বর্ধিত ভাড়ায় ক্ষুব্ধ বাস ও লঞ্চযাত্রীরা

বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২২, ০৭:৩৯ পিএম | আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০২২, ০৭:৪০ পিএম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর বাস ও মিনিবাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। তবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারি বাস ভাড়া বাড়িয়ে দেয় মালিকপক্ষ। তাছাড়া লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা না আসলেও অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বাড়তি ভাড়ায় যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও বাস মালিকরা বলছে কিছুই করার নেই।

শুক্রবার মধ্যরাতে আকস্মিক জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর সরকার রবিবার থেকে নতুন ভাড়া পুননির্ধারণ করলেও বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচলকারী বাসগুলো শনিবার থেকেই ৫০ থেকে ১০০ টাকা বর্ধিত ভাড়া আদায় শুরু করে।

গত শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টার পর ডিজেল, পেট্রল, কেরোসিন ও অকটেনের দাম বাড়িয়েছে সরকার। প্রতি লিটার ডিজেলে ৩৪ টাকা, কেরোসিনে ৩৪ টাকা, অকটেনে ৪৬ টাকা, পেট্রলে ৪৪ টাকা বেড়েছে।

ভোক্তা পর্যায়ে আগে খুচরামূল্য ছিল প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা ও পেট্রল ৮৬ টাকা। দাম বাড়ার পর প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও পেট্রল ১৩০ টাকা।

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (৬ আগস্ট) মহানগরে প্রতি কিলোমিটারে বাস ও মিনিবাসে ভাড়া ৩৫ পয়সা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। দূরপাল্লায় বাস ভাড়া বেড়েছে ৪০ পয়সা। ঢাকার সায়দাবাদ দিয়ে মাওয়া, ভাঙ্গা ও মাদারীপুর হয়ে বরিশালের দূরত্ব ১৫৬ কিলোমিটার। ৪০ সিটের বাসে আসন প্রতি এ পথের ভাড়া ৪৫৪ টাকা আর ৫১ সিটের বাসে আসন প্রতি ভাড়া ৩৫৬ টাকা।

শনিবার রাতে বিআরটিএ এবং বাস মালিকদের বৈঠকের পর ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। বিআরটিএর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দূরপাল্লার বাসে প্রতি কিলোমিটারের জন্য যাত্রী প্রতি ভাড়া ৪০ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর মহানগরে প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৩৫ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ৫০ পয়সা ঠিক করা হয়েছে। এ ছাড়া বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা আর মিনিবাসে ৮ টাকা। এতে করে নতুন ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছে বাসগুলো।

আজ সোমবার (৮ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে জানা গেছে, ‘বরিশালে আগে নন-এসি বাসগুলোতে ভাড়া ছিল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু শনিবার থেকে তা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। আগে ৪০ সিটের বাসে আসন প্রতি এ পথের সরকার  নির্ধারিত ভাড়া ছিল ৪৫৪ টাকা; আর ৫১ সিটের বাসে আসন প্রতি ভাড়া ছিল ৩৫৬ টাকা।

তবে এসি বাসগুলোতে সরকার নির্ধারিত কোনো ভাড়া নির্ধারণ করে না দেওয়ায় ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। বরিশাল-ঢাকা পথে চলাচলকারি বিএমএফ পরিবহনে আগে ভাড়া ছিল ৩৫০ টাকা। কিন্তু শনিবার থেকে তা ৪০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। আবার হানিফ পরিবহনে ৪৫০ টাকার ভাড়া আদায় হচ্ছে ৫০০ টাকা। সাকুরা পরিবহনেও একই হারে ভাড়া আদায় হচ্ছে। তবে এসি বাসগুলোতে আগের ৬০০ টাকার ভাড়া এখন ৭৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।

এদিকে অভ্যন্তরীণ রুটে বরিশাল থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত পূর্বের ভাড়া ৮৫ টাকার পরিবর্তে বর্তমানে রাখা হচ্ছে ১০৩ টাকা। এছাড়াও বরিশাল-মুলাদী ১০৩, বরিশাল-হিজলা ১০০, বরিশাল-স্বরুপকাঠী ৭০, বরিশাল-বানারীপাড়া ৫০ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে।

অপরদিকে বরিশাল রূপাতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বরিশাল-কুয়াকাটা রুটে ১১৪ কিলোমিটার সড়কের নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯০ টাকা, বরিশাল থেকে খেপুপাড়া ২৩০, তালতলী ২৫০, আমতলী ১৮৫, বরগুনা ২১০, বরিশাল-পটুয়াখালী ১১৫ এবং বাকেরগঞ্জে ৫০ টাকা। বরিশাল-খুলনা ২৯৫, বরিশাল-বাগেরহাট ২১৫, বরিশাল-পিরোজপুর ১৪০, বরিশাল-মঠবাড়িয়া ২২০, বরিশাল-ঝালকাঠি ৪০, বরিশাল-পাথরঘাটা ২৭০ টাকা।

এসব রুটের যাত্রীদের দাবি হঠাৎ করে বাস ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। রিয়াজ শরীফ নামে একজন যাত্রী বলেন, ৫০০ টাকায় টিকিট নিয়েছি। কাউন্টারে আলোচনা শুনলাম ভাড়া নাকি আরো এক দফা বাড়াবে। বর্ধিত ভাড়া নেওয়ার পরেও নাকি বাস কোম্পানিগুলোর লোকসান গুণতে হয়।

নুসরাত জাহান লুনা বলেন, সরকার প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বাড়িয়েছে কিন্তু আমাদের তো আয় বাড়েনি। বাড়তি ভাড়ার টাকা কোথা থেকে আসবে।

স্বপন খান নামের আরো এক যাত্রী বলেন, ‘যা বেতন পাই তা দিয়ে সংসার চালানোই দায় হয়ে যায়; এত যদি দাম বাড়ে আমাদের অবস্থা কি হবে? আমরা ভিক্ষা করতেও পারছিনা।

বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচলকারি হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক শাহ আলম বলেন, সরকার তেলের দাম বাড়ানোর পর যে হারে ভাড়া বাড়িয়েছে তারপরেও আমাদের লাভ হয় না। কী করা যায় এনিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।

রবিবার থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বর্ধিত তেলের মূল্যের সাথে সমন্বয় করে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। সে অনুসারে আগের থেকে প্রতি কিলোমিটারে অতিরিক্ত ৪০ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। এতে ৬২ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া যোগ হয়। কিন্তু ভাড়া বাড়ানো হয়েছে কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশি।

বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিচ্ছি আমরা। ভাড়া বৃদ্ধির পরও আমরা কম টাকায় যাত্রী পরিবহন করছি।

এদিকে গত ১ জুলাই পদ্মা সেতু হয়ে চলাচলকারী বাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের (ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে) টোল যুক্ত করে এই নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকার সায়দাবাদ দিয়ে মাওয়া, ভাঙ্গা ও মাদারীপুর হয়ে বরিশালের দূরত্ব ১৫৬ কিলোমিটার। ৪০ সিটের বাসে আসন প্রতি এ পথের ভাড়া ৪৫৪ টাকা আর ৫১ সিটের বাসে আসন প্রতি ভাড়া ৩৫৬ টাকা।

শনিবার রাতে বিআরটিএ এবং বাস মালিকদের বৈঠকের পর ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। বিআরটিএর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দূরপাল্লার বাসে প্রতি কিলোমিটারের জন্য যাত্রী প্রতি ভাড়া ৪০ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর মহানগরে প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৩৫ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ৫০ পয়সা ঠিক করা হয়েছে। এছাড়া বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা আর মিনিবাসে ৮ টাকা।

এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরের প্রথমদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে বাড়ানো হয়েছিল ২৭ শতাংশ।

এদিকে, বাসের পাশাপাশি বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চগুলোতেও বাড়ানো হয়েছে ভাড়া। প্রতি রুটে ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে বেশি রাখা হচ্ছে। ভোলা রুটের সঞ্চিতা লঞ্চের যাত্রী তোফায়েল হোসেন সোমবার দুপুরে লঞ্চ যোগে ভোলায় গেছেন। তিনি বলেন, ‘পূর্বে এই রুটে ভাড়া ছিল ১২০ টাকা। সেখানে এখন রাখা হচ্ছে ১৫০ টাকা। ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে লঞ্চের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন লঞ্চটির সুপারভাইজার।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh