আওয়ামী লীগের কমিটিতে ধর্ষণ মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি

গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২২, ০৮:১৫ পিএম | আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০২২, ০৮:২৩ পিএম

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর হোসেন। ছবি: গাজীপুর প্রতিনিধি

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর হোসেন। ছবি: গাজীপুর প্রতিনিধি

ধর্ষণ মামলার চার্জশিটভুক্ত এক আসামিকে গাজীপুর মহানগর ১০ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন পর এ বছরের ৩০ জুলাই গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী থানার ৭ থেকে ১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। 

কমিটি ঘোষণার দিন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডলসহ সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। 

ওই দিন গাজীপুর মহানগরের ১০নং ওয়ার্ডের ৬৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ও কোনাবাড়ী থানাধীন ৬টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পুর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। মো. হায়েত আলী মেম্বারকে সভাপতি ও তোফাজ্জল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয় ঝুট ব্যবসায়ী তানভীর হোসেনকে। ভুক্তভোগী এক নারী বাদী হয়ে জিএমপি কোনাবাড়ী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবছরের ২৮ জানুয়ারি তানভীর হোসেনকে অভিযুক্ত করে মামলা (কোনাবাড়ী থানা মামলা নম্বর ১৭) দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে একমাসের বেশি সময় জেলহাজতে থাকার পর জামিনে মুক্ত হয়েছেন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই নারী জিএমপি কোনাবাড়ী থানাধীন আমবাগ এলাকায় ১৭ বছর ধরে ভাড়া বাসায় স্বামীর সাথে বসবাস করে আসছিলেন। ভুক্তভোগী ওই নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ২০২০ সালের ৩১ মে ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ করে তানভীর। বিবাহের কিছুদিন পর থেকেই যৌতুকের জন্য মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। পরে ভুক্তভোগী আদালতে যৌতুক বিরোধী মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকেই নির্যাতনের মাত্রা বারিয়ে দেয়। কিছু দিন পর ২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কাজী অফিসের মাধ্যমে ভুক্তভোগীকে তালাক দেয় তানভীর। তালাকের এক বছর পর  আবারো ওই নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে। বিয়ের কথা বললে বিভিন্নভাবে কালক্ষেপণ করতে থাকে। এবছরের ২৭ জানুয়ারি সকালে সাড়ে ৬ টার দিকে তানভীর হোসেন (৫০) কোননাবাড়ী থানাধীন নীলনগর শাহিন আলমের চারতলা  ভাড়া বাসার রুমে এসে আগের মতো বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। পরে তাৎক্ষণিভাবে বিয়ের জন্য চাপ দিলে ওই নারীকে মারধর করতে থাকে তানভীর। এ ঘটনায় স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে তানভীরকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। ২৮ জানুয়ারি এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগী ওই নারী। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তানভীরকে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ । এক মাসেরও বেশি সময় পর তানভীর শর্ত সাপেক্ষে জামিনে মুক্ত পায়। পরে এ বছরের ২৬ জুন গাজীপুর আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিল করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিএমপি কোনাবাড়ি থানার উপ-পরিদর্শক শাখাওয়াত ইমতিয়াজ জানান, প্রাথমিকভাবে মামলার সত্যতা মিলেছে। তবে, ফরেনসিক রিপোর্টে আলামত পাওয়া যায়নি। চার্জশিটে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী ওই নারী জানায়, স্বামী নিয়ে তানভীরে পাশের বাসায় ভাড়ায় থেকে বসবাস করছিল ওই নারী। প্রথম স্ত্রীর মাধ্যমে তানভীর ওই নারীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার নেয়। এরপর থেকে বিয়ের আগেই ১০ বছরেরও বেশি সময় তার সাথে পরকীয়া সম্পর্ক হয়। ২০২০ সালে ওই নারীকে বিয়ে করে তানভীর। বিয়ের পর ওই নারী কাছে জমানো এবং তার বোনের জমি কেনার জন্য তার কাছে জমানো ২০ লাখ টাকা নিয়ে নেয় তানভীর। ওই টাকা চাওয়ার পর থেকেই তাদের মধ্যে বিবাধ সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত মামলায় গড়ায়। এখন নানাভাবে ওই নারীকে তানভীর হত্যাসহ হুমকি দিয়ে আসছে। প্রাণ ভয়ে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে ওই নারীকে।

এ বিষয়ে তানভীর হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ওই নারী তার বিবাহিত স্ত্রী। আওয়ামী লীগের পদ পাওয়ার কারণে একটি মহল শত্রুতা বসত মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। 

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুর রহমান মাস্টার জানান, একটি মামলায় তানভীর জেলে ছিলো শুনেছি তবে, ধর্ষণ মামলা কিনা তা জানা নাই। তবে, ধর্ষণ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে তার বিরুদ্ধ অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh