পানির অভাবে পাট নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২২, ০১:৪২ পিএম

পানির অভাবে জাগ দেয়া যাচ্ছে না পাট। ছবি:  গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

পানির অভাবে জাগ দেয়া যাচ্ছে না পাট। ছবি: গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

ফলন ভাল হলেও বৃষ্টি কম হওয়ায় পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না গোপালগঞ্জের কৃষকরা। জাগের উপযুক্ত পরিবেশ না হলে, পাট থেকে ভাল মানের আঁশ মেলে না। ফলে পাটের ভালো দামও মেলে না। এমনি পরিস্থিতিতে পাট নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা।  

তারপরও যতটুকু পাট জাগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে, তার আঁশ বাজারে আসতে শুরু করেছে। সেই সাথে পাটকলগুলোতেও বেড়েছে পাটের চাহিদা।

জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে জানা গেছে, গোপালগঞ্জে মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের ফলন ভাল হয়েছে। জমি থেকে পাট কেটে বাড়ির উঠান, সড়কের দুই পাশে স্তুপ করে রেখেছেন কৃষকরা। কিন্তু পাট কাটার এ সময়ে ভরা বর্ষা মৌসুম থাকলেও বৃষ্টি না থাকায় খাল-বিল আর ডোবা-নালায় দেখা দিয়েছে পানি স্বল্পতা। ফলে কৃষকরা পাট পঁচাতে পারছেন না। একটি পুকুরে অধিক পাট পঁচানোর ফলে আঁশের রঙ নষ্ট হয়ে কালো হয়ে যাওয়ায় কাঙ্খিত দাম পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তারা।

বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, এ বছর বাজারে পাট মন প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩২শ’ টাকায়। কিন্তু পাটের রঙ কালো হয়ে গুণগত মান নষ্ট হলে দাম কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

গোপালগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছর জেলায় ২৬ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে তোষা ২৫ হাজার ৪১৯ হেক্টর, মেস্তা ৫৮৬ হেক্টর ও দেশি পাট ১০৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়।

পাটের জাতের মধ্যে রয়েছে সিভিএল-১, ডি-১৫৪, ও-৭২, ও-৯৮৯৭, ইন্ডিয়ান বঙ্কিম, মহারাষ্ট্র, জেআরও-৫২৪, রবি-১, কেনাফ ও এফ-২৪। 

প্রতি হেক্টরে ২.৪ মেট্রিক টন পাট উৎপাদিত হবে। সে হিসেবে জেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬২ হাজার ৬৬৪ মেট্রিক টন। 

ইতোমধ্যে জেলার ৪০ ভাগ ক্ষেত থেকে পাট কাটা হয়েছে। বাজারে দামও ভাল রয়েছে। তাই এ পাট প্রায় ৪শ’ কোটি টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক সুরেশ মালাকার (৫৬) বলেন, পাটের ভাল দাম পেয়ে আমি খুশি। এ বছর প্রথমেই পাটের বাজার ভাল পেয়ে আমরা লাভবান হয়েছি। তবে পানি সংকটের কারণে জমি থেকে পাট কেটে অন্যত্র জাগ দিতে হয়েছে। এতে আমার খরচ বেড়েছে।

তিনি আরো বলেন, অন্যান্য বছর ১ হেক্টর জমিতে পাট চাষে ৭৫ হাজার টাকা খরচ হতো। এ বছর ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা গ্রামের রবিউল শেখ (৪৫) বলেন, খালে পানি নাই। তাই পাট জাগ দিতে সমস্যা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পানি পচে গেছে। তাই পাটের রঙ ভালো হচ্ছে না। ফলে ভাল দামে পাট বিক্রি করতে পারছি না।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার তারাইল গ্রামের হাসান মোল্যা (৫০) বলেন, এবারের বর্ষা বৃষ্টি কম হয়েছে। তাই খালবিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। আমাদের উঁচু জমিতে বেশি পাট হয়। এ পাট কেটে নিচু এলাকার খালবিলে জাগ দিতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়েছে।

মুকসুদপুর উপজেলা সদরের পাট ব্যবসায়ী মো. আজিজুর রহমান আজিজ বলেন, কোরবানির ঈদের আগেই হাট-বাজারে নতুন পাট আসতে শুরু করে। তখন প্রতি মণ ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছিল। ঈদের পর পাটকলগুলো পাট কিনতে শুরু করে। তারপর থেকেই পাটের দাম বাড়তি।

তিনি জানান, মুকসুদপুরের হাটে প্রতি মণ পাট ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাটের বাজারে এখন তেজিভাব বিরাজ করছে। জুটমিলগুলো এভাবে পাট কেনা অব্যাহত রাখলে বাজার আরো বাড়তে পারে বলে জানান ওই ব্যবসায়ী।

মুকসুদপুরে আরেক পাট ব্যবসায়ী শ্যামল কুন্ডু বলেন, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ অঞ্চলে বেশ কিছু জুট মিল গড়ে উঠেছে। এরা প্রতিযোগিতা করে পাট কিনতে মাঠে নেমেছে। এ কারণে দাম বাড়ছে। গত কয়েক বছর ধরে পাটের বাজার ভাল রয়েছে।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, এ বছর পাট চাষের অনুকূল পরিবেশ ছিল। তাই বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে কৃষকদের সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় জেলার সব পানির গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh