মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:২০ পিএম
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন। ফাইল ছবি
সারা বিশ্বে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লাখ লাখ মানুষ রয়েছে। যার মধ্যে বিভিন্ন পেশার সফল মানুষ রয়েছেন। তাদের নাম বিভিন্ন সময় শোনা যায়। এ সফল মানুষদের প্রায়শই খোঁজ করা হয়। যার মধ্যে খেলাধুলায় আলো ছড়ানোদের খুঁজে বের করার কাজটি বাংলাদেশ নিয়মিতভাবেই করে যাচ্ছে। এবার সেই কাজটি করতে আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কর্মকর্তারা। বিশেষত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্রীড়া ইভেন্টে নিয়মিত সাফল্য পেতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রবাসী খেলোয়াড়দের দিয়ে সাফল্য পাওয়ার বড় বড় নজির এখন বিশ্বব্যাপী। ২০১৮ সালের সর্বশেষ বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা জেতা ফ্রান্সের কথাই এখানে বেশি করে বলা যায়। অনেকে তো বিশ্বকাপ জয়ী দলটাকে অভিবাসীদের দল বলতেও ছাড়েননি। সারা দুনিয়াই এখন সেই দিকে ঝুঁকছে। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনও সেই চেষ্টায় ছিল। তবে কিছু ক্ষেত্রে সফল আবার বেশিরভাগ সময়ই ব্যর্থ হতে হয়েছে। প্রবাসী খেলোয়াড়দের তালিকা করলে সবচেয়ে বড় আশার নাম হতে পারেন জামাল ভূঁইয়া। ডেনমার্ক প্রবাসী এই ফুটবলার তো এখন জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। ফুটবলে তারিক কাজী, ওবায়দুর রহমান নবাবরা আশা দেখাচ্ছেন। তবে উল্টোচিত্রও আছে।
২০১২ সালের অলিম্পিক গেমসে কাজী সাইক সিজারকে ওয়াইল্ড কার্ডের মাধ্যমে খেলার সুযোগ দেওয়া হলেও কিছুই করতে পারেনি। যেমন করে সদ্য শেষ হওয়া কমনওয়েলথ গেমসে ইমরানুর রহমান, আলী কাদের হকরা হতাশ করেছেন। তবু বাংলাদেশ এখন প্রবাসী অ্যাথলেট খোঁজার চেষ্টায় মত্ত। অলিম্পিক, কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়ান গেমসে পদকখরা কাটাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জন্মগ্রহণ করা খেলোয়াড়ের কোনো বিকল্প দেখছেন না বিওএ কর্তারা। দেশের ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর দেখভাল করা প্রতিষ্ঠানটি এবার বেশি করেই ভাবছে এসব খেলোয়াড়কে নিয়ে। ব্যর্থ হলেও ইমরানুর, আলী কাদেরদের পাশাপাশি নতুন নতুন খেলোয়াড় খুঁজে বের করতে চান। এখন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্রীড়া আসরে ভালো ফল পেতে প্রবাসী অ্যাথলেটের খোঁজে রয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর দেখভাল করা প্রতিষ্ঠান বিওএ। কমনওয়েলথ গেমসে অ্যারেনা বার্মিংহামে জিমন্যাস্টিক্স ডিসিপ্লিনের খেলা দেখতে গিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে এমন তথ্য জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান ও বিওএর সভাপতি জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
কমনওয়েলথ গেমসের অ্যারেনা বার্মিংহামের ভিআইপি গ্যালারিতে বসে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বিওএ সভাপতি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সুযোগ থাকলে এখন প্রবাসী অ্যাথলেট বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে বিওএ। এছাড়া অ্যাথলেটদের উন্নয়নে বিশ্বমানের অনুশীলন সুবিধা, কোচিংয়ের বিকল্প নেই মনে করেন সেনাবাহিনী প্রধান। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, এসব বিষয় নিশ্চিত করতে করণীয় নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণের কথাও বলেছেন বিওএ সভাপতি। এ সময় বিওএর মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, বালাদেশ দলের শেফ দ্য মিশন আব্দুর রকিব মন্টু এবং জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদুর রহমান বাবলুসহ বিওএর অন্যান্য কর্মকর্তা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
কমনওয়েলথ গেমসে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর অ্যাথলেটদের দেখে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমার জন্য তো এটা প্রথমবারের অভিজ্ঞতা। আমি বিওএর প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই প্রথম কমনওয়েলথ গেমসে বাংলাদেশের ডেলিগেশন দলের সঙ্গে এসেছি। গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখেছি, এটা আমার জন্য নতুন একটা অভিজ্ঞতা। আমাদের অ্যাথলেট যারা আছেন, তাদের কারো কারো সঙ্গে আমার আগেই দেখা হয়েছে, এখন কথাবার্তা হলো। দলের অ্যাথলেটদের পারফরম্যান্স দেখছি। শুরুর পর জিমন্যাস্টিক্স দেখলাম। আমরা এখন যে পর্যায়ে আছি, তাতে বোঝা যাচ্ছে আমাদের আরও অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে। আমি আশাবাদী যে আমরা ভবিষ্যতে ভালো করব।’
এদিকে বিশ্বমানের খেলোয়াড় তৈরির পদক্ষেপ ও জিমন্যাস্টিকসের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে বিওএ সভাপতি আরও বলেন, ‘আমি জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশনের সঙ্গে কথা বলেছি, এই খেলায় আমাদের অনেক উন্নতি করার সুযোগ আছে, সেটা আমি কর্মকর্তাদের বলেছি। এর জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার। বিশ্বমানের কোচ দরকার। সেগুলোর সঙ্গে বড় অঙ্কের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা জড়িত। আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যে যতটা পারি এটাকে বাড়ানো। আমরা মনে করছি, জিমন্যাস্টিক একটা সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র।’
এখানে যদি বিনিয়োগ করা হয়, তাহলে ভালো ফল আসতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। বিশেষ করে জিমন্যাস্টিকসের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় বিধায় এখানে বিনিয়োগ করলে ভালো কিছুই হবে। এছাড়া অ্যাথলেটদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে বলেও জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান। প্রবাসী অ্যাথলেট আরও বাড়ানোর বিষয়ে বিওএ সভাপতি বলেন, ‘ইউরোপ, আমেরিকায় দেখা যায় ভালো ভালো অ্যাথলেট, আফ্রিকান বংশোদ্ভূত বা অন্য দেশের, কিন্তু তারা এখানকার হয়ে খেলে সাফল্য পাচ্ছে। আমাদেরও যারা প্রবাসী অ্যাথলেট আছে, তাদের মধ্যে যদি ভালো প্রতিভাবান খেলোয়াড় থাকে, আমরা যদি বাংলাদেশে আনতে পারি, অবশ্যই এটা আমাদের জন্য বড় সুবিধা হবে বলে মনে করি। আমরা সেই সুযোগ পেলে অবশ্যই এর সঠিক ব্যবহার করব।’
অনুশীলনে আধুনিক সুযোগ সুবিধার বিষয়ে সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের ট্রেনিং, কোচিংয়ের ক্ষেত্রে যে সমস্ত উন্নতি করা দরকার, সেগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। সেগুলোর জন্য কী কী করা যায়, আমরা আলোচনা করে বিশ্বমানের বা ভালোমানের কোচিংয়ের কথা বলেছি। ট্রেনিংয়ের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, অবকাঠামো উন্নয়নের কথা গুরুত্ব সহকারে বলেছি। আপনি একটা কোচ আনবেন, জিমন্যাস্টিকস করতে হলে ভালো প্ল্যাটফর্মও প্রয়োজন হবে। তেমন মানের জায়গা প্রয়োজন সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’
এদিকে ফলাফলে আশার আলো খুঁজে না পেলেও হতাশ হতে রাজি নন বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা। এবারের কমনওয়েলথ গেমসে অ্যাথলেটদের পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশ না হয়ে তৃপ্ত বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেন, ‘এবারের কমনওয়েলথ গেমসে শুটিং ছাড়া পদক আসবে না এটা ধরে নিয়েই আমরা দল পাঠিয়েছিলাম। লক্ষ্য ছিল পারফরম্যান্সের যতটা সম্ভব উন্নতি করা যায়। আমার কাছে মনে হয়েছে আমরা বেশ ভালো উন্নতি করেছি। এছাড়া কোনো প্রকার আশা ছাড়া আসা টেবিল টেনিস কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে।
জিমন্যাস্টিক দলও দলগত ইভেন্টে নবম হয়েছে। যুব গেমস থেকে উঠে আসা আশিকুর রহমান তাজ ভারোত্তোলনে ভালো করায় এটাকে অর্জন মনে করছি। ভবিষ্যতের জন্য যা কাজে দেবে। আর প্রবাসী অ্যাথলেট আরও ভালোমানের পাওয়া গেলে সময় পরিবর্তন হয়ে যাবে। এখন অপেক্ষা সেই সময়ের।’