দুই বছরে আরএমপির সাইবার ইউনিটের সফলতার হার ৯৪ শতাংশ

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:০৮ পিএম

ছবিতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরা। ছবি: রাজশাহী প্রতিনিধি

ছবিতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরা। ছবি: রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে এটির অপব্যবহার করে অপরাধ প্রবণতাও বেড়েছে। সময়ের তাগিদে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশেও (আরএমপি) সংযুক্ত হয়েছে ‘সাইবার ক্রাইম ইউনিট’। আজ শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) অপরাধ শনাক্তে ৯৪ শতাংশ সফলতা নিয়ে প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় বর্ষ অতিবাহিত করেছে আরএমপির বিশেষায়িত এই ইউনিট।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য বলছে, এই ইউনিট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে সংঘটিত হওয়া ৮৬১টি অপরাধের মধ্যে ৮৪০টিই নিষ্পত্তি করেছে। ইমো বা হোয়াটসঅ্যাপ বা ই-মেইল সংক্রান্ত প্রায় ৫৮টির বেশি অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছে আরএমপি। টিকটক বা লাইকি সংক্রান্ত মোট ১৫টি অভিযোগের সম্পূর্ণই নিষ্পত্তি করেছে আরএমপি।

গত দুই বছরে এই ইউনিট প্রায় ১৫৩টির মতো অপহরণের অভিযোগের মধ্যে ১৩৯ জন ভিকটিম উদ্ধারসহ আসামি শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রতিষ্ঠার পর হতে এ পর্যন্ত প্রায় ২৬০৭টি মোবাইল/ ল্যাপটপ উদ্ধার করার তথ্য সরবরাহ করেছে আরএমপি সাইবার ক্রাইম ইউনিট। কিশোর অপরাধ দমনে ডিজিটাল ডাটাবেইজে সংরক্ষিত ৫১৫ কিশোরদের নিয়মিত মনিটরিংও করা হচ্ছে। ‘হ্যালো আরএমপি’ অ্যাপসের মাধ্যমে প্রাপ্ত ২৯৫টির মতো অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

নগর পুলিশের তথ্য বলছে, গত দুই বছরে বিভিন্ন ধরনের অপরাধসহ সর্বমোট প্রায় ৪৪৩৬টির মতো অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে প্রায় ৪১৬৯টি অভিযোগের নিষ্পত্তি করেছে আরএমপির নব্য গঠিত সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

নগরীর ৫০০টি জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করে সাইবার ইউনিট। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে প্রায় ৪৭৫টির অধিক চুরির ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও চোর শনাক্তকরণ, ৮২টির অধিক ছিনতাই ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও অপরাধী শনাক্তকরণ, ৬৮টির অধিক ইভটিজিংয়ের অপরাধী শনাক্তকরণ, ৯৩টির অধিক হারানো ঘটনার রহস্য উদঘাটন, ৩১ টির মতো অজ্ঞান পার্টি ঘটনার আসামি শনাক্তকরণ, ৫৩টির অধিক মারামারি ঘটনার রহস্য উদঘাটন, ৭৫টি সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ শনাক্তসহ দ্রুত সংবাদ প্রেরণ, ২৩টির অধিক ক্লু-লেস মার্ডার মামলার রহস্য উদঘাটনসহ আসামি শনাক্তকরণ ছাড়াও ট্রাফিক কন্ট্রোল, বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রামের মিছিল/মিটিং/সমাবেশ/মানববন্ধন ও বিশেষ দিবসের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিং করছে এই ইউনিট।

২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারকে প্রধান করে ১ জন এসআই, ১ জন এএসআই এবং ৩ জন কনস্টেবলসহ মোট ৬ জন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত সদস্য নিয়ে এই ইউনিট যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ১ জন সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ৪ জন এসআই, ৩ জন এএসআই এবং ১৬ জন কনস্টেবলসহ সর্বমোট ২৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও চৌকস টিম এই ইউনিটে কাজ করছে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকায় ডিজিটাল মাধ্যমে সংগঠিত অপরাধ দমনে মহানগরবাসীর প্রত্যাশাপূরণে ও সাংবাদিকদের প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে সাইবার ক্রাইম ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়। সাইবার ক্রাইম ইউনিট সরাসরি অপারেশনাল টিম হিসেবে ফিল্ডে কাজ না করলেও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল কার্যক্রমে বিশেষ করে সাইবার অপরাধ ও অপরাধী  শনাক্তকরণসহ আসামি গ্রেপ্তারে সহায়তা প্রদান করছে। মেট্রোপলিটন এলাকার সকল ক্লু-লেস ঘটনা উদঘাটন, অপরাধী শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তার সহায়তায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী অন্যান্য জেলার সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত ঘটনার চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রেরণ করছে।

তিনি আরো বলেন, ফেসবুক সংক্রান্ত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে নারীদের বিভিন্ন স্পর্শকাতর ছবি/ ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা, ফেসবুকে যে কারো ছবি দিয়ে ভুয়া একাউন্ট তৈরি করা, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছেড়ে দিয়ে মানহানি করা, ফেসবুক একাউন্ট হ্যাকড করা, বিভিন্ন ভুয়া মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পর্নো ছবি ও ভিডিও পাঠানোসহ ফেসবুকের মাধ্যমে সংঘটিত সকল অপরাধসহ পূর্ব প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে সাবেক প্রেমিক/ প্রেমিকাকে হেনস্থা বা ব্ল্যাকমেইল করার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও প্রচার এসব অপরাধ দমনে সাইবার ক্রাইম ইউনিট মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

তিনি বলেন, ইউএস অ্যাম্বাসির তত্ত্বাবধানে অ্যান্টি টেররিজম অ্যাসিসটেন্সের আওতায় ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সহায়তায় সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অত্যাধুনিক ফরেনসিক যন্ত্রপাতি, তথ্যপ্রযুক্তি ও দক্ষ-প্রশিক্ষিত চৌকস জনবল নিয়ে একটি ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। যার কার্যক্রম অতি শিগগিরই চালু করা হবে। সর্বোপরি সাইবার ক্রাইম ইউনিট প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকার সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও রাষ্ট্র বিরোধীদের শনাক্তসহ অন্যান্য সকল অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকরণ ও গ্রেফতারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আরএমপি সাইবার ক্রাইম ইউনিট রাজশাহী মহানগরবাসীর সেবায় সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh