সারের দাম বৃদ্ধি কৃষি খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২২, ১২:৫৬ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

গত সোমবার থেকে সরকার ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৬ টাকা বৃদ্ধি করেছে। ডিলার পর্যায়ে ইউরিয়া সারের খুচরা মূল্য কেজিপ্রতি ১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২২ টাকা করা হয়েছে। 

সারের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কৃষকরা যাতে ইউরিয়ার যথাযথ ব্যবহার করেন এবং চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরিয়ার দাম বেড়েছে। 

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) বলছে, দেশে আমন মৌসুমে জমিতে বিঘাপ্রতি ২৩ কেজি এবং বোরো মৌসুমে ৩০ কেজি ইউরিয়া সার ব্যবহার করার নিয়ম। কিন্তু অনেক কৃষক তা ৫ থেকে ১০ কেজি বেশি ব্যবহার করেন। যা ফসল ও মাটির জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর। 

কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারি পরামর্শ অনুযায়ী কৃষকরা ইউরিয়া সার ব্যবহার করলেও প্রতি মণ চালের দাম আমনে ১২ টাকা এবং বোরোতে ১৫ টাকা বাড়বে। 

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) বলছে, আমরা ৩০-৪০ বছর ধরে বলছি কৃষকরা জমিতে ইউরিয়া সারের ব্যবহার বেশি করছে। আমাদের এ পরামর্শ যদি আগে থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের বুঝিয়ে বলে তাদেরকে সচেতন করে তুলতেন তাহলে আমাদের মাটি এখন অনেক ভালো থাকত। কিন্তু তারা তা না করে হঠাৎ করেই দাম বৃদ্ধি করায় কৃষকদের খরচ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় ইউরিয়ার দাম বৃদ্ধির বিষয়টিকে সঠিক প্রমাণ করার জন্য নানা ধরনের তথ্য-প্রমাণ দিচ্ছে। তারা বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরিয়ার দাম কেজিপ্রতি ৮১ টাকা। এতে ৬ টাকা বাড়ানোর পরও সরকারকে ৫৯ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে কেজিপ্রতি ইউরিয়া সারের ভর্তুকি ছিল ১৫ টাকা। বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৪ দফা ইউরিয়া সারের দাম কমিয়েছে। 

ডিএপি সারে ১৮ শতাংশ নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের উপাদান রয়েছে। এজন্য ইউরিয়া সারের ব্যাপক ব্যবহার কমিয়ে ডিএপি সার ব্যবহারের কথা বলছে সরকার। সরকার ডিএপি সারের দাম ৯০ টাকা কমিয়ে তা ১৬ টাকা করেছে। এতে ডিএপি সারের ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, ডিএপি সারের ব্যবহার বাড়ার ফলে ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমাই স্বাভাবিক। বাস্তবে ইউরিয়ার ব্যবহার কমেনি বরং বেড়েছে। এতে সারের ভর্তুকি বেড়ে গেছে চারগুণ। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সারে সরকার ভর্তুকি দিয়েছে ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে লেগেছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। 

বিষয়টি আদতে কতটা সঠিক তা যাচাই হওয়া প্রয়োজন। এ তথ্য কৃষকদের কাছে কতটুকু পৌঁছেছে? এ বিষয়ে তাদেরকে সচেতন না করে সরাসরি দাম বৃদ্ধি করলে কৃষকরা এর ব্যবহার কমিয়ে দেবে এটা ভাবা ঠিক নয়। এজন্য আগে তাদেরকে সচেতন করতে হবে। 

এমনিতে কৃষকরা তাদের উৎপাদন খরচ অনুযায়ী ফসলের দাম পান না। একদিকে সরকার সার, বীজ ও পেস্টিসাইডের দাম বৃদ্ধি করেন, অন্যদিকে ফড়িয়ার কারণে তারা ফসলের দাম ঠিকভাবে পান না। এ বছর সেখানে যোগ হয়েছে লোডশেডিং। ফলে কৃষক ডিজেল দিয়ে সেচ দিচ্ছে। এমনকি বৃষ্টির অভাবে মাটি শুকিয়ে যাওয়ায় তা ভালোভাবে চাষ দিতে হচ্ছে। এতেও ডিজেল খরচ বেশি পড়ছে।

এ পরিস্থিতিতে সরকার এ মুহূর্তে সারের দাম বৃদ্ধি না করে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে পারত। সারের দাম বৃদ্ধিতে এ মৌসুমের খাদ্যশস্যের ফলন কমে যেতে পারে। সেটা হলে সরকারকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হতে পারে। তখন খরচ এবং সমস্যা আরও বাড়বে। এ ধরনের বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সব কিছু হিসাব ও পরিকল্পনা করে চলতে না পারলে অর্থনীতি অনেক ঝুঁকিতে পড়বে। কৃষিপণ্য আমদানিতে ছেয়ে যাবে দেশ। কৃষি ধ্বংস হবে। পুরো পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, এক্ষেত্রে সরকার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে পারছে না।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh