প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২২, ১২:৩৮ এএম
ফাইল ছবি
২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে ধূমপানমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের ট্রেন ও ট্রেনস্টেশনকে ধূমপানমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বাস্তবের চিত্র ভিন্ন। দেশের অধিকাংশ রেলওয়ে স্টেশনে এখন ধূমপানমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধূমপান করা হয়ে থাকে রংপুর রেলস্টেশনে এবং কম খুলনায়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ও আর্ক ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। চলতি বছরের এপ্রিলে দেশের ১০টি রেলওয়ে স্টেশনে এই সমীক্ষা চালানো হয়।
খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা, ঢাকা বিমানবন্দর, ঈশ্বরদী, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর, চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুর রেলস্টেশনে এই সমীক্ষা চালানোর প্রধান উদ্দেশ্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন রেল ও রেলস্টেশনে কতটা মানা হচ্ছে এবং ধূমপানমুক্ত ঘোষণার পর এইসব স্থানের বর্তমান পরিস্থিতি কী তা জানা।
সমীক্ষায় দেখা যায়, ধূমপানমুক্ত ঘোষণার পর সবকটি রেলস্টেশনেই ধূমপান হয়। সবচেয়ে বেশি ধূমপান রংপুর রেলস্টশনে, এরপর ঢাকা কমলাপুল রেলস্টেশন, ঢাকা বিমানবন্দর, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, রাজশাহী, ঈশ্বর্দী ও খুলনা রেলস্টেশন।
আরো দেখা যায়, রেলওয়ে স্টেশনগুলোর সবচেয়ে বেশি ধূমপান হয় প্লাটফর্মে। মোট ধূমপানের ৬৫% প্লাটফর্মে, পার্কিং এলাকায় ২৬.৩% করা হয়। এছাড়া রেলস্টেশন এলাকার টি-স্টল বা টং দোকানে এবং টিকিট কাউন্টার এলাকাতেও ধূমপান করতে দেখা গেছে। তবে রেলস্টেশনগুলোর অফিসে কোনো ধূমপান করতে দেখা যায়নি।
রেলওয়ে পুলিশ বা নিরাপত্তারক্ষীদের কেউ ধূমপানকারীদের বাধা দেয়নি। বিশেষ বার্তা সংবলিত কোনো বিজ্ঞপ্তি বা চিহ্নও ব্যবহার করেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আলাদা করে মাইকে ধূমপান না করার জন্য ঘোষণাও দেওয়া হয় না। সমীক্ষক দল মাত্র দুইবার এই ঘোষণা শুনতে পেরেছেন। খুলনা ও রাজশাহী রেলস্টেশনে বেশকিছু জায়গায় “ধূমপান মুক্ত এলাকা” লেখা সংবলিত নির্দেশনা থাকলেও অন্যগুলোতে খুবই কম। ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে এমন কোনো সাইনবোর্ড দেওয়া হয়নি।
বিক্রির স্টল, বজ্র ও তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন
দেশের ১০টি রেলস্টেশনের মধ্যে ৯টির ভেতরেই সিগারেট বিক্রির স্টল বা পয়েন্ট রয়েছে। তবে চট্টগ্রামে কোনো স্টল পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বেশি সিগারেট বিক্রির পয়েন্ট পাওয়া গেছে ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে। এখানে ১৯টি পয়েন্টে সিগারেট বিক্রি হয়। এরপর ময়মনসিংহ ও রংপুর। রেলস্টেশনে সিগারেট বিক্রির ৩৮.২% হকার এবং অন্যান্য পণ্য বিক্রিকারী স্টলগুলোতে ৩৭% সিগারেট বিক্রি হয়। ১০টি প্লাটফর্মে ১৭টি চায়ের দোকান দেখা গেছে যারা সিগারেট বিক্রি করে।
সিগারেট বিক্রির এসব পয়েন্টে বা স্টলে সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে তৈরি তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়েছে। তবে বড় কোনো বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়নি।
রেলস্টেশনগুলোর প্লাটফর্ম, পার্কিং এলাকা, টিকিট কাউন্টার ও অফিস কক্ষের সামনে সিগারেটের বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
গুরত্বের সাথে দেখছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, “রেলস্টেশনকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করা হলেও, এর বাস্তবায়নে একটা গাছাড়া ভাব দেখা গেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবার বিষয়টি গুরত্বের সাথে নিয়েছে। তারা এটা নিয়ে নতুন করে একটি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও আর্ক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. রুমানা হক বলেন, “রেলস্টেশনগুলোকে ধূমপানমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। তার বর্তমান চিত্র দেখার জন্য আমরা এই কাজটি করেছি। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও চায় স্টেশনগুলো ধূমপানমুক্ত হোক, এখন তারা একটি ধারণা পেয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।”
২০১৭ সালের অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে বাংলাদেশ অন্যতম তামাকজাত পণ্য ব্যবহারকারী দেশ। দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৫.৩% মানুষ ধূমপান করে। ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৪৬% পুরুষ এবং ২৫% নারী। ধূমপান নিজে না করেও মোট জনসংখ্যার ৩৯% পরোক্ষভাবে ধূমপান করে। প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের কারণে মারা যায় এবং ৭০ লাখ মানুষ ৩০ ধরনের অসুস্থতায় ভোগে।
বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টোবাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) কনভেনশনে প্রথম স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। ২০০৫ সালে তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন করা হয়। ২০১৩ সালে এটি আরও সংশোধন করে একটি যুগোপযোগী আইনে রূপান্তরিত হয়।