অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২২, ০৯:১০ পিএম | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২২, ০৯:১৯ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিতে
না পেরে গতকাল সোমবার (১৫ আগস্ট) পদ্মা সেতু থেকে পোশাক শ্রমিক নুরুজ্জামান খান নদীতে
ঝাঁপ দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার আগে পোশাক শ্রমিক নুরুজ্জামান খানের
একটি ভিডিওতে দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
যেখানে তাকে বলতে দেখা যায়,
'এখানে (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার) শুধু দেখলাম মন্ত্রী, মিনিস্টার
তারাই শুধু। আর তাদের কিছু লোক আর শুধু প্রশাসন। তারাই কি দেশের সবকিছু? তারাই কি শুধু
দেশে ভূমিকা রাখে? আমাদের কি কিছুই ভূমিকা নাই? সরকার নিজে বলেছে, ৮০ শতাংশ অর্থ আয়
হয় গার্মেন্টস থেকে। গার্মেন্টস পোশাক শ্রমিকদের শ্রম দিয়ে। তাদের ভূমিকা কোথায় গেল?
তাদের অধিকার চাই, তাদের স্বাধীনতা চাই।'
নুরুজ্জামান তার নিজ মোবাইলে
এ ভিডিও করেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে গোপালগঞ্জের
টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে ফুল না দিতে পেরে ফিরে আসার সময় পদ্মা সেতুতে
অবস্থানকালে নুরুজ্জামান এ ভিডিও বক্তব্য দেন বলে জানান স্বজনেরা।
মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে
পদ্মা সেতুর ১০ ও ১১ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি স্থান থেকে রেলিং টপকিয়ে তিনি পদ্মা নদীতে
ঝাঁপ দেন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
ভিডিও বক্তব্যে তিনি বলেন,
আমি সাধারণ একজন মানুষ। আমার কথার দাম দিতেও পারেন নাও দিতে পারেন। কিন্তু আমি মনে
করি বিষয়টা একদম ছোটখাটো না, বিষয়টা অনেক জটিল। স্বাধীন দেশে আমরা যদি মনের আবেগ প্রকাশ
করতে না পারি, দম বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার মতো লাগতেছে। এতকিছু থাকতেও মনে হচ্ছে কিছুই
নেই। যেখানে আমার সম্মান নাই, আমার স্বাধীনতা নেই।
তিনি বলেন, জাতির পিতা সবার
পিতা সমতুল্য। তাই তার ডাকে সবাই সাড়া দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কিন্তু বন্ধু হিসাবে তাকে
সম্মান দিতে পারলাম না। ফজরের নামাজ পড়ে বেশি টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে আসছি। এ কষ্টের দাম
কে দিবে? এ ত্যাগ স্বীকার কার জন্য। জাতির পিতার প্রতি আমাদের ভালোবাসা কি মিথ্যা?
নাকি আরও কিছু করে দেখাতে হবে? আমার পিতা শুধু একটি সংসার দেখেছেন। জাতির পিতা সবার
সংসার দেখেছেন। পুরো দেশের জন্য জান (জীবন) দিয়েছেন। জাতির পিতার প্রতি আমাদের এই ভালোবাসা
কি মিথ্যা? আমার আর বলার মতো ভাষা নাই। কষ্টে আমার বুক ফাইট্টা যাইতেছে।'
নুরুজ্জামান নারায়ণগঞ্জ জেলার
সোনারগাঁ থানার কাঁচপুর এলাকার বাসিন্দা। ঢাকার ডেমরা এলাকার একটি গার্মেন্টস কারখানায়
শ্রমিকের কাজ করতেন। পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে
তিনি প্রাইভেটকার ভাড়া করে তার পরিচিত এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে
রওয়ানা দেন। তারপর সেখানে তাদের কাছে কার্ড না থাকায় ফুল দিতে পারেননি। এরপর ফেরার
পথে ওইদিন দুপুর আড়াইটার দিকে পদ্মা সেতুতে অবস্থানকালে নুরুজ্জামান সেতু থেকে ঝাঁপ
দেন। তার খোঁজ মেলেনি।
পদ্মা সেতু থেকে ঝাঁপ দেওয়া
নিখোঁজ নুরুজ্জামানের স্ত্রী সবুরা বেগমও একজন পোশাক শ্রমিক। তিনি জানান, আমার স্বামী
একটি গার্মেন্টস কারখানায় ৯ হাজার ৫০০ টাকা বেতনে শ্রমিকের কাজ করছিল। সে শেখ মুজিবকে
অনেক ভালোবাসে। এরজন্য ১৩ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে ১৫ আগষ্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়
ফুল দিতে গিয়েছিল। আমার স্বামী শ্রমিক, তাই কার্ড ছিল না ফুল দেওয়ার জন্য। ফুল দিতে
পারেনি বলেই সে পদ্মা সেতু থেকে পদ্মা নদীতে ঝাঁপ দেয়।
তিনি বলেন, ফুল দিতে না পেরে
তার মনে অনেক কষ্ট। গরিব মানুষ দেখে শ্রদ্ধা পাবে না? কার্ড ছিল না বলে ফুল দিতে পারেনি।
কার্ড ছিল না গরিব দেখে। গরিব মানুষ দেখেই কি যেতে পারল না? শ্রমিক দেখে সম্মান দেয়নি।
আমার দুই সন্তানকে এখন কে দেখবে?
মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা
নদীতে নিখোঁজ গার্মেন্টস শ্রমিক নুরুজ্জামানকে (৩৮) উদ্ধারে কাজ করছে নৌ-পুলিশ, ফায়ার
সার্ভিসের ডুবুরীদল ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পদ্মা সেতুর ৮ নম্বর পিলার থেকে ২৬ নম্বর
পিলারের চারপাশে খোঁজ করা হয়েছে। এছাড়া পদ্মা নদীর বিভিন্ন অংশে তল্লাশি চলছে।
মাওয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার
ইনচার্জ ওয়াহিদুজ্জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, নিখোঁজের ঘটনায়
মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। পরিবারের পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ নেই। এ
ঘটনায় গাড়ির চালক ও সহযোগী যুবককে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নুরুজ্জামানের
সন্ধান পেতে নদীতে নৌ-পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরীদল কাজ করছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা
চালাচ্ছি নুরুজ্জামানকে উদ্ধারে।