কুরিয়ারে নির্যাতনের অভিযোগ পাঠালেন রাবি শিক্ষার্থী

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২২, ০৮:৪২ পিএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক শিক্ষার্থী মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ অভিযোগ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ওই শিক্ষার্থীকে তিন ঘণ্টা নির্যাতন করে এবং মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ফলে তার চলমান পরীক্ষা বন্ধ রেখেই ক্যাম্পাস ছাড়েন। এছাড়া তার ডেবিটকার্ড থেকে জোরপূর্বক ৪৫ হাজার টাকা কেড়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে৷

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) ওই শিক্ষার্থী কুরিয়ারযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত একটি অভিযোগ দিয়েছেন৷

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. আল-আমিন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলায়। তার চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে। গত ১৭ আগস্ট তিনি সেমিস্টার ফাইনালের প্রথম পরীক্ষা দেওয়ার পরেই বাড়ি চলে যান৷

লিখিত অভিযোগপত্রে আল-আমিন জানান, গত ১৭ আগস্ট বিকেল সাড়ে চারটায় পরীক্ষা শেষে বের হওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও মতিহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা তাকে রবীন্দ্রভবন থেকে বঙ্গবন্ধু হলের ৩৩১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর সেখানে মুমিনুর রহমান, ফয়সাল আহমেদ ওরফে শশীসহ কয়েকজন সেখানে আসেন। পরবর্তীতে মুমিনুর তার মাথায় দুই লিটার পানির বোতল ও লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। তিনি একপর্যায়ে অচেতন হয়ে যান। এসময় তার মুঠোফোন থেকে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেন তারা। জ্ঞান ফেরার পর রাত আটটার দিকে জোরপূর্বক তার ডেবিট কার্ড নিয়ে গিয়ে ৪৫ হাজার টাকা তোলেন সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও ভাস্কর সাহা।

অভিযোগে আল-আমিন আরো উল্লেখ করেছেন, তাকে ভয় দেখিয়ে স্ট্যাম্প পেপারে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু তার বোন জাতীয় জরুরি নম্বরে (৯৯৯) কল করার পর পুলিশ আসায় স্বাক্ষর নিতে পারেননি। ওই হলে অন্য একটি ঘটনায় সাংবাদিক, পুলিশ ও অন্যরা এলে রাত নয়টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সে রাতেই জীবন বাঁচাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা অসম্পূর্ণ রেখে শরীয়তপুরে চলে যান তিনি। এখনো তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে মারধরে অভিযুক্ত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মুমিনুর রহমান বলেন, আল-আমিন খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিল৷ ক্যাম্পাসে এসে তার দুরবস্থার সময় আমার সাথে কাজ করার জন্য নিয়ে নেই। শুরুতে দুই হাজার টাকা করে পারিশ্রমিক পেত। এক-দেড় বছর চাকরি করার পর তার বেতন প্রায় দেড় লাখ টাকা হয়৷ পরে সে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার কথা বলে চাকরি ছেড়ে দিবে বলে৷ আমি তখন তাকে বইও কিনে দিয়েছি৷ কিন্তু পরবর্তীতে আল-আমিনসহ আরো কয়েকজন মিলে আরেকটি কোম্পানি খুলেন। পরে আমার কোম্পানির ক্লায়েন্টদেরকে আমার বিরুদ্ধে এটা-ওটা বলে তাদের কোম্পানিতে নিয়ে নিয়েছেন তারা। এতে আমার প্রায় ১৪ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এই ঘটনার সমাধানের জন্য গত ১৭ আগস্ট আলোচনায় বসেন৷ কিন্তু তাকে কোনো ধরনের মারধর করা হয়নি। সেসময় ছাত্রলীগের সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও ভাস্কর সাহা ছিলেন। কিন্তু পরে কী হয়েছে, এটা বলতে পারব না।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আল আমিন জানান, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের মুমিনুর রহমান, ফয়সাল আহমেদ শশী ও তাকি আহমেদের সাথে কয়েক মাস ফ্রিল্যান্সিং ‘ডিজিটাল মার্কেটিং’-এর কাজ করেছিলেন তিনি। কিন্তু মনমালিন্য হওয়ায় বছরখানেক আগে তিনি কাজ ছেড়ে দেন। এ কাজের জন্য তাদের সাথে কোনো চুক্তিপত্র ছিল না। তারা জোরপূর্বক মিথ্যা জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেন এবং সেটির ভিডিও ধারণ করেন। তারা হুমকি দিয়ে বলেন, তাদের কথার বিপক্ষে কোনো কথা বললে এবং কোনো পদক্ষেপ নিলে তাকে মেরে ফেলা হবে। তাই তিনি জীবন বাঁচানোর জন্য তারা যা বলেছেন, তাই করেছেন তিনি।

আল-আমিন  বলেন, তাদের কাছে তার পরীক্ষার প্রবেশপত্র আছে। তিনি ভয়ে আছেন। রাজশাহীতে আসতে পারছেন না। তাকে নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। যার কারণে তিনি কুরিয়ারের মাধ্যমে অভিযোগ পাঠিয়েছেন। এ ঘটনার বিচার চান তিনি।

টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত বলেন, মার্কেটিংয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মুমিনুরের সাথে আল আমিনের আইটিফার্ম নিয়ে সমস্যা ছিল। এজন্য মুমিন ক্যাম্পাসে এসে ওই ছেলেকে আটক করে। পরে বিষয়টি আমি জানতে পেরে বঙ্গবন্ধু হলে যাই। সেখানে মিউচ্যুয়ালের জন্য আমরা এক সাথে বসি। কিন্তু মুমিন তাকে পুলিশে দিয়ে দেওয়ার কথা বলছিল। পরবর্তীতে আমি বিষয়টি রুনুকে (রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) জানাই। রুনু আল আমিনের বিভাগের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর সুমন স্যারের সাথে কথা বলেন। সুমন স্যার ওই শিক্ষার্থীকে পুলিশে না দিতে অনুরোধ করেন। নিজেদের মধ্যে সমাধান করে নিতে বলেন। পরবর্তীতে রুনুসহ আমরা বসে বিষয়টি সমাধান করি। এখানে টাকা নেওয়া বা মারধরের প্রশ্নই আসে না।

মতিহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা বলেন, আমি কারও ডেবিট কার্ড থেকে টাকা উঠাইনি৷ আমার বিরুদ্ধে কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এমন অভিযোগ করছে৷

সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও ভাস্কর সাহা রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু অনুসারী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘মুমিন ও শশীর অধীনে আল-আমিন মূলত একটা চাকরি করতো। চাকরি সূত্রে তাদের কিছু ডকুমেন্ট সরিয়ে নেয় আল-আমিন। তাই তারা আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ বিষয়টি জানালে আমি আমি আলা-আমিনের সাথে কথা বলি এবং সে স্বীকার করে তার জন্য কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ যতটা সম্ভব পূরণের বিষয়ে সম্মত হয় আল-আমিন। এখানেই বিষয়টা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে এত দিন পর সে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার অনুসারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। তার কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এদিকে অভিযোগপত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, কুরিয়ারের মাধ্যমে একটি অভিযোগ এসেছে। এ ঘটনা তদন্তে আমরা একটি কমিটি করে দিয়েছি।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh