এম এ মাসুদ
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২২, ০৭:১৫ পিএম | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২২, ০৭:১৬ পিএম
প্রতীকী ছবি
পাশ্চাত্য পন্ডিত রাস্কিনের
মতে পৃথিবীতে মানুষের তিনটি কর্তব্য রয়েছে, 'These are duty towards Allah, duty
towords parents and duty towards mankind.' যাদের কৃপায় জন্ম লাভ করে আমরা এ পৃথিবীর
রূপ, রস ও গন্ধ উপভোগ করছি তারা হলেন আমাদের বাবা-মা। জন্মের পর সেই অসহায় অবস্থায়
ক্ষুধা, পিপাসা দূর করতে স্তন্যদান এবং শীতে সন্তান যাতে কষ্ট না পায় সেজন্য স্নেহময়ী
মায়ের কষ্ট ও ত্যাগ অতুলনীয়। শৈশবের শিক্ষার দায়িত্বও পালন করেন তিনি। সেজন্যই তো মা
শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। শৈশব, কৈশোর ও যৌবন পর্যন্ত সকল বিপদ হতে অপরিসীম যত্ন, অক্লান্ত পরিশ্রম
এবং কষ্ট ও সহিষ্ণুতার সাথে বাবা, মা রক্ষা করেন সন্তানদের।
সন্তান যাতে কষ্ট না পায় বা
কষ্ট না হয় সেজন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে দ্বিধা করেন না বাবা, মা। পৃথিবীর সবাই
যখন দূরে ঠেলে দেয় ঠিক তখনো মা তার প্রিয় সন্তানদের পরম মমতায় বুকে টেনে নেন। মানুষের
ভালোবাসার মধ্যে কোনো না কোনো স্বার্থ নিহীত থাকে, কিন্তু মায়ের ভালোবাসা নিঃস্বার্থ।
মায়ের অবদানের কথা লিখতে গেলে বাবার কথাও লিখতে হয়, নইলে তাদের প্রতি অসম্মান করা হবে।
সন্তান যাতে লেখাপড়া করে সুশিক্ষিত হতে পারে সেজন্য বাবার চেষ্টার কোনো কমতি থাকে না।
নিজে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে থাকেন সন্তানের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য। জগতে বাবা, মার চেয়ে
আপনজন আর কেউ নেই। সন্তানের সাথে বাবা, মায়ের সম্পর্ক অদৃশ্য ও অচ্ছেদ্য। এ সম্পর্ক
কেবল হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। সন্তানের সাফল্যে যেমন তারা আনন্দিত হন, তেমনি ব্যর্থতায়
হন ব্যথিত। তাই তো বাবা-মা আমাদের জীবনের পথ প্রদর্শক এবং শ্রেষ্ঠ বন্ধু।
মৃত্যু চিরন্তন। তবে তা কখনো
বয়স অনুপাত বা দিনক্ষণ মানে না। কেউ বা স্ত্রী, সন্তান রেখে আবার কেউ বা স্বামী, সন্তান
রেখে চির বিদায় নেন নশ্বর এ পৃথিবী থেকে। হয়তো কেউ বা অনেক আগেই।
সে যাই হোক, জীবনসঙ্গী হারিয়ে
সন্তানদের নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেন অনেকেই। তবে সঙ্গী ছাড়া মানুষ নিজে কতটা যে
অসহায় তা অনুভব করা কঠিন কিছু নয়। জৈবিক দিক বাদ দিলেও নানাবিধ কারণেও প্রয়োজন জীবনসঙ্গী।
হোক না তিনি কোনো নর কিংবা নারী। বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে পুরুষরা তো বিপদে পড়েন আরো বেশি।
নিজেকে বড্ড অসহায় ভাবতে থাকেন তাঁরা, ভোগেন নিঃসঙ্গতায়।
মাস কয়েক আগের কথা। দীর্ঘদিন পর হঠাৎ করেই দেখা হয়েছিল এক অবসর প্রাপ্ত ব্যাংকারের। ভাবীর কথা জিজ্ঞেস করতেই আফসোস করলেন তিনি। বললেন অবসরে যাওয়ার পরেই হারিয়েছেন স্ত্রীকে। অসহায়ত্ব দূর করতে বিয়েও নাকি করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাধ সেধেছিল দু'ছেলে। ছেলেদের ভাষ্য ---। এ কথা বলতেই কেঁদেও ফেলে ছিলেন ওই ব্যাংকার। অনুভব করতে খুব একটা কষ্ট হয়নি তার দূরাবস্থার বিষয়টি।
কিন্তু সন্তানের জন্য যাদের
এই ত্যাগ সেই মা, বাবা সঙ্গিহীনভাবে একাকীত্বে ভুগবেন তা কী হয়! আর হয় না বলেই অনেক
সন্তান রয়েছেন যারা বাবার নিঃসঙ্গতা দূর করতে নিয়ে থাকেন ব্যবস্থা। দিয়েও দেন বিয়ে।
এমন ঘটনা সমাজে ঢেঁড় দেখা যায়। কিন্তু মায়ের নিঃসঙ্গতা দূর করতে সন্তানের পাত্র খোঁজার
ঘটনা সমাজে বিরল। ঠিক তেমনি ব্যতিক্রমী একটি খবর গতকাল 'সাম্প্রতিক দেশকাল' পত্রিকার
অনলাইনসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় চাউর হয়েছে। খবরে প্রকাশ, মাযের পাত্র চেয়ে
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা মোহাম্মদ
অপূর্ব।
তিনি ‘জি অ্যান্ড টেক’ নামের একটি অনলাইন পেজের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন। তার বড় ভাই
মোহাম্মদ ইমরান হোসেনও ব্যবসা করেন।
ইমরান, অপূর্বর বাবা দুই বছর
আগে মারা গেছেন। তাদের মা ডলি আক্তারের বয়স ৪২ বছর। তিনি পড়াশোনা করেছেন অষ্টম শ্রেণি
পর্যন্ত। শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে মায়ের জীবনসঙ্গী খুঁজে দেওয়ার জন্য 'বিসিসিবি
মেট্রিমনিয়াল: হেভেনলি ম্যাচ’
নামের ফেসবুক গ্রুপে মায়ের জন্য পাত্র চেয়ে বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করেন অপূর্ব।
অপূর্ব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন,
বাবার মৃত্যুর পর মা অনেকটা একা হয়ে পড়েছেন। দুই ছেলে মাকে যথেষ্ট সময় দিতে পারি না।
তাই মায়ের সম্মতি নিয়ে পাত্র খুঁজছেন দুই ভাই।
ডলি আক্তার বলেন, জীবনে চলতে
গেলে একজন সঙ্গী প্রয়োজন। এখন ছেলেরা আমার বিয়ের কথা ভাবছে। আমি সম্মতি দিয়েছি।
এনিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন
করেছেন অনেকেই, জানিয়েছেন সাধুবাদ।
বর্তমান সমাজে দেখা যায় অশিক্ষিত
লোকদের চেয়ে শিক্ষিতরা বেশি বাবা-মার সাথে দুর্ব্যবহার করছেন। শিক্ষিত ছেলেরা যদি শিক্ষিত
স্ত্রী পেয়ে যান তাহলে তা কাল হয়ে দাঁড়ায়। সঙ্গীহারা মা, বাবার তো অবস্থা আরো করুণ।
বৃদ্ধ বাবা, মার সেবায় এগিয়ে
এলে মনে হয় তাদের আধুনিকতা যেন নষ্ট হয়ে যাবে। বাবা, মার সেবাযত্ন তো দূরে থাক, একটু
খোঁজ খবর নেয়ারও যেন ফুরসত নেই তাদের। মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক জানান, 'ইসলামের দৃষ্টিতে
সঙ্গী হারা মা, বাবা যদি প্রয়োজন অনুভব করেন তবে সন্তানের দায়িত্ব হলো তাঁদের জীবনসঙ্গী
খুঁজে দেওয়া। যদি তা নাও পারেন তবে যেন কোনো বিঘ্নতা সৃষ্টি না করেন।'
যারা মা-বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার,
অবাধ্যতা ও কষ্ট দেয় তাদের উপর আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা:) এবং ফেরেশতারা অভিশাপ বর্ষণ
করেন। এরূপ কাজে আল্লাহ ভীষণ রাগান্বিত হন। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এরশাদ করেন,
'মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত।' বাবা, মার অবাধ্য সন্তান যত ইবাদত করুক না কেন
সে কখনো মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে না।
সে দিক থেকে, সম্মতি নিয়ে মায়ের
জন্য পাত্র খুঁজে ঠিক কাজটিই করেছেন সন্তান অপূর্ব। তার ভাষায়, 'সমাজে পরিবর্তন আসছে।
এই পরিবর্তন সবাইকে মানতে হবে।' মায়ের প্রতি সন্তানের এমন ভালোবাসা সত্যিই বিরল এবং
সমাজের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা।