বরিশালে লঞ্চ-বাসে আদায় হচ্ছে বাড়তি ভাড়া

বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২২, ০৮:১২ পিএম

জ্বালানি তেল। ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল। ছবি: সংগৃহীত

মধ্যরাতে জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধির খবর ছড়িয়ে পরার পরপরই রাত থেকেই বরিশালে জ্বালানি তেলের পাম্পগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ে। কিন্তু পাম্প মালিকেরা তেল বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ায় অনেকেই তেল কিনতে পারেনি। আবার কোথাও কোথাও ক্রেতাদের বিক্ষোভে কিছু সময় তেল বিক্রি করতে বাধ্য হন পাম্প মালিকেরা। আবার সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবহন মালিকরাও ভাড়া বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছেন।

এদিকে শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সাথে সাথে শনিবার সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ নৌ-রুটে হুট করে ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। তাদের অভিযোগ, কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

আজ শনিবার (৬ আগস্ট) সকালে বরিশাল নদী বন্দর থেকে ভোলাগামী কয়েকটি লঞ্চে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠে। 

এ ব্যাপারে লঞ্চের যাত্রীরা বলেন, যাত্রী প্রতি ৪০ টাকা বাড়তি নেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো লঞ্চে ৫০ টাকাও বেশি নেওয়া হয়। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে ১২০ টাকার ভাড়া বাড়িয়ে ১৭০ টাকা পর্যন্ত রাখা হয়েছে।

লঞ্চ ছাড়াও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে স্পিডবোটে। আগের ভাড়ার সাথে নতুন করে ৫০ টাকা সংযোজন করা হয়েছে। বরিশাল-ভোলা রুটে চলাচলকারী স্পিডবোটের চালকরা বলছেন, ৫০ টাকা করে বাড়ালেও ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা কঠিন হবে।

এমভি মানামী লঞ্চের সুপারভাইজার শুভ জানান, তারা এখনো ভাড়া বৃদ্ধির কোনো সিদ্ধান্ত পাননি। তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন ভাড়ার তালিকা ঠিক করা হবে। কেবিনের ভাড়ায় তারতম্য না হলেও ডেকের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে।

বরিশাল বিভাগীয় নৌযান শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল হাসেম বলেন, লঞ্চে ভাড়া এখনো বাড়েনি। তবে ভাড়া না বাড়িয়ে উপায় কি। প্রতি লিটার ডিজেলে ৩৪ টাকা মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। আজ-কালের মধ্যে ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে বৈঠক হবে।

অপরদিকে একই চিত্র দেখা গেছে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে। নথুল্লাবাদ থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটের পরিবহনে যে যার মত করে ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

এদিকে শুক্রবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা প্রচার হওয়ার পর রাত সাড়ে ১০ টার পর থেকেই বরিশালের পাম্প মালিকেরা জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ করে দেয়। দাম বাড়ার খবরে মোটরসাইকেল চালকরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন পাম্পগুলোতে। কিন্তু পাম্পগুলো তেল বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ায় অনেকে তেল কিনতে পারেনি। কোনো কোনো পাম্পে যানবাহন চালকদের তোপের মুখে তেল বিক্রি করতে বাধ্য হয়। তাও সর্বোচ্চ এক লিটার পর্যন্ত।

মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের জ্বালানি তেলের ক্রেতারা জানান, বরিশাল নগরীর সবগুলো পাম্পেই রাত ১০ টার পর জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে তেল না পেয়ে অনেকেই ফিরে যান।

মোটরসাইকেল চালক মেহেদী হাসান বলেন, নগরীর কয়েকটি পাম্পা ঘুরে তের কিনতে না পেরে কাশিপুর এলাকার সুরভী পেট্রোল পাম্পে রাত সাড়ে ১০টায় গিয়ে দেখি তেল বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। সেখানে তখন অসংখ্য মোটরসাইকেল চালক তেলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তেল বিক্রি বন্ধ করায় ক্রেতারা সেখানে বিক্ষোভ শুরু করলে ১১ টার দিকে আবার বিক্রি শুরু করে। কিন্তু সাড়ে ১১টায় আবার তেল বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। রাত ১২টার পর বর্ধিত দামেই তেল বিক্রি শুরু করে পাম্পগুলো।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সুরভী পাম্পের পরিচালক রেজিন উল কবীর বলেন, সাড়ে ১০টার পর পাম্প বন্ধ করা হয়নি। তবে জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধির খবরে শত শত মোটরসাইকেল ও যানবাহন মালিক তেলের জন্য পাম্পে আসলে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। সবাই পুরনো দামে বাড়তি তেল নিতে চাইলে আমরা দিতে না পারায় ক্রেতারা হৈ চৈ শুরু করে। তখন কিছু সময় বিক্রি বন্ধ ছিল। 

তিনি বলেন, রাত ১২টা থেকে নতুন দামে জ্বালানি তেল বিক্রি শুরু করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল নগরীর মধ্যে কাশিপুর, কালিজিরা এবং রূপাতলী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত মোট পাম্পের সংখ্যা ১২টি। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির খবরে ফিলিং স্টেশনগুলোতে রাত সাড়ে ১০টা থেকে প্রচুর যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। নগরীর নতুন বাজার ইসরাইল তালুকদার ফিলিয় স্টেশন ও পার্শ্ববর্তী ভূঁইয়া লিলিং স্টেশন, রূপাতলী, কালিজিরা, কাশিপুর এমনকি নগরীর বাইরে জিরোপয়েন্ট মোড়েও যানবাহনগুলো তেলের জন্য ভিড় জমায়।

যানবাহনের ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হওয়ায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর বিএম কলেজ রোড এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে ভূঁইয়া ফিলিং স্টেশন তেল বিক্রি বন্ধ করে দিলে মোটরসাইকেল চালকরা বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায় তেল বিক্রি শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া রূপাতলী ডোস্ট লিফিং স্টেশনে যানবাহনের চাপের কারণে বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কেও যানজট সৃষ্টি হয়।

বরিশাল-পটুয়াখালী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপন বলেন, ‘আমরা এখনো আগের ভাড়াই যাত্রী পরিবহন করছি। তবে আগের চেয়ে প্রতিটি রুটেই বাড়তি তিন হাজার টাকা ব্যয় বেড়েছে। বিকেলে আমরা প্রশাসন ও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের সাথে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে সভা করে সিদ্ধান্ত নেব।

জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, ভাড়া বাড়বে কিনা সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। তবে, তেলের দাম যেহেতু বেড়েছে আমাদের খরচও বাড়বে। অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী বাস মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে তাগিদ দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত হলে বাসের ভাড়া নির্ধারণের ব্যাপারে আলোচনা হবে।

নৌ ও সড়ক পরিবহন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি লিটার ডিজেলে ৩৪ টাকা মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাড়া না বাড়িয়ে কোনো উপায় নেই। এটা যাত্রীদের জন্য বাড়তি চাপ পড়বে জেনেও আমরা নিরুপায়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh