কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:১৮ এএম
নিউইয়র্কে ‘রোহিঙ্গা সংকট’ বিষয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংখ্যালঘুদের অব্যাহত দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সকালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে হোটেল লোটে প্যালেসে ‘রোহিঙ্গা সংকট’ বিষয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
এসময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ৫টি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এগুলো হলো- রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে সমর্থন করা; আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ ও মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গাম্বিয়াকে সমর্থন করা; আন্তর্জাতিক বিচার আদালত, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং জাতীয় আদালতের সামনে কার্যক্রমে সহায়তা করা। জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অব্যাহত দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা; আসিয়ানের পাঁচ-দফা ঐক্যমতের অধীনে মিয়ানমারকে তাদের প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে বলা, দৃঢ়ভাবে বলা। বাধাহীন মানবিক প্রবেশাধিকারের জন্য মিয়ানমার যেন সম্মত হয় সেই প্রচেষ্টা চালানো।
সেসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত মাসে আমরা দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সংকটের ষষ্ঠ বছরে পা দিয়েছি। এরমধ্যে একজন রোহিঙ্গাও তার মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারেননি। যা অত্যন্ত হতাশাজনক।
তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টিতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের বাস্তব পদক্ষেপ এবং প্রকল্প গ্রহণ করা অতীব জরুরি।
শেখ হাসিনা বলেন, কিছু নির্বাচিত ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা মিয়ানমারের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। সংকট সমাধানে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক সদিচ্ছা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ মনে করে- রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন ও একটি টেকসই সমাধান খুঁজে পেতে আন্তর্জাতিক ন্যায়-বিচার ও জবাবদিহিতার প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, ন্যায়বিচার থেকে দায়মুক্তির বিরুদ্ধে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ যেকোনো উদ্যোগকে সমর্থন করবে। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ ও আসিয়ানের বর্তমান ফোকাস মিয়ানমারে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা। তবে মিয়ানমারের জনগণের জন্য শান্তি ও ন্যায়-বিচার আনতে এবং নিজেদের জন্মভূমিতে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ এই সংস্থাগুলোর শক্তিশালী ভূমিকার জন্য অপেক্ষা করছে।
শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুরু থেকেই বাংলাদেশ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি টেকসই ও শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছে। ২০১৭ সালে গণহারে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে দুই দেশ তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।
প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে দুটি প্রচেষ্টাও চালানো হয়েছিল। কিন্তু রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় বাছাই করা সেসব রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি ছিল না। তাদের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা, সহিংসতার পুনরাবৃত্তি না হওয়া, জীবিকার সুযোগ এবং নাগরিকত্বের পথসহ মৌলিক অধিকারের ইস্যুগুলো তাদের উদ্বেগের কারণ ছিল।
তিনি বলেন, মিয়ানমার তার অঙ্গীকার অমান্য করায় ত্রিপক্ষীয় একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চীনের সহায়তায় প্রত্যাবর্তন আলোচনা শুরু করার জন্য বাংলাদেশ বিকল্পের আশ্রয় নেয়। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।