রেজিস্ট্রেশন কার্ড হারালেন কলেজ কর্তৃপক্ষ, দায় চাপছে শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:১৩ পিএম

কৃষি কারিগরি কলেজ

কৃষি কারিগরি কলেজ

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের কৃষি কারিগরি কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার কারণে অষ্টম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দায়িত্ব অবহেলার কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০১৭- ২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড হারিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড হারানোর দায় নিজের নিয়ে থানায় জিডি ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির প্রকাশের পরামর্শ দিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ আয়েশা নাজনীন। 

শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের কৃষি কারিগরি কলেজের কৃষি ডিপ্লোমার ১৭ শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন কার্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ হারিয়ে ফেলেছে। এ দায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিজ নিজ থানায় জিডি করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বলেছেন কর্তৃপক্ষ। কৃষি ডিপ্লোমার রেজিস্ট্রেশন কার্ড হাতে না পেয়েই দায় নিয়ে থানায় জিডি বা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির প্রকাশ করতে নারাজ শিক্ষার্থীরা।

২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. বায়োজিদ হাসান বলেন, অষ্টম সেমিস্টারের যখন পরীক্ষা শেষ হয়ে যায় তখন রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেওয়া হয়। ওই রেজিস্ট্রেশন কার্ডটি এমএসসি ও চাকরির সময় কাজে লাগে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০১৭-১৮ সেশনের সব শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন হারিয়ে ফেলেছে। কৃষি ডিপ্লোমার এই রেজিস্ট্রেশন কার্ডের হারানোর দায় কলেজ কর্তৃপক্ষ নিবে না। কলেজ থেকে শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে, নিজেরা রেজিস্ট্রেশন কার্ডটি হারিয়েছ এমন দায় নিয়ে  নিজ নিজ থানায় একটা জিডি ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বলেছে। 

ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, আমরা কৃষি ডিপ্লোমার রেজিস্ট্রেশন কার্ড হাতেই পেলাম না তাহলে কেন আমরা নিজেরা দায় নিয়ে জিডি ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবো, জিডি আর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে যদি রেজিস্ট্রেশন কার্ডের জন্য কলেজ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করে তখন আমরা কি করবো। তখন তো কলেজের দায় থাকলো না আর কলেজ কর্তৃপক্ষ তো এটাও বলতে পারে তোমাদের কাছে থেকে হারিয়েছে এ জন্যই জিডি করেছো।

কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের সেশনের রেজিস্ট্রেশন কার্ড হারিয়েছে আর এ দায় কলেজ কর্তৃপক্ষের। আমাদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড দ্রুত তুলে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন ওই শিক্ষার্থী। 

ওই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জায়েদ বিন সিদ্দিকসহ কয়েকজন বলেন, ম্যাডাম বলেছে তোমাদের সেশনের রেজিস্ট্রেশন কার্ড হারিয়ে গেছে। যাদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড লাগবে তারা নিজ খরচে নিজের কাছে থেকে রেজিস্ট্রেশন কার্ডটি হারিয়েছে এরকম একটি জিডি ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর কলেজে জমা দিতে বলেছে। 

ওই শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, দুই-একজন ব্যতীত সবাই বাইরে থাকে ছোটখাটো কোম্পানির চাকরি করে আবার কেউ কেউ সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে, কিন্তু রেজিস্ট্রেশন কার্ড না হারিয়ে কেন নিজেরা দায় নেব। আর এরকম গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস তারা কিভাবে হারালেন। দায়িত্বের অবহেলার কারণে এমনটা হয়েছে বলেও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। কলেজ কর্তৃপক্ষকে রেজিস্ট্রেশন কার্ডটি দ্রুত তুলে দিতে অনুরোধ করেছেন তারা।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ওই শিক্ষাবর্ষের আরেক শিক্ষার্থী জানান, চতুর্থ সেমিস্টারের রেজিস্ট্রেশন কার্ড বোর্ড প্রস্তুত করে কলেজে পাঠিয়ে দেয়। সে সময় আয়েশা নাজনীন ম্যাডাম কলেজে নতুন জয়েন করেন। ওই শিক্ষার্থীর ধারণা তিনি আসার পরেই রেজিস্ট্রেশন কার্ডটি হারিয়েছে। আয়েশা নাজনীন ম্যাডাম এখন সাবেক প্রিন্সিপাল সালাম স্যারের উপরে দায় দিচ্ছেন, কিন্তু সাবেক প্রিন্সিপাল সালাম স্যারও তো মারা গেছেন।

কৃষি কারিগরি কলেজে প্রিন্সিপাল (অধ্যক্ষ) আয়েশা নাজনীন বলেন, আমি আসার পূর্বে  সাবেক প্রিন্সিপাল আব্দুস সালাম স্যারের সময় রেজিস্ট্রেশন কার্ড বোর্ডে প্রস্তুত থাকলেও তিনি সংগ্রহ করেনি। কিন্তু যেহেতু ভবিষ্যতে রেজিস্ট্রেশন কার্ডটি শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন হবে, এ জন্য তাদের এভাবে তোলার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কামারখন্দ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ছাকমান আলী বলেন, কৃষি কারিগরি কলেজ আমাদের আওতায় তবে আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না। কলেজটির সভাপতি ইউএনও ম্যাডাম তার সাথে কথা বলেন। 

কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কারিগরি কলেজের সভাপতি মেরিনা সুলতানা ট্রেনিংয়ে থাকার কারণে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে বর্তমানে কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুমা খাতুন বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম। যদি কলেজ কর্তৃপক্ষ রেজিস্ট্রেশন কার্ড হারিয়ে ফেলে তাহলে এটা শিক্ষার্থীদের দায় দেওয়ার মানে হয় না। কলেজ কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিয়ে জিডি কর‍তে হবে। বিষয়টি আমি জানার চেষ্টা করছি এবং এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh