ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:১৬ পিএম
প্রতিবন্ধী দুই সন্তানের সাথে ভ্যান চালক আতিয়ার রহমান। ছবি: ঝিনাইদহ প্রতিনিধি।
প্রতিবন্ধী দুই সন্তানের জনক আতিয়ার রহমানের সম্বল বলতে ছিল ব্যাটারিচালিত একটি ভ্যান। কিন্তু ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে উপার্জনের একমাত্র মাধ্যমটি হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
ঘরে চুলা জ্বলছে না দুদিন, তাই প্রতিবেশিদের কাছ থেকে চেয়ে এনে প্রতিবন্ধী দুই ছেলে-মেয়ের মুখে অন্ন জোগাচ্ছেন। এমন কঠিন অবস্থায় পড়েছে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার সারুটিয়া গ্রামের এই পরিবারটি।
প্রতিবেশী শাহিনুর রহমান বলেন, ভ্যান চালানো আতিয়ারের পেশা। দীর্ঘদিন ধরে এর সাথে যুক্ত থাকলেও, নিজের কোনো ভ্যান ছিল না। সম্প্রতি বাজারের পরিচিত এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিস্তিতে একটি ভ্যান কেনেন। প্রতিদিন যা আয় করতেন তা দিয়ে কোনো রকম সংসার চলতো। আর বাকি টাকা ভ্যানের কিস্তি হিসেবে জমা দিতেন।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) রাতে তিনজন অপরিচিত ব্যক্তি যাত্রী সেজে আতিয়ারের ভ্যানে চড়ে। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর তার চোখ মুখ বেধে ফেলে রেখে ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
প্রতিবেশীরা জানান, আতিয়ার পারিবারিক জীবনে দুই সন্তানের জনক। তবে দুইজনই প্রতিবন্ধী। এরমধ্যে মেয়ে কাকলী খাতুন (১৩) শারীরিক প্রতিবন্ধী। আর ছেলে শিহাব (৮) বুদ্ধি প্রতিবন্ধী।
ভুক্তভোগী আতিয়ার রহমান জানান, প্রতিদিনের মত গত মঙ্গলবার ভ্যান নিয়ে বের হন। এরপর উপজেলার ঘাঘা গ্রামে আসার পর ৩ জন অপরিচিত ব্যক্তি ভ্যান ভাড়া করেন। যেতে বলেন জালালপুরে। কথা মত তাদের নিয়ে যাত্রা করেন।
কিছুদূর যাওয়ার পর নিরব জায়গায় ওই তিন ব্যক্তি আমার হাত-পা চোখ বেঁধে ফেলে। পরে আমাকে ফেলে রেখে ভ্যান ও টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে হাত-পা চোখ বাঁধা অবস্থায় দেখে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দেয়।
নিজের উপার্জনের শেষ সম্বল ভ্যানটি হারিয়ে প্রতিবন্ধী দুই সন্তানকে নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন আতিয়ার। অন্যদিকে দীর্ঘ ৫ বছর অসুস্থ থাকার পর মারা গেছেন স্ত্রী। তার চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে গিয়ে আতিয়ারকে সব কিছু বিক্রি করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার শেষ সম্বল বলতে ছিল ইঞ্জিনচালিত ওই ভ্যানটি। কিন্তু তা ছিনতাইয়ের পর থেকে পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে দুই সন্তানের মুখে খাবার দিচ্ছি।
চুরি যাওয়া ভ্যানের বিষয়ে কোটচাঁদপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন আতিয়ার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার উপপরিদর্শক মাসুদুর রহমান।