গার্ডারচাপায় নিহত রুবেলের ৭ স্ত্রী— যা বললেন স্বজনরা (ভিডিও)

সাইমুন মুবিন পল্লব

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২২, ০৭:০৫ পিএম | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২২, ০৯:২৮ পিএম

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মরদেহ হস্তান্তরের সময় স্বজনদের আহাজরি।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মরদেহ হস্তান্তরের সময় স্বজনদের আহাজরি।

উত্তরার জসীমউদ্‌দীন সড়কে বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার দুর্ঘটনায় সামনে এলো নতুন মোড়। এ ঘটনায় নিহত হৃদয়ের বাবা রুবেল হাসানের (৫০) স্ত্রীর দাবিতে হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছেন ৭ নারী— বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। তবে কোন প্রমাণ ছাড়া এধরনের তথ্য গণমাধ্যম প্রচার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা।

আজ মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মরদেহ হস্তান্তর করার সময় এ ক্ষোভ জানান স্বজনরা। 

দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা হৃদয় মরদেহ হস্তান্তরের সময় জানান, আমার বাবার দুই বৌ। আমরা এখানে দুই পরিবারের সবাই উপস্থিত আছি। আপনারা ৫ জন বা ৭ জন বলে প্রচার করেছেন; বাকিরা কোথায়? কোন কিছু যাচাই না করে সংবাদ প্রকাশ করা উচিৎ হয়নি।

হৃদয়ের সৎ বোন গণমাধ্যমের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার আব্বু মরে গেছে। সেটা নিয়ে আপনারা মজা নিতেছেন? কি চান আপনারা আমরাও মরে যাই?

হৃদয়ের খালাতো ভাই রাকিব হোসেন বলেন, কোন রকম ভেরিফিকেশন ছাড়া কিভাবে আপনারা রিপোর্ট রিলিজ করতেছেন আমরা বুঝতেছি না। কেউ এসে বলবে আমি তার বৌ, আমি তার সন্তান আপনারা সাথে সাথে তা প্রকাশ করতেছেন কেন? এ সময় তিনি দাবি করেন যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুল। যারা এ দাবি করেছে তাদের কাছ থেকে প্রমাণ চান যদি দিতে পারে তাহলে আপনাদের যা ইচ্ছে লিখেন আমাদের সমস্যা নেই।

নিজেকে রুবেলের মেয়ে দাবি করা তরুণীর নাম নিপা আক্তার। তিনি জানান তার মায়ের নাম নার্গিস আক্তার। তিনি বলেন, আমার মায়ের সাথে বাবার ডিভোর্স হয়ে যায়। পরে আমার মা ও বাবা অন্য জায়গায় বিয়ে করেন। আমি খবর (মৃত্যুর) পেয়ে আজ বাবাকে শেষবারের জন্য দেখতে এসেছি।

গতকাল সোমবার (১৫ আগস্ট) উত্তরার জসীমউদ্‌দীন সড়কে বিআরটি প্রকল্পের একটি গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকারের ৫ যাত্রী নিহত হন। ময়নাতদন্তের জন্য তাদের মরদেহ রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

বেঁচে ফিরে হৃদয় ও রিয়া সে দুঃসহ ঘটনার বর্ণনা দেন। হৃদয় বলেন, আমরা যখন যাচ্ছি, তখন দেখেছি গার্ডারটা উপরে ঝুলছে। এর নিচে দিয়ে অনেক গাড়ি যাচ্ছে। সব গাড়ি যেহেতু যাচ্ছে, তাই আমরাও যাই। আমাদের আগের সবগুলো গাড়িও ওর নিচ দিয়ে যায়। কিন্তু আমরা যখন যেতে যাই, তখনই ওটা গাড়ির ঠিক ডান দিক বরাবর পড়ে। আর গাড়িটা মাটির সাথে দেবে যায়।

হৃদয় আরও বলেন, আমার বাবা ড্রাইভ করছিলেন। পেছনে ছিল আমার শ্বাশুড়ি, আমার স্ত্রীর খালা আর তার দুই সন্তান। আমার স্ত্রীও পেছনে ছিল কিন্তু ও বাম দিকে জানালার দিকে বসায় বেঁচে যায়, আমিও বাম দিকে ছিলাম। তবে ডান দিক বরাবর পড়ায় ওরা ঘটনাস্থলেই মারা যান।

হৃদয় বলেন, গার্ডারটা এমনভাবে পড়ে যে আমার পাশে সামান্য জায়গা ছিল। ফলে আমি নড়াচড়া করতে পারছিলাম। কিন্তু আমার পা আটকে যাওয়ায় পায়ে ব্যথা পাই। কিন্তু রিয়ার পাশে কোনো জায়গা ছিল না। গাড়ি আর গার্ডারের মধ্যে রিয়ার পুরো শরীর আটকে গিয়েছিল। জ্ঞান থাকলেও আতঙ্কে চিৎকার করছিল ও। পরে আশপাশের মানুষ এসে আমাকে গ্লাস ভেঙে উদ্ধার করে। কিন্তু রিয়ার পরিস্থিতি এমন ছিল যে গ্লাস ভাঙা যায়নি। গাড়ির দরজা ভেঙে ওকে বের করার পর আমাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ নিয়ে রিয়া বলেন, আমাদের দুই ভাই-বোনকে ছোট থেকে বড় করার ব্যাপারে সম্পূর্ণটাই আমার মায়ের অবদান। সেই মাকেই এভাবে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হলো।

ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রিয়া বলেন, ওনারা কাজ করবে.. এতো ব্যস্ত একটা রোড। আল্লাহ না করুন ওখানে আমাদের গাড়ির বদলে অন্য কোনো গাড়িও থাকতে পারতো। এরকম ব্যস্ত রাস্তায় কাজ করবে, তাহলে সিকিউরিটি নেয়া অবশ্যই উচিত ছিল, রোড বন্ধ করতো। যে গাড়িটির (ক্রেন) কথা শুনলাম, শুনছি তাদের না আছে লাইসেন্স, না আছে সিকিউরিটি। তারা দুইটা টাকার লোভে এমন নর্মাল গাড়ি দিয়ে রাস্তায় কাজ করাবে। ঠিক আছে করাক, কিন্তু সিকিউরিটি কেনো রাখলো না?

প্রসঙ্গত, সোমবার (১৫ আগস্ট) উত্তরার জসীমউদ্‌দীন সড়কে বিআরটি প্রকল্পের একটি গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকারের ৫ যাত্রী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুজন শিশু ও একজন নারী। তবে ভাগ্যক্রমে এ ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান নবদম্পতি রেজাউল করিম হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১)। এ ঘটনায় হৃদয়ের বাবা রুবেল হাসান (৫০), রিয়ার মা ফাহিমা (৪০), রিয়ার খালা ঝর্না (২৮), ঝর্নার মেয়ে জান্নাত (৬) ও ছেলে জাকারিয়া (৩) মারা যান।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh