স্মিথ হয়েছেন- সোহান হলে দোষ কী

তারিক আল বান্না

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২২, ০৩:৪৭ পিএম

বাংলাদেশ জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলের নতুন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলের নতুন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ মাত্র ২২ বছর বয়সে জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হন। আর নুরুল হাসান সোহান নেতৃত্ব পেয়েছেন ২৮ বছর বয়সে। স্মিথকে একটা বিশেষ কারণে প্রোটিয়াদের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছিল। আর সোহানকেও আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে একটা বিশেষ বিষয়কে সামনে রেখে অধিনায়ক করা হয়েছে।

স্মিথের গুণের কারণে হ্যান্সি ক্রোনিয়ের কেলেঙ্কারিতে এলোমেলো হয়ে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট অঙ্গনে একটা সুন্দর অবস্থা তৈরি হয়। ক্রিকেট মানও আগের চেয়ে বৃদ্ধি পায়। স্মিথকে নিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়ে ইতিবাচক ফল পায় দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড। আমাদের ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) টি-টোয়েন্টিতে দলের পিছিয়ে পড়া অবস্থার পরিবর্তনের আশায় সোহানকে নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। 

নুরুল হাসান সোহান বাংলাদেশ জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলের নতুন অধিনায়ক। সোহানের নেতৃত্ব নিয়ে চারদিকে নানা প্রশ্ন উঠেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো হৈচৈ পড়ে গেছে। কেউ কেউ তার বয়স নিয়ে কথা তুলছেন, কেউ কেউ তার যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। তবে ক্রিকেট বোর্ড যে, এটাকে পরীক্ষামূলকভাবে দেখছেন সেটা নিয়ে ভাবছেন না কেউ। যেখানে বাংলাদেশের সিনিয়ররা সাম্প্রতিক সময়ে নেতৃত্ব দিতে এবং নিজে ভালো খেলতে ব্যর্থ হচ্ছেন, সেখানে বিসিবির পক্ষ থেকে পরীক্ষা করায় তো কোনো অপরাধ হচ্ছে না। 

স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একমাত্র ওয়ানডে খেলার চর্চা করেছে বেশি। তার অবশ্য কারণও রয়েছে। বাংলাদেশ ১৯৭৫-৭৬ সাল থেকে ক্রিকেট চর্চা শুরু করলেও ওয়ানডে স্ট্যাটাস লাভ করে ১৯৯৭ সালে, টেস্ট স্ট্যাটাস পায় ২০০০ সালে। ২২ বছর আগে তো বিশ্বে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট শুরুই হয়নি। তাই বাংলাদেশের তো তার চর্চার প্রশ্নই ওঠে না। টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা শুরু হয় নারীদের ২০০৪ সালে আর পুরুষদের ২০০৫ সালে। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ খেলে ২০০৭ সালে। কিন্তু ১৫ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভালো পজিশন তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল টি-টোয়েন্টি সিরিজে হেরেছে। একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত না হলে হয়তো ০-৩ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশই হতো। যেমনটি টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে ০-২ ব্যবধানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে হতাশ করেছে। ফলে এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সোহানকে অধিনায়ক করে এবং দলে কিছু পরিবর্তন এনে একটা পরীক্ষা অবশ্যই হতে পারে। বিসিবির অনেক দোষ রয়েছে। কিন্তু এই কাজটি করে তারা অন্যায় কিছু করেনি। 

ক্রোনিয়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সুনামকে ভূলুন্ঠিত করেন। দেশের শিশু-কিশোরদের মনে ক্রিকেটের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়। স্মিথ এই অবস্থার পরিবর্তনে দারুণ ভূমিকা রাখেন। ২০০৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর শন পোলকের কাছ থেকে তিনি অধিনায়কের দায়িত্ব পান। তিনি হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়ক। অধিনায়কত্ব লাভের পর স্মিথ টানা দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করেন ইংল্যান্ড সফরে। লর্ডসে এক ইনিংসে স্মিথ করেন ২৫৯ রানের দারুণ এক স্কোর। টেস্ট সিরিজে তিনি যৌথভাবে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। ২০০৮-০৯ এবং ২০১২-১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজ জেতে তারই নেতৃত্বে। ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট ক্রিকেটের র‌্যাংকিংয়ে এক নম্বর দলে পরিণত হয়। ওই বছরটি ছিল তার ক্যারিয়ারের সেরা সময়। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন সফল এই অধিনায়ক। যখন তার বয়স মাত্র ৩৩ বছর। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে স্মিথ একটা উদাহরণ। আমাদের সোহান যে তার মতোই চমক দেখাবেন, সে কথা বলা হচ্ছে না। তবে আশা করতে দোষ কোথায়? 

বাংলাদেশে ‘পঞ্চপাণ্ডব’ বলতে মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহকে বোঝানো হয়। এই পঞ্চপাণ্ডব ভেঙে যাওয়া শুরু হয় মাশরাফিকে দলের বাইরে রাখার পর থেকে। শুধু পঞ্চপাণ্ডবই নয়, ওই সময় থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেট এলোমেলো অবস্থায় চলে যেতে থাকে। টেস্টে টি-টোয়েন্টি স্টাইলে ব্যাটিং করতে দেখা যায়, টি-টোয়েন্টিতে সিনিয়ররা পর্যন্ত টেস্ট স্টাইলে খেলেন। এক ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখনো ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমে আসছে। তাই একটা বিশ্বাস-আস্থা ফিরিয়ে আনা দরকার। সোহান হোক, সেই আস্থা ফেরানোর প্রতীক। সামনে বিশ্বকাপ। তাই এ ধরনের একটা পরীক্ষা চালানোর প্রয়োজন ছিল। 

২০১৬ সালে সোহানের টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ওই বছরেই তার ওয়ানডে অভিষেক হয়। আর ২০১৭ সালে হয় টেস্ট অভিষেক। তাই সব ফরম্যাটেই জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার অভিজ্ঞতা আছে তার। আর ২০১৮ সালে এসিসি ইমার্জিং টিম এশিয়া কাপে সোহান বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন। ফলে তার নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগও হয়েছে। ২০২১ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার টি-টোয়েন্টি লিগের অন্যতম সেরা ব্যাটার ছিলেন তিনি। ওই বছরেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলে নাম লেখান সোহান। এবার তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল জিম্বাবুয়েতে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভালো করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। দেখা যাক, সোহান কতটুকু সাফল্য পান খেলায় এবং নেতৃত্বে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh