সার কেলেঙ্কারি: বিএডিসির কর্মকর্তাসহ ৫ জনের কারাদণ্ড

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২২, ০৭:৪০ পিএম | আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২২, ০৭:৪৬ পিএম

সার কেলেঙ্কারির ঘটনায় দণ্ডপ্রাপ্তরা। ছবি: ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

সার কেলেঙ্কারির ঘটনায় দণ্ডপ্রাপ্তরা। ছবি: ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে বিএডিসির সার কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বিএডিসির কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন ময়মনসিংহের বিশেষ জজ আদালত। এর মধ্যে দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। 

আজ রবিবার (২৪ জুলাই) বিকেলে ময়মনসিংহের বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. শাহাদত হোসেন আসামীদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- কিশোরগঞ্জ বিএডিসির (সার) সাবেক যুগ্ম পরিচালক আহাদ আলী ও ভৈরবের বিএডিসির (সার) ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম।

এছাড়াও সাত বছরের দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- নরসিংদীর হাজিপুর নয়াপাড়ার মৃত ফজলু মিয়ার ছেলে মো. হারিছুল হক, কিশোরগঞ্জ অষ্টগ্রাম বাঙ্গালপাড়ার মৃত চুনীলাল রায়ের ছেলে লিটন রায় ও নরসিংদীর বেলাবোর মো. মজিবুর রহমান খানের ছেলে সারোয়ারুল আলম সবুজ।

ময়মনসিংহ আদালতের দুর্নীতি কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী শফিকুল হাসান জানান, দণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামির মধ্যে আহাদ আলীকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। আনাদায়ে আরো তিন বছরের কারাদণ্ড।

একই সাথে দণ্ডবিধির ৫(২) ধারায় আসামি আহাদ আলীকে আরো ৭ বছর কারাদণ্ড এবং ২২ কোটি ২৩ লাখ ২ হাজার ১৬৪ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।

আসামি রেজাউল করিমকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। আনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড।

একই সাথে দণ্ডবিধির ৫(২) ধারায় আসামি রেজাউল করিমকে আরো ৭ বছর কারাদণ্ড এবং ২২ কোটি ২৩ লাখ ২ হাজার ১৬৪ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।

দণ্ডিত অর্থ আগামী ৬০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসেবে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান।

এছাড়াও আসামি হারিসুল হক, লিটন রায় ও সারোয়ার আলম সবুজকে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। এই অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়।  

একই সাথে আসামি হারিসুল হক, লিটন রায় ও সারোয়ার আলম সবুজকে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় ৩ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় বলে জানান আদালত সংশ্লিষ্টরা।

আদালত সূত্র জানায়, এর আগে ২০১৪ সালের ১৬ নভেম্বর কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মজুদ সার না থাকায় ও সারের ঘাটতি হওয়ায় কিশোরগঞ্জ বিএডিসির (সার) যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ শেখ বাদী হয়ে সাতজনকে আসামি করে এই মামলাটি দায়ের করেন।

এরপর ২০১৫ সালের ১০ জুলাই দুদক মামলাটি তদন্ত করে আসামিদের অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এরপর মামলার দীর্ঘ শুনানিতে বিজ্ঞ আদালত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় ঘোষণা করেন।

তবে মামলা চলা অবস্থায় দুই আসামি খোরশেদ আলম ও রতন মিয়া মৃত্যুবরণ করায় বিজ্ঞ আদালত তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়।

এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্টপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সঞ্জীব সরকার ও কাজী শফিকুল ইসলাম। তারা বলেন, এটি যুগান্তকারী একটি রায়। এতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে আইনভীতি সৃষ্টি হবে বলে মনে করছি।  

তবে এই রায়ে সংক্ষুব্ধ আসামিদের স্বজন ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

মামলায় আসামি আহাদ আলীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ফজলুল হক বলেন, আমরা এই রায়ে ন্যায় বিচার বঞ্চিত হয়েছি। ন্যায় বিচারের জন্য আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।  

একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন আসামি রেজাউল করিমের শ্বশুর মো. ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট না। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh