তামাকমুক্ত দেশ গড়তে আইন সংশোধনের তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৩৪ পিএম | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৩৬ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাক ব্যবহার নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তামাকের দুর্বল আইনের কারণে এই সময়ের মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ছে। বিপরীতে জনগণকে তামাকে আসক্ত করতে সুবিধা পাচ্ছে তামাক ও তামাকজাত পণ্য কোম্পানিগুলো। তাই দেশকে টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধন জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে আরো শক্তিশালী করার জন্য তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো বেশ কয়েকটি প্রস্তাবও দিয়েছে। সেগুলো আমলে নিয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু আইন সংশোধনে যত বিলম্ব হবে তামাক নিয়ন্ত্রণ তত দূরহ হবে বলে মনে করছে সংগঠনগুলো। ফলে একদিকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে, মৃত্যু ও অকাল পঙ্গুত্বের সংখ্যা বাড়ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, কিছু দুর্বলতার কারণে তামাক নিয়ন্ত্রণে আইনটি তামাকের ব্যবহার কমাতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না। এর মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭ ধারায় ‘ধূমপান এলাকা’ রাখার বিধান বাতিল করতে হবে। ২০৪০ সালের তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে সংশোধনের পাশাপাশি যথাযথ প্রয়োগে কার্যকরি ভূমিকা রাখতে হবে।

তিনি বলেন, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ করা জরুরি। বিষয়টি খুব ইফেকিটভ একটি বিষয়, এর ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি দোকানে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট আমদানি, উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, সচিত্র সতর্ক বার্তার আকার বৃদ্ধি করা প্রভৃতি বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

জানা গেছে, তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও কিছু ক্ষেত্রে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা দুই বছর পর পর বিশ্বব্যাপী তামাক ব্যবহারের ব্যাপকতা নিয়ে রিপোর্ট অন গ্লোবাল টোব্যাকো এপিডেমিক (জিটিসিআর) প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশে এফসিটিসির মূলনীতিগুলোর অনুবর্তিতা তুলে ধরা হয়। ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এখনও সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি।

বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি এফসিটিসির সাথে অনেকাংশে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও কিছু জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে। জনস্বাস্থ্য, বিশেষ করে কিশোর ও তরুণদের জন্য নতুন হুমকি ই-সিগারেটের মতো এমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই। আবার সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের ৫০ শতাংশ জুড়ে সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ বাধ্যতামূলক করা হলেও, মোড়কের আকার নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্যের ক্ষুদ্রাকারের মোড়কে সচিত্র সতর্কবার্তা সেভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে না।

২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় স্পিকার্স সম্মেলনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাক ব্যবহার নির্মূল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এজন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সংশোধন করারও ঘোষণা দেন। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যমান আইনের দুর্বলতাসমূহ নিরসনের লক্ষ্যে এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে আইনটিকে এফসিটিসির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সংশোধন করা হলে তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে, যা জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হ্রাসে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক হবে।

বিদ্যমান আইনের যেসব দুর্বলতা তামাক নিয়ন্ত্রণে বাধা:

বিদ্যমান আইনে গণপরিবহন ও রেস্তোঁরাসমূহে ক্ষেত্রবিশেষে ধূমপানের সুযোগ রাখা হয়েছে, বিড়ি-সিগারেটের সিঙ্গেল স্টিক বা খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ নয়, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়নি, ই-সিগারেটের মতো এমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টগুলো আমদানি ও বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, তামাক কোম্পানির ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি’ বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়নি এবং সবধরনের তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের আকার/আয়তন নির্ধারণ না করায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে।

আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি ও ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর বৈশ্বিক গবেষণা প্রতিবেদন টোব্যাকো এটলাস ২০১৮ অনুযায়ী, তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর এক লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। ধূমপানের কারণে বাংলাদেশে ১২ লাখের বেশি মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ অকাল পঙ্গুত্বের শিকার হন। তামাকজনিত রোগব্যাধী ও অকাল মৃত্যুর কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়।

বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির এক গবেষণার তথ্যানুযায়ী, তামাক ব্যবহারের কারণে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, যা ওই বছরের মোট মৃত্যুর ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। একই বছরে প্রায় ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত রোগে ভুগেছে এবং প্রায় ৬২ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, তামাক ব্যবহারের কারণে আক্রান্ত রোগীদের পেছনে স্বাস্থ্য খাতে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৬ শতাংশ খরচ বহন করেছে ব্যবহারকারীর পরিবার, আর ২৪ শতাংশ মেটানো হয়েছে জনস্বাস্থ্যের বাজেট থেকে। তামাক ব্যবহারজনিত অসুস্থতা ও এর কারণে অকালমৃত্যুর ফলে বার্ষিক উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় প্রায় ২২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ফলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতি ছিল ৩০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।

গবেষণায় দেখা গেছে, রাষ্ট্রীয় বিদ্যমান ১১টি আইন সাতটি বিধি ও দুটি আদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে-এমন বিধান যুক্ত রয়েছে বলে গবেষণায় চিহ্নিত করা হয়। সরাসরি আইন নীতি ছাড়াও এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো তামাককে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে উৎসাহিত করছে, যার মধ্যে পাঠ্যপুস্তকে তামাককে অর্থকরি  ফসল এবং সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে তামাকের পক্ষের তথ্য উপস্থাপন উল্লেখযোগ্য। তামাক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য হলেও মহামান্য রাষ্ট্রপতির (পারিশ্রমিক ও অধিকার) আইন, ১৯৭৫ আইনে মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাড়ির সদস্য বা তার অতিথি কর্তৃক গৃহীত হলে কোনো দেশি তামাকের ওপর কোনো আবগারি শুল্ক আদায় করা হবে না বলে উল্লেখ রয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় সিগারেটের মতো ক্ষতিকর ও স্বাস্থ্যহানিকর দ্রব্য শুল্কবিহীন প্রদানের বিধান বাতিল করা জরুরি। এ ধরনের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ওই গবেষণায় উঠে এসেছে।

শক্তিশালী আইনের বিকল্প নেই:

দেশে এখনো বিশাল একটি শ্রেণির মানুষ তামাক ব্যবহার করছে। তাদের তামাক ব্যবহার থেকে ফিরিয়ে আনতে আরো শক্তিশালী আইনের প্রয়োজন। সময়ের ব্যবধানে নতুন অনেক বিষয় উঠে আসে। যা পুরোনো আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বর্তমান আইনে অনেক দুর্বলতা ও ঘাটতি রয়ে গেছে।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে পাবলিক প্লেস (উন্মুক্ত স্থান) ও গণপরিবহনে শর্তাধীনে ধূমপানের নির্দিষ্ট স্থান রাখার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ আইনের ৭ ধারায় বলা হয়, কোনো পাবলিক প্লেস বা পাবলিক পরিবহনের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক বা নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি বা ব্যবস্থাপক সেখানে ধূমপানের জন্য স্থান চিহ্নিত বা নির্দিষ্ট করে দিতে পারবেন। তবে ধূমপানের স্থানের সীমানা, বর্ণনা, সরঞ্জাম এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে বলেও আইনে বলা আছে।

ফলে উন্মুক্ত স্থানে সম্পূর্ণরূপে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এজন্য আইন সংশোধন করে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে সম্পূর্ণরূপে ধূমপান নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে।

আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ।  তবে বিক্রয়কেন্দ্রে প্রদর্শনী নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আইনে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। আইনের এ দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শনের মাধ্যমে চলে অঘোষিত বিজ্ঞাপন।

এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে দায়ী করে আসছে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো। তাদের মতে, বাংলাদেশে বর্তমান মোট জনগোষ্ঠীর ৪৯ শতাংশই তরুণ। কোম্পানিগুলোর মূল টার্গেট কীভাবে এই বিশাল তরুণসমাজকে তামাকে আসক্ত করে ব্যবসা বাড়ানো যায়।

প্রসঙ্গত, পৃথিবীর ৫০টি দেশ ইতোমধ্যে বিক্রয় স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে। এর মধ্যে নেপাল, পাকিস্তান, থাইল্যান্ডসহ বাংলাদেশের আশেপাশের অনেক দেশ রয়েছে।

তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হলেও তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি। এর ফলে তামাক কোম্পানিগুলো সিএসআর কার্যক্রমের অজুহাতে নীতিপ্রণেতাদের সাথে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে।

প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এ বিষয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছে। ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক, বাংলাদেশ ২০২১’ শীর্ষক এ গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, তামাক কোম্পানির অব্যাহত হস্তক্ষেপে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। সূচকে বাংলাদেশের প্রাপ্ত স্কোর ৭২। অথচ যা ২০২০ সালে ছিল ৬৮ স্কোর।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ বেড়েছে এবং আর্টিকেল ৫.৩ এর নির্দেশনাবলী বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি হয়নি। কূটনৈতিক মাধ্যম ব্যবহার করে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ এবং প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার বিষয়টি উঠে এসেছে।

গবেষণার সুপারিশে তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে এফসিটিসির সাথে আরো সামঞ্জস্যপূর্ণ করার তাগিদ দেওয়া হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর ১৩ ধারা অনুযায়ী, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিসহ তামাকের সব ধরনের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা এবং পৃষ্ঠপোষকতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬২ দেশ তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।

বিশ্বের ১১৮টি দেশ সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। তবে বাংলাদেশে খুচরা শলাকা বিক্রিতে আইনগত বাধা নেই। আইনের এ দুর্বলতার কারণে শিশু-কিশোর ও তরুণরা কম দামে সহজে খুচরা শলাকা কিনতে পারছে। এছাড়া প্যাকেটবিহীন বিক্রি করার কারণে প্যাকেটের গায়ে যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী থাকে, সেটাও দেখা যায় না। এজন্য বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং প্যাকেটবিহীন জর্দা-গুল বিক্রয় নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে সংগঠনগুলো।

দেশে সব তামাকজাত পণ্যের মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মুদ্রণ বাধ্যতামূলক। আইনের ১০ ধারায় বলা হয়, তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন বা কৌটার দুই পাশের শতকরা পঞ্চাশ ভাগ পরিমাণ স্থানজুড়ে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি সম্পর্কে রঙিন ছবি ও লেখা সম্বলিত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কবাণী বাংলায় মুদ্রণ করতে হবে। তবে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার এ আকারের দিক দিয়ে নেপাল, ভারত, থাইল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কার চেয়েও বাংলাদেশের অবস্থান পেছনে।

কানাডিয়ান ক্যানসার সোসাইটির একটি প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, পৃথিবীর ১৫২টি দেশে তামাকপণ্যের মোড়কে স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মুদ্রণ হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশসহ ১০৫টি দেশ তামাকপণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ বাধ্যতামূলক করেছে। নেপাল তামাকপণ্যের মোড়কের উভয় পাশের ৯০ শতাংশ জায়গাজুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী চালু করেছে। ভারত ও থাইল্যান্ড ৮৫ এবং শ্রীলঙ্কা ৮০ শতাংশ জায়গাজুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ বাধ্যতামূলক করেছে।

আইনে নিষিদ্ধ না হওয়ায় বাংলাদেশে ই-সিগারেট আমদানি ও বিপণন নিষিদ্ধ নয়। এ সুযোগে দেশের তরুণসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ সিগারেটের বিকল্প হিসেবে দিন দিন ই-সিগারেটে ঝুঁকছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য (ব্যবহার) নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। যেখানে ই-সিগারেট/ভেপিং/এইচটিপির উৎপাদন, বিতরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। নিষিদ্ধ, ধূমপানের স্থানের বিধান বাতিল, পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তামাকজাত কোম্পানির যেকোনো প্রচারণা কার্যক্রম নিষিদ্ধ, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ, তামাকজাত দ্রব্যে বিক্রয়ে লাইসেন্সিং তৈরি, ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বৃদ্ধি, খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধ, মোড়কে উৎপাদনের তারিখ নিশ্চিত, ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের স্ট্যার্ন্ডাড মোড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত, তামাক কোম্পানি প্রভাব বন্ধে নীতিমালা প্রণয়ন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গের ক্ষেত্রে সরাসরি মামলা করার বিধানযুক্ত করা এবং আইনের সব বিধানে উল্লিখিত জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধি করা।

সামগ্রিক বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা রয়েছে। বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের লক্ষ্যে খসড়া তৈরি করা হয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh