আলোচিত সেই রহিমা যেভাবে উদ্ধার হলেন

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৪:১৭ পিএম

উদ্ধার হওয়া সেই রহিমা বেগম। ছবি: চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

উদ্ধার হওয়া সেই রহিমা বেগম। ছবি: চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

দেশজুড়ে বেশ কয়েকদিন আলোচনার কেন্দ্রে থাকা রহিমা বেগমকে ফরিদপুরের একটি বাড়ি থেকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাকে অপহরণ করা হয়েছে নাকি তিনি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন সেই বিষয়টি তদন্তের পর পিবিআই নিশ্চিত করার কথা রয়েছে। তবে উদ্ধার হওয়া বাড়ির বাসিন্দারা জানান, নিখোঁজ হওয়ার পর তিনি চট্টগ্রামেও ছিলেন, সেখান থেকে যান ফরিদপুরে।

গতকাল শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করা হয়। এরপর রাত ২টার দিকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় দৌলতপুর থানায়।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (নর্থ) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি রহিমা বেগম সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে রয়েছেন। আমরা আরো খোঁজ নিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হই। এরপর দৌলতপুর জোনের এডিসি আবদুর রহমান ও দৌলতপুর থানার ওসি মো. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম রাত পৌনে ১১টার দিকে ওই বাড়িতে পৌঁছায়। পুলিশ দেখে, রহিমা ওই বাড়িতে বসে দুই নারীর সাথে গল্প করছেন।

সেখানে রহিমা বেগমকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তিনি কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি। তবে ওই বাড়ির বাসিন্দারা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, রহিমা তাদেরকে জানিয়েছেন তিনি বেশ কয়েকদিন চট্টগ্রাম ও মোকসেদপুরে ছিলেন। এরপর ১৭ আগস্ট কুদ্দুসের বোয়ালমারীর বাড়িতে যান। তখন তার একটি ব্যাগে দুই প্যাকেট বিস্কুট, কিছু কাগজপত্র ও পরনের কয়েকটি কাপড় ছিল।

জানা যায়, রহিমা যে কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে ছিলেন, সেই কুদ্দুস বেশ কয়েক বছর আগে খুলনার সোনালি জুট মিলে চাকরি করতেন। তখন রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। পরে তিনি বোয়ালমারীতে চলে যান। বেশ কিছুদিন আগে রহিমার ছেলে একবার কুদ্দুসের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন।

মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন আরো জানান, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা রহিমা বেগমকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। কিন্তু রহিমা বেগম কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করেননি। সে কারণে ট্র্যাকিং করা সম্ভব হয়নি। রহিমা অপহরণ মামলাটির তদন্ত দৌলতপুর থানা পুলিশের কাছ থেকে পিবিআইতে গেছে। তারপরও খুলনা মহানগর পুলিশ মামলাটির ছায়া তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিল। পিবিআই তদন্ত করে দেখবে রহিমা বেগম কীভাবে নিখোঁজ হয়েছিল এবং কোথায় কোথায় ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুদ্দুসের ছেলে আলামিন, কুদ্দুসের স্ত্রী ও ভাইয়ের স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে।

রহিমা আসলেই অপহরণ হয়েছিলেন নাকি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বলেন, এটা পিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের মাধ্যমে বিস্তারিত উদঘাটন করে জানাবে।

এদিকে গত ২২ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে উদ্ধার হওয়া এক নারীর মরদেহ রহিমা বেগমের বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান। পরদিন ফুলপুর থানায় গিয়ে তিনি ছবি ও নিহতের পায়জামা দেখে ওই লাশ তার মায়ের বলে দাবি করেন। তিনি লাশের ডিএনএর সাথে তার ডিএনএ মিলিয়ে দেখারও আবেদন করেন।

অপরদিকে শনিবার মধ্যরাতে মরিয়ম মান্নান ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, ‘মাকে উদ্ধারের খবর পেয়েছি। আমার থেকে খুশি এই মুহূর্তে কেউ নেই। আমি এই মুহূর্তে খুলনা যাচ্ছি।’

দৌলতপুর থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে রহিমা ও তার মেয়েরা অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। তিনি মূলত স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন।’

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh