জুমার নামাজ পড়তে না পারলে কি করবেন

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৫১ পিএম

জুমার নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। ছবি: সংগৃহীত

জুমার নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। ছবি: সংগৃহীত

জুমার নামাজ পড়ার জন্য কুরআনে বেশ তাগিদ দেওয়া হয়েছে। জুমার নামাজের দিন ওই ওয়াক্তের সময়ে ব্যবসায়ীদের দোকান বন্ধ করে নামাজ পড়তে যেতে বলা হয়েছে। জুমার নামাজ পড়া আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ। শুক্রবার জোহরের ওয়াক্তে এ নামাজ পড়তে হয়। আল্লাহ তা’আলা ঈমানদার বান্দাকে লক্ষ্য করে বলেন- ‘হে ঈমানদারগণ! জুমার দিন (শুক্রবার) যখন নামাজের জন্য (আজানের মাধ্যমে) আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা দ্রুত আল্লাহর স্মরণে ছুটে চল এবং বেচা-কেনা বন্ধ করে দাও। এটি তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পার।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ৯)

কুরআনে এ আয়াতের মাধ্যমে জুমার আদায় করা মানুষের জন্য আবশ্যক করা হয়েছে। এজন্য প্রতিটি মুসলিমকে অবশ্যই জুমার নামাজ গুরুত্বসহ পড়া উচিত। হাদিসে প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জন্য জুমআ আবশ্যক।

হজরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জুমার নামাজ আদায় করা ওয়াজিব তথা অপরিহার্য কর্তব্য।’ (নাসাঈ)

আবার জুমার নামাজ ছেড়ে দেওয়া মারাত্মক অপরাধ। আল্লাহর বিধানের লঙ্ঘন। কেন না জুমার নামাজ পড়া আল্লাহর নির্দেশ। যারা এ নামাজ ছেড়ে দেয়, তাদের প্রসঙ্গে হাদিসের ভয়বহ অপরাধ ও শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে।

n রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি অবহেলা ও অলসতা করে পর পর তিন জুমার নামাজ পড়া ছেড়ে দেবে, মহান আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেবেন।’ (আবু দাউদ)

n অন্য হাদিসে এসেছে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ওজর এবং অনিষ্টের ভয় ছাড়া জুমার নামাজে অংশ গ্রহণ করে না, ওই ব্যক্তির নাম মুনাফিকের এমন দপ্তরে লেখা হয়, যেখান থেকে তার নাম কখনো মোছা কিংবা রদবদল করা হয় না।’

জুমার নামাজে মাসবুক হলে...

n কোনো ব্যক্তি যদি জুমার নামাজ পড়তে এসে এক রাকাআত পায় তবে সে ইমামের সালাম ফেরানোর পর বাকি এক রাকাআত পড়ে নিলেই জুমার আদায় হয়ে যাবে।

n অনুরূপভাবে কেউ দ্বিতীয় রাকআতের রুকুর আগে ইমামের সাথে নামাজে অংশগ্রহণ করতে পারলে ইমামের সালাম ফেরানোর পর ২ রাকাআত আদায় করলে জুমার নামাজ আদায় হয়ে যাবে।

n কিন্তু যদি কেউ নামাজের দ্বিতীয় রাকআতে রুকুর পর জামাআতে অংশগ্রহণ করে তবে তার এ অংশগ্রহণ জুমার হিসেবে বিবেচিত হবে না। বরং তাকে ইমামের সালাম ফেরানোর পর ৪ রাকাআত নামাজ আদায় করতে হবে। জামাআতে অংশগ্রহণের সময় জোহরের ৪ রাকাআত নামাজ আদায়ের নিয়তে শামিল হবে এবং তা আদায় করে নেবে। হাদিসে এসেছে- হজরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার এক রাকআত পেয়ে যায়, সে ব্যক্তি যেন আর এক রাকআত পড়ে নেয়। কিন্তু যে (দ্বিতীয় রাকআতের) রুকু না পায়, সে যেন জোহরের ৪ রাকআত পড়ে নেয়।’ (তাবারানি, বায়হাকি, মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বা)

n আর যদি কোনো ব্যক্তি জুমার নামাজ না পায় বা মসজিদে গিয়ে দেখে জুমার নামাজ শেষ হয়ে গেছে তবে ওই ব্যক্তি জোহরের ৪ রাকাআত নামাজ পড়ে নেবে। কারণ জামাআত ছাড়া একা একা জুমার নামাজ পড়া যায় না।

যারা জুমার নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাবে, তারা অবশ্য মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনবে। কোনো ধরনের কথা না বলে ইমামের খোতবায় গুরুত্ব দিতে হবে। কেন না জুমার খোতবা শোনা মুসল্লির জন্য ওয়াজিব।

মনে রাখতে হবে, কেউ কথা বললে, তাকে- ‘চুপ কর’ কথাও বলা যাবে না। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ইমামের খোতবা দেওয়া অবস্থায় যদি তুমি তোমার সাথীকে বল- ‘চুপ কর’, তাহলে তুমি অনর্থক কথা বললে।

অন্য বর্ণনা এসছে, ‘এ কথাটা বেশি আছে যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রকম অনর্থক কাজ করল, তার জন্য ওই জুমআয় আর কিছু রইল না।’

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত জুমা গুরুত্বসহ আদায় করা এবং জুমার খোতবা মনোযোগের সঙ্গে শোনা। একান্তই যদি কেউ নামাজ না পায় তবে জোহরের নামাজ আদায় করে নেওয়া।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh