যে চরিত্রে অভিনয় করি তা ধারণের চেষ্টা করি: পূজা চেরি

মোহাম্মদ তারেক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৫০ এএম | আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৫১ এএম

পূজা চেরি। ছবি: সংগৃহীত

পূজা চেরি। ছবি: সংগৃহীত

ঢালিউডে চলতি সময়ে যে কজন চিত্রনায়িকা নজর কেড়েছেন তাদের অন্যতম পূজা চেরি। এক সময় শিশুশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া পূজা এখন পুরোদস্তুর নায়িকা। চুটিয়ে কাজ করছেন সিনেমায়। বুদ্ধিমতী পূজা কাজ করছেন একাধিক নায়কের বিপরীতে। যাতে জুটিতে বিরক্ত না হয়ে পড়ে দর্শক। তিনি হালের ক্রেজ সিয়াম আহমেদের বিপরীতে সফল। সাফল্য এসেছে শীর্ষ নায়ক ‘সুপারস্টার’ শাকিব খানের বিপরীতেও। প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে কথা বলেছেন সুন্দরী এ নায়িকা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ তারেক।

শিশুশিল্পী থেকে চিত্রনায়িকা পূজা চেরি। নিজের অবস্থানের এ পরিবর্তন কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

এ অবস্থান ইতিবাচকভাবে দেখছি। যারা শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করেন তারা পরবর্তী সময় নায়িকা চরিত্রে কাজ করলে দর্শক গ্রহণ করছেন কিনা তা নিয়ে ভাবনার অবকাশ থাকে। ‘পোড়ামন ২’-এর মাধ্যমে আমার অভিষেক। কিন্তু প্রথম ছবি ছিল ‘নূরজাহান’। ‘পোড়ামন ২’ দেখার পর অনেকে বলেছিল, আরেকটু বড় হওয়ার পর নায়িকা চরিত্রে নিলে ভালো হতো। এরপর ‘নূরজাহান’ দেখার পর সমালোচকদের সে ভুল ভেঙেছে। সবাই নায়িকা হিসেবে আমাকে গ্রহণ করা শুরু করে। এভাবে অভিনয় করে গেলে কিংবা এর চেয়ে ভালো করলে পূজা ভালো করবে এমন কথা শোনার পর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। শুরুর দিকে ‘শিশুশিল্পী’ উপাধিটা শুনতে হতো। এখন মানুষজন ‘নায়িকা’ বলে। 

পূজা চেরির প্রথম নায়ক সিয়াম আহমেদ। দাঁড়িয়ে গেল নতুন জুটি। দর্শকের চাহিদার পরও এ জুটিকে বেশি ছবিতে পাওয়া গেল না। বিষয়টি নিয়ে আপনার অভিমত জানতে চাই।

অনেক দিন পর আমাদের জুটির মাধ্যমে ঢালিউড একটি জুটি পেয়ে যায়। জুটি তৈরি হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এর আগের কোনো জুটি সেভাবে স্থায়ী হয়নি। হঠাৎ করে কিছু পেয়ে গেলে তা আগলে রাখতে হয়। যেনতেন কিছু করে নষ্ট করে দেওয়া উচিত না। আমরা জুটির আমেজ ধরে রাখতে চেয়েছি। ‘পোড়ামন ২’ ও ‘দহন’-এর পর দুজনের কাছে প্রচুর ছবির প্রস্তাব এসেছে। আমি বলব না ছবিগুলো খারাপ। আমার মতে, সেসব ছবির জন্য সিয়াম-পূজা জুটি মানানসই ছিল না। হয় আমার জন্য, না হয় সিয়ামের জন্য উপযুক্ত ছিল। আমরা অপেক্ষায় ছিলাম সে ছবির, যেটি দেখে দর্শক বলবে এ জুটির কাজ ভালো হয়। চাইলেই সব কাজ করতে পারতাম। প্রচুর টাকা পয়সা আয় হতো জুটিতে ভর করে। কিন্তু আমরা মান ধরে রাখতে চেয়েছি। জুটিটিকে আগলে রাখতে চেয়েছি। যাতে এ জুটির ছবি দেখতে গিয়ে দর্শকের আস্থা বজায় থাকে।

জুটি গড়ে উঠলে গুঞ্জনের জন্ম হয়। গুঞ্জনকে আপনি কীভাবে দেখেন?

প্রথমদিকে খারাপ লাগত। ভাবতাম, এসব কী লেখালেখি হয়! এখন খারাপ লাগে না। আমাদের পর্দার রসায়ন এত ভালো যে, দর্শক বাস্তব জীবনেও আমাদের নিয়ে চর্চা করে। অভিনয় ভালো হয় বলেই দর্শক গুঞ্জনে মাতে। আমি সবকিছু ইতিবাচকভাবে দেখছি। 

গুঞ্জন কাজে প্রভাব ফেলে?

একজন তারকার গুঞ্জন থাকাটা স্বাভাবিক। গুঞ্জন না থাকলে সে আর কীসের তারকা? আমি তাই বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে দেখি। কাজে এসব কোনো প্রভাব ফেলে না।

ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘গলুই’ ছবিতে ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন। তিনি প্রায় দুই যুগ ধরে অভিনয় করছেন। আবার সিয়াম আহমেদ এ প্রজন্মের জনপ্রিয় তারকা। এ রকম দুই জন তারকা নায়কের সাথে অভিনয় পূজাকে কতটা সমৃদ্ধ করেছে?

একজন নায়ক বা নায়িকার বড় তারকার সাথে কাজ করা সৌভাগ্যের। সবাই চায় একজন ভালো অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে কাজ করতে। কখনো ভাবিনি সুপারস্টার শাকিব খানের সঙ্গে কাজ হবে। তাও এত তাড়াতাড়ি। প্রস্তাব আসার পর গল্প, সহশিল্পী ও পরিচালক সবকিছু দেখে মনে হলো কাজটি করা যায়। এ জন্য কাজটি করেছি। ভালো লাগছে। মুক্তির পর দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে, সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। অন্যদিকে সিয়াম আহমেদ ও আমি একসঙ্গে বড়পর্দায় কাজ শুরু করেছি। সিনেমাহল পরিদর্শনে গিয়ে দেখি মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও তাকে ভীষণ পছন্দ করে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। সহশিল্পী ভালো করলে আমি গর্ববোধ করি। এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে পারফরম্যান্স শেষে আমি সিয়ামের পাশে বসেছিলাম। তার পুরস্কার হাতে নিয়ে বলেছিলাম, কনগ্রাচুলেশনস। একসঙ্গে যেহেতু শুরু করেছি, তার সাফল্যে ভালো লাগে।

নিজের ও চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থান নিয়ে পূজা সন্তুষ্ট?

করোনাকাল এখনো সম্পূর্ণরূপে যায়নি। এখনো মাস্ক ছাড়তে পারিনি। তবু সিনেমাহলে দর্শক যাচ্ছে। মানুষের চাওয়ার কোনো শেষ নেই। আমি আরও চাই। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি সন্তুষ্ট।

ইদানীং চলচ্চিত্রের অনেকেই ওয়েব প্ল্যাটফর্মে কাজ করছেন। পূজা চেরি কখন এ মাধ্যমে কাজ করবেন?

ভালো কাজের প্রতি আমার লোভ। এমন কোনো প্রজেক্ট হাতে এলে করি। পাশাপাশি পরিচালক ও সহশিল্পী যদি ভালো হয় তাহলে অবশ্যই করব। 

আগামী ছবিগুলোর খবর জানতে চাই। 

মাসুদ রানা, জ্বিন, সাইকো, হৃদিতা ইত্যাদি ছবি মুক্তির অপেক্ষায় আছে। এ ছাড়া ‘প্যারাসাইকোলজি’ শিরোনামের একটি ওয়েব সিরিজের কাজ করেছি। এগুলো কবে মুক্তি পাবে জানা নেই। সব নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের উপর। 

‘মাসুদ রানা’ বাংলা সাহিত্যের অনন্য সৃষ্টি। কাজী আনোয়ার হোসেনের কালজয়ী এ চরিত্রকে কেন্দ্র করে ছবি নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছবিতে সোহানা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য জানতে চাই।

অ্যাকশন সিকোয়েন্স করা বেশ কঠিন। ‘মাসুদ রানা’ জনপ্রিয় একটি চরিত্র। এ ছবির ‘সোহানা’ চরিত্রে অভিনয় করছি। আমার জন্য বড় পাওয়া। স্বপ্নের কোনো কিছু পেয়ে গেলে খুশির সীমা থাকে না। এ চরিত্রটি পাওয়ার পর কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। চুপ করে বসে ছিলাম কিছুক্ষণ। এরপর পরিচালক সৈকত নাসিরকে বলে ফাইট শিখতে চলে যাই। আমি যে চরিত্রে অভিনয় করি সে চরিত্র ধারণ করার চেষ্টা করি। যাতে করে দর্শক পূজা চেরিকে ভুলে যায়। সে চরিত্রকে মনে রাখে। এ ছবি দেখার পর দর্শক যেন মনে করে, সোহানাই হচ্ছে পূজা। মজার ব্যাপার হলো, এ ছবির শুটিং করতে গিয়ে নখ উল্টে যায়। তবুও শুটিং করি। যাতে কাজের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। আমি সারাজীবন এটি ধরে রাখতে চাই।

ছোটবেলায় হলে গিয়ে সিনেমা দেখেছেন?

মা ছোটবেলায় সিনেমাহলে নিয়ে যেতেন। প্রথম দেখেছিলাম গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘মনপুরা’। ফিরে এসে বাবাকে বলেছিলাম, এত বড় একটা টিভি দেখেছি। সেখানে মানুষ হাঁটাচলা করে। এখন অবশ্য সবার সিনেমা দেখার চেষ্টা করি। আমি শিখতে চাই। তাই চেষ্টা করি সময় সুযোগ পেলে সিনেমা দেখার। 

ভক্তদের ভালোবাসা, পাগলামি দেখতে কেমন লাগে?

আমি ভাবতে পারিনি কখনো ভক্তদের এত ভালোবাসা পাব। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাকে নিয়ে বাজে কথা লিখলে ভক্তরা প্রতিবাদ করে। তখন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। চেষ্টা করি তাদের সঙ্গে কথা বলার। তারা ভালোবাসে বলেই আমি পূজা চেরি। তাদের জন্যই আমরা। তাদের যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি। আমার খুবই ভালো লাগে। মোট ছয়টা সিনেমা মুক্তি পেল। চারটি সিনেমা মুক্তির পরপরই দর্শক জানে পূজা চেরি নামে একজন নায়িকা আছে। শুনতে ভালোই লাগে। 

শৈশবের পূজাকে মিস করা হয়?

আমি বর্তমান সময়টা উপভোগ করছি। যারা শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করে তারা খুব আদরের থাকে। তাদের নিয়ে কোনো গুঞ্জনও থাকে না। ওই বিষয়টা মিস করি। তবে তারকা হলে গুঞ্জন থাকবে। এখন যেভাবে আছি, আমি সন্তুষ্ট। 

আগামীতে পূজা নিজেকে কোন পর্যায়ে দেখতে চায়?

এ প্রশ্ন সবাই করে। আমরা কেউই ভবিষ্যৎ জানি না। তবু বলতে হয়, শীর্ষ একটি পর্যায়ে দেখতে চাই। যাতে এক নামে সবাই চিনে যায়। আমি আসলে সুচিত্রা সেনের অনেক বড় ভক্ত। তাকে সরাসরি দেখলে হয়তো জ্ঞান হারাতাম। আমি তাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করি। তার মতো হতে পারব কিনা জানি না। তবে চেষ্টা করি তার মতো হওয়ার। জীবনেও হতে পারব না জানি। তবুও।

তাহলে বলা যায়, আদর্শ সুচিত্রা সেন?

একদম। এক কথায় সুচিত্রা সেনই আমার আদর্শ। এর বাইরে অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে ভালো লাগে। মাসুদ রানা করার আগে তাকে লক্ষ করেছি। আমার কাছে তার অভিনয় ভালো লাগে।

বাংলাদেশের প্রিয় কে?

বাংলাদেশে শাবনূর আপু। তিনি আমার ভীষণ পছন্দের। 

মিডিয়ায় পরিবারের সহযোগিতা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

শতভাগের চেয়েও বেশি। একজন মানুষ ভালো অবস্থানে তখনই যেতে পারে যখন পরিবারের সহযোগিতা পায়। সবার আশীর্বাদে ভালো কাজ করতে পারছি। এখন পর্যন্ত যেসব কাজ করেছি তার পেছনে অবদান পরিবারের। দাদা দাদি জানতে চায় কোন ছবির কাজ করছি। মা তো সব সময় পাশে থাকেন। কাজ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন। পরিবারের সবাই খুব সহযোগিতা করেন। শুরু থেকেই পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছি। আগামীতেও পাব বলে আমার বিশ্বাস। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh