হলে আবদুল গণি রোডে কার পার্কিংয়ের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পাবে এবং শেরেবাংলা নগরে নতুন কার পার্কিং ভবনের প্রয়োজন হবে। এ সময় তিনি সচিবালয় স্থানান্তর না করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না জানতে চান।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শেরেবাংলা নগরে সচিবালয়ের নির্ধারিত স্থানে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে পার্ক নির্মাণের লক্ষ্যে ডিপিপি প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমান সচিবালয়ের ভেতরে আরো বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সচিবালয় বর্তমানে যেখানে আছে সেখানেই থাকবে বলে প্রতীয়মান হয়।
তবে সভায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান জানান, এ ধরনের সিদ্ধান্ত সাধারণত কেবিনেট ডিভিশন নিয়ে থাকে। সচিবালয়ের স্থানান্তর না করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না তা তার জানা নেই।
তিনি সভায় উল্লেখ করেন, শেরেবাংলা নগরে সচিবালয়ের জন্য নির্ধারিত স্থান ছাড়াও পরিকল্পনা কমিশনের ভূমি রয়েছে। বর্তমান সচিবালয়ে স্থান স্বল্পতার কারণে সব মন্ত্রণালয়ের জন্য মানসম্মত অফিস স্থাপন করা কঠিন। এ ছাড়া স্থানটি দিন দিন ঢাকা শহরের একপাশে হয়ে যাচ্ছে। ফলে সেখানে যাতায়াত সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়ছে।
এ অবস্থায় ওই ৩০ একর ভূমিতে সচিবালয় স্থানান্তর করার বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বিবেচনা করতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমার কাছে এ মুহূর্তে কোনো তথ্য নেই। আমার কাছে পার্ক করার প্রস্তাবনা এলে জানতে পারব। গণপূর্ত যদি বলে থাকে তা হলে পার্ক হতেও পারে। যদি কখনও সচিবালয় স্থানান্তরের প্রয়োজন হয় করবে। সেগুলো সরকারের সিদ্ধান্ত, আমার সিদ্ধান্ত নয়।