চট্টগ্রামে মৃত্যুফাঁদ ৪৫০ রেলক্রসিং

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২২, ১০:৫০ পিএম

রেলক্রসিংগুলো এভাবে অরক্ষিত থাকে। ছবি- সংগৃহীত

রেলক্রসিংগুলো এভাবে অরক্ষিত থাকে। ছবি- সংগৃহীত

বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী, নাজিরহাট ও ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ততম হচ্ছে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুট। যেগুলোতে ৪৫০টি রেলক্রসিং ভয়ঙ্কর মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠেছে। 

অভিযোগ উঠেছে, কিছু কিছু রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান থাকলেও তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করে না। ফলে রেলক্রসিংগুলোতে মুহূর্তেই ঘটে যাচ্ছে অনাকাক্সিক্ষত ও ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এতে ঘটছে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি। 

সর্বশেষ গত শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বারতাকিয়া রেলস্টেশনের কাছাকাছি খৈয়াছড়া ঝরনা এলাকায় রেলক্রসিংয়ে ঘটে এমন একটি দুর্ঘটনা। এতে ১১ জনের প্রাণহানি ঘটে ঘটনাস্থলেই। আহত হয় আরও অন্তত ৬ জন। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গেটম্যানের অবহেলায় রেলক্রসিংটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত ছিল। ফলে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগে মামলাও হয়েছে। পাঠানো হয়েছে কারাগারে। সাময়িকভাবে বরখাস্তও করা হয়েছে তাকে। 

এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। একইভাবে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামের খুলশী থানার ঝাউতলা রেলক্রসিংয়ে ডেমু ট্রেনের ধাক্কায় এক ট্রাফিক পুলিশসহ বাস ও সিএনজি অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয় আরও আটজন। 

এ সময় অভিযোগ ওঠে, রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান আলমগীর ভুইয়া রেল আসার প্রায় ২০ মিনিট আগে একপাশের ব্যারিয়ার নামিয়ে দিয়ে চাপান করতে চলে যান। 

অন্যপাশের ব্যারিয়ার খোলা পেয়ে রেললাইনের কাছাকাছি থাকা সিএনজি অটোরিকশা ও মাহিন্দ্রা টেম্পু বাসের ধাক্কায় রেললাইনের ওপর উঠে যায়। এ সময় নাজিরহাট থেকে আসা ডেমু ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান দায়িত্বরত সিএমপির উত্তর বিভাগের কনস্টেবল মনির হোসেন (৪০), ঢালি কনস্ট্রাকশনের প্রকৌশলী সৈয়দ বাহাউদ্দিন আহমেদ (৩০) ও সাতরাজ শাহীন (১৯)। আহত হয় আরও ৮ জন। 

এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন গেটম্যানের অবহেলার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অবহেলার কারণে পূর্বাঞ্চলের রেলক্রসিংগুলোতে দুর্ঘটনা বাড়ছে। তবে মিরসরাই দুর্ঘটনায় গেটম্যানের পক্ষে সাফাই গান তিনি। 

তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর আমি গেটম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, খৈয়াছড়া ঝরনা এলাকায় রেললাইনের ওপর একটি সড়কপথ রয়েছে। ট্রেন আসার আগে ওই পথে ক্রসিংয়ে বাঁশ নামানো ছিল। কিন্তু মাইক্রোবাস চালক বাঁশ তুলে মাইক্রো নিয়ে রেললাইনের ওপর উঠে যান। ওই সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মহানগর প্রভাতী ট্রেন ধাক্কা দিয়ে মাইক্রোবাসটিকে আধা কিলোমিটার দূরে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায়। এতে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে মাইক্রোর ১১ জন যাত্রী ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। আহত হয় আরও ৬ জন।

অথচ স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ক্রসিংয়ে কোনো বাঁশ নামানো ছিল না। গেটম্যানও দুর্ঘটনার সময় সেখানে ছিল না। তিনি নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন বলে জানান। 

রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলওয়ে ট্রাফিক বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই গেটে ২৪ ঘণ্টাই দায়িত্ব পালনের কথা গেটম্যানের। কিন্তু ব্যস্ততম এ গেটে প্রায় সময়ই ব্যারিয়ার গেট না ফেলে ট্রেন আসা-যাওয়া করে। খুলশী থানার ঝাউতলা রেলক্রসিংয়েও তিনজনের দায়িত্ব পালনের কথা। এই ক্রসিংয়েও বাঁশ না ফেলে হাতের ঈশারায় ট্রেন আসা-যাওয়ার সঙ্কেত দেওয়া হয়। শুধু মিরসরাই বা ঝাউতলা নয়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আওতায় চট্টগ্রামে অনুমোদিত ১৫০টি রেলক্রসিং রয়েছে। অবৈধ রেলগেট রয়েছে ৩০০টি। যেখানে ন্যূনতম সতর্কতা নেই। এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা জোবাইদা আক্তার বলেন, রেলক্রসিংগুলো রক্ষায় প্রয়োজনীয় জনবল পূর্বাঞ্চলে নেই। এখানে শুধু অনুমোদিত ১৫০টি গেটের জন্য স্থায়ী গেটম্যান আছে ৪৫ জন। অস্থায়ী গেটম্যান আছে ৪৫ জন। ঘাটতি রয়েছে ১৫২ জন। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh