স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে যাবেন না আলেমরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২২, ০৯:১৬ পিএম

আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআ’তিল কওমিয়া বাংলাদেশ

আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআ’তিল কওমিয়া বাংলাদেশ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাকা বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে অপারগতা জানিয়েছে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত কর্তৃপক্ষ আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআ’তিল কওমিয়া বাংলাদেশ। হেফাজত নেতার চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

সংস্থাটির চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির সভায় দেশের শীর্ষ আলেমরা এ সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা গেছে।  

আজ রবিবার (৭ আগস্ট) বোর্ডের অফিস ব্যবস্থাপক অছিউর রহমান প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, হেফাজতে ইসলামের সহসভাপতি অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীর পাঠানো চিঠি একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। এর সাথে হাইয়াতুল উলয়া বা সংশ্লিষ্ট ছয় বোর্ডের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাছাড়া হেফাজতের ওই নায়েবে আমির হাইয়াতুল উলয়ার কেউ নন। তার প্রেরিত চিঠির ওপর ভিত্তি করে ১০ আগস্ট ডাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভায় অংশগ্রহণে তাই অপরগতা প্রকাশ করছে হাইয়াতুল উলয়া।

হাইআতুল উলয়া সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আল হাইআর এই সিদ্ধান্ত জানাতে বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান স্বাক্ষরিত একটি অপারগতাপত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে পৌঁছে দেন ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। 

ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন- ফরিদাবাদ মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মুফতি নুরুল আমিন, তানযিমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়ার সভাপতি মুফতি আরশাদ রাহমানী, লালবাগ মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি ফয়জুল্লাহ, বেফাকের সহসভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু, জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের সহসভাপতি মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ ও একই বোর্ডের মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ আলী। 

সেই চিঠিতে বৈঠকের এজেন্ডায় উল্লিখিত হেফাজতে ইসলামের গত বছরের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাশকতা ও সংগঠনের নায়েবে আমীর মিজানুর রহমান চৌধুরীর ৮ পরামর্শের সাথে আল হাইআ’র কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানানো হয়। একইসাথে মিজানুর রহমানের চিঠি দেওয়ার বিষয়টি তার এখতিয়ার বহির্ভূত বলেও জানায় আল হাইআ।

এদিকে কওমি মাদ্রাসার মানোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সংগঠনের নায়েবে আমীর ও গাজীপুরের দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীর পাঠানো চিঠির বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।  

শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে হেফাজত আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহহিয়া ও মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান জানিয়েছেন, দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীর চিঠির সাথে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই।  সংগঠন তার চিঠির সাথে একমতও নয় বলেও জানানো হয় এতে।

প্রসঙ্গত, কওমি মাদ্রাসার মানোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি লিখেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর ও গাজীপুরের দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী। হেফাজত নেতার এ চিঠি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণে সভাও ডাকা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এ নিয়ে কওমি মাদ্রাসার আলেমদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। 

জানা যায়, গত ২৫ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি দেন হেফাজতের নেতা অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী। ‘কওমি ধারার দ্বীনি শিক্ষা ও শিক্ষকের মানোন্নয়নকল্পে সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ’ শীর্ষক চিঠিতে মিজানুর রহমান আটটি সুপারিশ করেন।

এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কওমি মাদ্রাসার বোর্ডপ্রধানদের একটি বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। এরপরই বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় কওমি আলেমদের মধ্যে। কোনো কোনো দায়িত্বশীল আলেম মনে করছেন, সরকারের অভ্যন্তরের কারো পরামর্শেই মিজানুর রহমান চৌধুরী এ প্রস্তাব দিয়েছেন।

কওমি মাদ্রাসার দায়িত্বশীল আলেমদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেওনার পীর হিসেবে পরিচিত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী নিজে কোনো আলেম নন। এছাড়া কওমি মাদ্রাসার কোনো শিক্ষা বোর্ডেও তিনি নেই। শুধু গাজীপুরের দেওনা এলাকায় তার একটি মাদ্রাসা রয়েছে। অতীতে কওমি সনদের স্বীকৃতি বা এ জাতীয় কোনো কাজের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এমন প্রেক্ষাপটে কওমি মাদ্রাসার মান উন্নয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর তার চিঠি প্রেরণ এবং সে চিঠি আমলে নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের বিষয়টি কওমি আলেমদের বিস্মিত করেছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh