এশিয়া কাপ থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা

তারিক আল বান্না

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:০৩ পিএম

পুরো এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের এমন উচ্ছ্বাস খুব একটা দেখা যায়নি। ছবি: সংগৃহীত

পুরো এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের এমন উচ্ছ্বাস খুব একটা দেখা যায়নি। ছবি: সংগৃহীত

এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশ খুবই খারাপ ফল করেছে। ছয় দলের আসরে বাংলাদেশ সুপার ফোরেই উঠতে পারেনি। আগের চার আসরে বাংলাদেশ ফাইনালে উঠেছিল তিন বারই। ফলে শিরোপা লাভের একটা আশা তো ছিলই। অথচ বাংলাদেশ এবার সুপার ফোরেই জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়নি। সেখানে শিরোপা লাভ কিংবা লড়াইয়ে ওঠা তো স্বপ্নের বিষয়। তবে কিছু সাফল্য না পেলেও বড় ধরনের শিক্ষা নিতে পারবে বাংলাদেশ।

সমস্যা হলো, আমরা কখনো ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি না। এবার এশিয়া কাপে ছয় দলের মধ্যে সম্ভবত বাংলাদেশ ছিল সবচেয়ে দুর্বল। বাংলাদেশের পারফরম্যান্স সেটাই বলে। হংকং তো প্রতিপক্ষ দলগুলোকে ম্যাচ চলাকালে টেনশনে ফেলেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে দলগুলোর কোনো প্রকার চিন্তাই করতে হয়নি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আফগানিস্তান ও শ্রীলংকা মাঠে নেমে হাসতে হাসতে ম্যাচ শেষ করে। বোলাররা মনে হয় ইয়র্কার কী জিনিস, তা জানেনই না। কিংবা বোলিং কোচ তাদেরকে কখনোই ইয়র্কারের শিক্ষা দেয়নি। অথচ টি-টোয়েন্টির মূল কথা হলো কম রান দেওয়া। একজন বোলার যদি ৪ ওভারে ৪০ রানে ২ উইকেট নেন, আরেকজন যদি ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে কোনো উইকেট না পান, তাহলে দ্বিতীয়জনকে টি-টোয়েন্টির আদর্শ বোলার বলতে হবে। আবার ব্যাটিংয়ের বেলায় কেউ যদি ৭০ বলে ৫০ রান করেন, তার চেয়ে অনেক মূল্যবান যিনি ১৫ বলে ২৫ রান করেন। এই বিষয়গুলো বুঝতে হবে বোলার ও ব্যাটারদের।

এবারের এশিয়া কাপে আমরা কী দেখলাম? বাংলাদেশ ছাড়া সব দলই কমবেশি ভালো খেলেছে। হংকং দলও বাংলাদেশের মতো শেষ চারে উঠতে পারেনি। কিন্তু তারাও ভারতকে কম ভোগান্তিতে ফেলেনি। ভারতের সঙ্গে তারা ১৯২ রানের জবাবে ৫ উইকেটে ১৫২ রান তুলেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে অবশ্য লড়াই করতে পারেনি। বাংলাদেশ দল গ্রুপপর্বে আফগানিস্তানের সঙ্গে ২০ ওভারে মাত্র ১২৭ রান করে ৭ উইকেটে। যা কখনোই টি-টোয়েন্টি উপযোগী স্কোর নয়। বাংলাদেশ দলের ব্যাটারদের মধ্যে জীবন ফিরে পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেন কেবল ৩১ বলে ৪৮ রান করেন। বাকিরা মনে হয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ব্যাটিংই বোঝেন না। মোহাম্মদ নাইম ৮ বলে ৬, এনামুল হক বিজয় ১৪ বলে ৫, সাকিব ৯ বলে ১১, মুশফিকুর রহিম ৪ বলে ১, আফিফ হোসেন ১৫ বলে ১২, মাহমুদউল্লাহ ২৭ বলে ২৫ এবং মেহেদী হাসান ১২ বলে ১৪ রান করেন। অথচ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও আফগানিস্তানের ব্যাটারদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন বলের চেয়ে রান বেশি করেছেন। আফগানিস্তান মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে ১৮.৩ ওভারেই বাংলাদেশের স্কোর টপকে যায়। শ্রীলংকার সঙ্গে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ১৮৩ রান করে হয়তো ভেবেছিল, তারা জিতেই যাবে। কিন্তু বোলিংয়ে বাংলাদেশ খুবই খারাপ করে। সাকিব আল হাসান ছাড়া কেউই মিতব্যয়ী বোলার ছিলেন না। সকলেই প্রচুর রান দেন। কিন্তু ব্যাটে-বলে একটু হিসাব করে খেলতে পারলে হয়তো ম্যাচটিতে জিতে যেতে পারত বাংলাদেশ।

শেষ চারের ম্যাচগুলো ছিল দারুণ আকর্ষণীয়। প্রতিটি ম্যাচই অসাধারণ টি-টোয়েন্টি মেজাজের ছিল। এবারের এশিয়া কাপ থেকে অনেক কিছুই শিক্ষা নেওয়ার রয়েছে। বাংলাদেশের ওপেনিংয়ে কোনো ভালো জুটি নেই, উপযুক্ত ওপেনিং ব্যাটার নেই। টানা ৫টি ম্যাচে যদি ওপেনিং জুটি থেকে কমপক্ষে ২ বারও ভালো স্কোর না ওঠে, তাহলে তো সেটাকে ভালো বলা যায় না।

এশিয়া কাপে বাংলাদেশ আগের চার আসরের মধ্যে তিনটিতেই ফাইনালে খেলেছে। আর এবার হংকংয়ের কাতারে থাকতে হলো সাকিবদের। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ লাভের একমাত্র উপায় শিক্ষা গ্রহণ করা আর তা কাজে লাগানো। প্রথমত ওপেনিংয়ে তিন-চারজন ব্যাটার বের করতে হবে। লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, এনামুল হক বিজয়, সাকিব আল হাসান, সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকারসহ কয়েকজনের মধ্য থেকে ওপেনিং জুটি বেছে নিতে হবে। দ্বিতীয়ত সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ, সাইফউদ্দিন, মোসাদ্দেক হোসেনের পাশাপাশি আরও কয়েকজন অলরাউন্ডার খুঁজতে হবে। তৃতীয়ত মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবাল যেহেতু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলছেন না আর মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা দলেই নেই, সেহেতু নতুন করে ‘পঞ্চপাণ্ডব’ তৈরি করতে হবে। চতুর্থত মিডলঅর্ডারে কয়েকজন স্পেশালিস্ট ব্যাটার ফিট করতে হবে, যাতে করে প্রথম সারির ব্যাটাররা দ্রুত আউট হলে তারা দলকে বিপদমুক্ত করতে পারেন। পঞ্চমত লোয়ার অর্ডারের ব্যাটাররা যাতে দলীয় স্কোর বড় করতে পারে তার জন্য তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ষষ্ঠত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের উপযুক্ত স্পিনার ও পেসার খুঁজে বের করতে হবে। কম রান দেওয়া, ইয়র্কার বল করা, ওয়াইড ও নো বল এড়ানোর মনোভাব থাকতে হবে টি-টোয়েন্টির বোলারদের। বাংলাদেশের স্পিন বোলারকেও দেখা যায় নো বল করতে। 

এবারের এশিয়া কাপ থেকে এসব শিক্ষা নিতে পারলে অবশ্যই সাফল্য আসবে। কারণ বাংলাদেশে প্রতিভার অভাব নেই। ক্রিকেট বাংলাদেশকে সারাবিশ্বে অনেক সম্মান এনে দিয়েছে। তাছাড়া এই তো মাত্র কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটে একটা জায়গা করে নিয়েছিল। সেটা পুনরুদ্ধার করতে এবারের এশিয়া কাপের ব্যর্থতা থেকেই যা শেখার শিখতে হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh