প্লটভিত্তিক আবাসন পদ্ধতি বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২২, ০৩:২৯ পিএম

ঢাকা শহর। ছবি: সংগৃহীত।

ঢাকা শহর। ছবি: সংগৃহীত।

রাজধানীর আবাসন সংকট নিরসনে প্লটের পরিবর্তে ব্লকভিত্তিক উন্নয়নের বিধান করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন এলাকার জন্য ২০ বছর (২০১৬-২০৩৫ সাল) মেয়াদি ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) পাস করেছে সরকার। গত মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে ২০১০ সালে পাস হওয়া ড্যাপ কার্যকারিতা হারালো।

নতুন ড্যাপে বলা হয়েছে, নগর এলাকায় জায়গার স্বল্পতা থাকায় অপেক্ষাকৃত কম জায়গার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন জরুরি। এতে পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান রেখে অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট প্লট একত্রীকরণের কথা বলা হয়েছে। ফলে বেশি উচ্চতাবিশিষ্ট ইমারত নির্মাণ করা যাবে। জমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচও কমে যাবে। তাছাড়া যত্রতত্র নগরাঞ্চল সম্প্রসারণ কমিয়ে আনা এবং শহরের নিচু জমি ও কৃষিজমির সুরক্ষা করাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য।

ড্যাপের লক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন এলাকার জনসংখ্যার ঘনত্বের অনুপাতে সেখানকার নাগরিক সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ঢাকাকে একটি উন্নত বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলা। ২০৩৫ সালের মধ্যে একটি বিস্তৃত এলাকাজুড়ে পরিকল্পিত অবকাঠামো গড়ে তুলে আরো ২.৬ কোটি লোকের বাসস্থান নিশ্চিত করা ড্যাপের লক্ষ্য।

ঢাকার সবচেয়ে জনবহুল এলাকা যেমন লালবাগ, বংশাল, সবুজবাগ এবং গেন্ডারিয়ায় বড় ধরনের সংস্কারের পরিকল্পনা করেছে ড্যাপ। এই এলাকাগুলোতে প্রতি একরে ৭০০ থেকে ৮০০ জন বাস করে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। ড্যাপ চায় মূল ঢাকায় প্রতি একরে ২০০ জন এবং পুরান ঢাকার এলাকায় প্রতি একরে ২৫০ জনের ঘনত্ব বজায় রাখতে।

গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, পূর্বাচল এবং ঝিলমিল এলাকায় একর প্রতি ১৮০ জন এবং অন্যান্য শহরাঞ্চলে একর প্রতি ১৫০ জনের ঘনত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যও রয়েছে ড্যাপের। ঢাকা শহরের ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার নিয়ে ২০ বছরের (২০১৬-২০৩৫) যে বিশদ পরিকল্পনা করা হয়েছে তার ইতোমধ্যেই ছয় বছর চলে গেছে।

তবে আবাসন ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্লট হাউজিং স্কিমের পরিবর্তে ব্লকভিত্তিক ব্যবস্থা করা হলে আবাসন খাতকে হুমকির মুখে ফেলবে। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (রিহ্যাব) চেয়েছিল সরকার যাতে এই পরিকল্পনা অনুমোদন না করে। তাদের মতে, পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে ভবনের আকার ৩৩ থেকে ৫৩ শতাংশ কমে যাবে। এতে ফ্ল্যাটের দাম অন্তত ৫০ শতাংশ হলেও বাড়বে, যা প্রভাবিত করবে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতাকে।

গত বছরের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে ড্যাপের ঢাকায় ভবন নির্মাণ বিধিমালা বাস্তবায়ন না করার জন্য অনুরোধ করেছিল রিহ্যাব। তারা আশঙ্কায় করেছিল, এ পরিকল্পনা আবাসন খাতের ২৬৯টি সহযোগী শিল্পকেও প্রভাবিত করবে।

নতুন ড্যাপে যা আছে:

প্রকল্প এলাকাকে ছয়টি স্বতন্ত্র প্রধান অঞ্চলে এবং ৭৫টি উপ-অঞ্চলে বিভক্ত করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে ভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকাসহ কৃষি, প্রাতিষ্ঠানিক, জলাশয়, বনাঞ্চল, উন্মুক্ত স্থান, যোগাযোগ, বন্যা প্রবাহ ইত্যাদি এলাকাসমূহ পরিকল্পনায় চিহ্নিত করা হয়েছে।

নতুন ড্যাপ নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তের আবাসনের জন্য ৫৭টি স্থান চিহ্নিত করেছে। তাদের জন্য ৬৫০ থেকে ৭০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন ড্যাপ প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল।

নতুন ড্যাপে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা, সাভারের বংশী নদী, কালীগঞ্জ-রূপগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জকে রাজউকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাজউকের ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার ৬০ শতাংশ শহরাঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

ড্যাপের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকায় ২২৮ কিলোমিটার আন্তঃআঞ্চলিক সংযোগ সড়ক রয়েছে, যা বাড়িয়ে ২৯১ কিলোমিটার করা হবে। এছাড়া সংগ্রাহক সড়কটিকে ১২০০ কিলোমিটার প্রসারিত করার পরিকল্পনাও রয়েছে। পাশাপাশি শহরে ২০২ কিলোমিটার সাইকেল লেন এবং ৫৭৪ কিলোমিটার জলপথ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।

একটি পরিবেশবান্ধব শহর তৈরির পরিকল্পনায় পাঁচটি বড় আঞ্চলিক পার্ক, ৫৫টি ওয়াটার পার্ক, ১৩টি বড় ইকো-পার্ক (ভাওয়াল বনসহ), ১৩টি অন্যান্য পার্ক এবং খেলার মাঠ নির্মাণকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এ অঞ্চলে ৬২৭টি স্কুল, ২৮৫টি কলেজ ও ২৮৭টি হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে।

নতুন ড্যাপে বুড়িগঙ্গা নদীকে ঘিরে একটি সাংস্কৃতিক অঞ্চল তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে সংরক্ষণ করে পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত করার পরামর্শও রয়েছে পরিকল্পনায়।

ঢাকার সাথে আশেপাশের শহরকে যুক্ত এবং যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ৬টি মেট্রো, ২টি বিআরটি, ৬টি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের সমান্তরালে ২টি প্রধান সড়ক, ২টি রিং রোড, রিং রোডের সাথে সংযুক্ত রেডিয়াল রোড এবং বৃত্তাকার নৌপথের প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢাকার চারদিকে মোট ১৩টি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল এবং ২টি ট্রাক টার্মিনালের প্রস্তাবও করা হয়েছে।

শহরের ভেতরে অবস্থিত বিপদজনক রাসায়নিক গুদামসমূহ পর্যায়ক্রমে স্থানান্তরের সুপারিশ করা হয়েছে পরিকল্পনায়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামানুসারে কেরানীগঞ্জে প্রায় ৪২৫ একর জায়গায় একটি দৃষ্টিনন্দন পার্ক নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh