নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২২, ১০:৩০ পিএম
অশালীন নাচগানে র্যাগ ডে উদযাপন। ছবি: নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা (এনএস) সরকারি কলেজে অশালীন নাচগানে র্যাগ ডে উদযাপনের কারণে পাঁচ শিক্ষককে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সপ্তাহ জুড়ে সমালোচনার জেরে বৃহস্পতিবার তাদের এ নোটিশ দেওয়া হয়। অপরদিকে, জড়িত কলেজ ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানের অনুমতি নিয়ে ২৯ জুলাই ক্যাম্পাসে ডিস্কো জকি (ডিজে) এনে র্যাগ ডে উদযাপন করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের টি-শার্টে লেখা ছিল অশালীন নানা শব্দ। অনুষ্ঠানে ছিল অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির উদ্দাম নাচ।
জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগ ডের নামে ডিজে পার্টি, বুলিং, অশ্লীলতাসহ সব অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও এ আয়োজনে কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা সহযোগিতা করেছেন।
‘স্বপ্নচারী-২০২২’ শিরোনামে বিদায় অনুষ্ঠানের এ আয়োজন করা হয়। এ বছর এ কলেজ থেকে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন। তাদের মধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থী র্যাগ ডের পরিকল্পনা করেন। কলেজ শাখা ছাত্রলীগকে অবহিত করে তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী মাথাপিছু চাঁদা সংগ্রহ করেন। কলেজের কয়েকজন তরুণ শিক্ষক এতে সহযোগিতা করলেও মেধাবী শিক্ষার্থীরা অংশ নেননি। একজন নারী ডিস্কো জকিকে বগুড়া থেকে ভাড়া করে আনা হয়। ওই দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কলেজ চত্বরের মুক্তমঞ্চে এ পার্টি চলে। আয়োজক প্রায় ১০০ শিক্ষার্থীর সাথে তাদের শতাধিক বহিরাগত বন্ধুও অংশ নেন।
কলেজের সাবেক ছাত্র মিনারুল মহসিন মিনু বলেন, বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে আমাদের গর্বের প্রতিষ্ঠানে র্যাগ ডের নামে অপসংস্কৃতি এবং বেহায়াপনার প্রচারিত ছবি ও ভিডিওর তীব্র নিন্দাসহ প্রতিবাদ জানাই। দাবি জানাই আয়োজকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির।
কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বুলবুল আহমেদ বলেন, পরীক্ষার্থীর নামে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলে-মেয়ের কর্মকাণ্ড দেখে হতবাক হয়েছি। কলেজের অধ্যক্ষ এ উচ্ছৃঙ্খলতার অনুমতি দিয়েছেন।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরহাদ বিন আজিজ বলেন, কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাদাত রাজীব র্যাগ ডে উদযাপনের অনুমতি দিতে অধ্যক্ষকে চাপ প্রয়োগ করেন। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করায় অধ্যক্ষ অনুমতি ও প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা দিতে বাধ্য হন। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে সমালোচনা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ছাত্রলীগের নেতা শাহাদাত রাজীবের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। জেলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ দিঘাপতিয়া এমকে কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিনয়ী বিদায়ের পরিবর্তে এমন উগ্র আয়োজন আমাদের সংস্কৃতির সাথে যায় না। এ আয়োজন কলেজটির অর্ধশত বছরের ঐতিহ্যকে ভূলুণ্ঠিত করেছে।
কলেজের অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম জানান, কিছু শিক্ষার্থী বিদায় অনুষ্ঠান করার আবেদন নিয়ে আসায় তিনি অনুমতি দেন। তবে তাদের তত্ত্বাবধানের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই শিক্ষকরা চরম উদাসীনতার পরিচয় দেওয়ায় তাদের শোকজ করা হয়েছে। নারী ডিজে ভাড়া করে এ ধরনের অনুষ্ঠান চলছে জানলে তিনি বন্ধ করে দিতেন।
সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠানের কিছু পরীক্ষার্থী যে ধরনের হুমকি ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করেছে সেগুলো তাকে হতবাক করেছে বলেও জানান তিনি।