হাসপাতালে দুদকের হানা, বাদানুবাদে জড়ালেন অধ্যক্ষ

বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:৪৫ পিএম | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:৪৪ পিএম

দুদকের সাথে বাদানুবাদে জড়িয়ে পরেন অধ্যক্ষ। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

দুদকের সাথে বাদানুবাদে জড়িয়ে পরেন অধ্যক্ষ। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

সরকারি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করা, হাসপাতালের চেয়ে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী নিয়ে ব্যস্ত থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া নয়টা থেকে সোয়া দশটা পর্যন্ত দুদক বরিশাল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজে এই অভিযান চালান। অভিযানকালে অভিযোগের সত্যতাও পায় দুদক।

জানা গেছে, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আনোয়ার হোসেন বাবলু এবং অমিতাভ সরকার সরকারি দায়িত্ব পালন না করে ব্যক্তিগত চেম্বারে প্রতিদিন ৩-৪ শ রোগী দেখেন। এমনকি সরকার নির্ধারিত সময় সকাল ৮টায় অফিসেও আসেন না তারা। শুধু এই দুই চিকিৎসক নন অন্যান্য চিকিৎসকরা একইভাবে দায়িত্ব অবহেলা করেন বলে ভুক্তভোগীরা দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেন।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান শাহিনের কক্ষে গেলে তাকে পাননি দুদকের টিম। এমনকি অফিসের একজন পিয়নও উপস্থিত ছিলেন না সেখানে। দুদকের টিম আসার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি করে কার্যালয়ে আসেন কলেজ অধ্যক্ষ।

দুদুক টিম কলেজ অধ্যক্ষের কাছে চিকিৎসকদের এক সপ্তাহের বায়োমেট্রিক হাজিরার তালিকা দেখতে চান। তা দিতে অস্বীকার করেন কলেজ অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান শাহীন। এ নিয়ে দুদকের সাথে বাদানুবাদে জড়িয়ে পরেন তিনি।

একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, অভিযানকারী টিমের ছবি তুলে রাখার হুমকি দিচ্ছেন মনিরুজ্জামান শাহিন এবং তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। এসময় দুদক টিম তাদের পরিচয় দিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলে নিজেদের অবহিত করেন। তখন কলেজ অধ্যক্ষ পাল্টা চ্যালেঞ্চ ছুড়ে দিয়ে বলেন, আপনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, আর আমি (অধ্যক্ষ) কি উড়ে এসেছি নাকি।

এর কিছুক্ষণ পরে কলেজের অন্যান্য চিকিৎসকরা আসতে শুরু করেন। সোয়া ১০টার দিকে চিকিৎসকরা এসে অধ্যক্ষের কক্ষে বায়োমেট্রিক হাজিরা দিতে শুরু করেন।

দুদক টিম চলে যাওয়ার পরে কলেজ অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন অভিযোগ করে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের টিম আমার কক্ষে এসে আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। তারা আমাকে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা বলে অবহিত করেন। আমার কক্ষে ঢুকে যে আচরণ করেছেন তা তারা করতে পারেন না।

আমি জেনেছি তাদের কেউ একজন ডাক্তার দেখাতে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। এজন্য তারা এসেছেন চিকিৎসকরা কখন আসেন তা দেখার জন্য। দুদক টিম আমার কাছে বায়োমেট্রিক হাজিরার তালিকা চান। আমি স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের (ডিজি) সাথে আলাপ করেছি।

তিনি বলেছেন, দুদক টিম যদি আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে না আসেন তাহলে সে হঠাৎ করে এসে কাগজ চাইতে পারে না। এগুলো দেইনি দেখে আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছেন।

তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন বরিশালের সাধারণ সম্পাদক। এ বিষয়ে সকল চিকিৎসকদের অবহিত করেছি এবং আমার সংগঠন নিয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে বসে সিদ্ধান্ত নিব।

মনিরুজ্জামান শাহীন চিকিৎসকদের দেরিতে অফিসের আসার বিষয় স্বীকার করে বলেন, তা ঠিক আছে। আবার অনেক সময়ে চিকিৎসকরা দেরিতে এসে দায়িত্ব পালন করে পাঁচটার সময়েও যান। তা কিন্তু কেউ বলেন না। তবে ডাক্তাররা অতিরিক্ত দেরিতে আসলে তা কেউ মেনে নিবে না।

সরকারি দায়িত্ব অবহেলা করে ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসকরা সময় দেন বেশি অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, সরকার থেকে ব্যক্তিগত চেম্বার করা যাবে না এমন কোন  নির্দেশনা আছে বলে জানা নেই। যদি থাকে তাহলে চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত চেম্বার করবেন না। তাছাড়া কতজন রোগী দেখতে পারবেন সে বিষয়েও কোন নির্দেশনা নেই।

এদিকে মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনের পূর্বে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করে দুদকের টিম। তারা বিভিন্ন বহির্বিভাগ পরিদর্শন শেষে হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয়ে যান। সেখানে কিছু সময় অবস্থান করে মেডিকেল কলেজে যান।


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh