সাফওয়ানা জাবীন
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২২, ১০:৫৮ এএম | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২২, ১১:০৫ এএম
পূজায় পোশাকের বাহার
শরৎকালে প্রকৃতির মোহনীয় রূপের সঙ্গে বাতাসে এখন ভেসে বেড়াচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ। উৎসবের পোশাকে নতুন কি এসেছে তা নিয়ে ভাবনা থাকে সবারই। পূজার প্রস্তুতির মধ্যে অন্যতম পোশাক। পূজার পোশাক মানেই এখন আর শুধু শাড়ি-সালোয়ার-কামিজ, ধুতি-পাঞ্জাবি নয়। এসব ছাড়াও টপস, কুর্তি, ফতুয়া, শার্ট, ওয়েস্টার্ন, ফিউশন সব ধরনের পোশাকই এখন পূজার ফ্যাশনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
শুধু তাই নয়, একই রকম নকশায় যুগল পোশাক, ফ্যামিলি পোশাক- এই ট্রেন্ডগুলোও এখন জায়গা করে নিয়েছে পূজার আমেজে। ছেলেরা পরতে পারেন সুতি কাপড়ের পাঞ্জাবি-পায়জামা কিংবা ট্রাউজার, ফতুয়া। অষ্টমীর দিন পূজায় অঞ্জলি বিশেষভাবে পালন হয় এবং এদিন কুমারী পূজা হওয়ায়। তাই সবাই চায় এদিন একটু জমকালো সাজপোশাক পরতে। অষ্টমীতে নারীরা বেনারসি, কাতানের মতো ভারী শাড়ি পরতে পারেন। সালোয়ার-কামিজ পরলেও একটু ভারী কাজের নকশা বেছে নিন। ছেলেদের এদিন তসর, বলাকা সিল্ক, অ্যান্ডি সিল্ক, অ্যান্ডি সুতি পাঞ্জাবি বেশ মানায়।
নবমীতে মেয়েরা পরতে পারেন সালোয়ার-কামিজ, গাউন, লং স্কার্ট। ছেলেদের ভালো লাগবে পাঞ্জাবি। তবে এ দিনটিতে পায়জামার বদলে ধুতি কিংবা প্যান্ট পরলে লুক চেঞ্জ হবে। দশমীতে সবাই সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠে। তাই গাঢ় রঙের সাজপোশাক বেছে নিন। দশমীতে লাল শাড়ি, সাদা শাড়ি লাল পাড়ের ঐতিহ্য লক্ষ করা যায়। তবে সাদা শাড়ি লাল পাড়ই যে পরতে হবে এমনও কোনো কথা নেই। জমিনে হালকা কাজ, ভারী আঁচলের কাতান, বেনারসিও চলতে পারে। রঙের ক্ষেত্রে কালচে মেরুন, ম্যাজেন্টা, সোনালি ভালো লাগবে।
ছেলেরা এদিন ধুতি পরে বৈচিত্র্য আনতে পারেন। ধুতির সঙ্গে মিলিয়ে পরতে পারেন রাজকীয় মোটিফের পাঞ্জাবি। রাতে ফরমাল শার্ট-প্যান্ট, একরঙা পাঞ্জাবির সঙ্গে প্রিন্স কোট পরে বাজিমাত করতে পারেন।
দুর্গোৎসবে শাড়ির সাজ চিরন্তন। ঐতিহ্যবাহী গরদের সাদা জমিনে লাল পাড়ের শাড়ির পাশাপাশি ভিন্নতা আনতে পূজার শাড়িতে এখন ডিজাইনাররা শরতের নীল, সবুজ, লাল, কমলাসহ বিভিন্ন রং ব্যবহার করছেন। জনপ্রিয় এখন দেশি সিল্ক, সুতি, মসলিন, জামদানি, কাতান শাড়ি। শঙ্খ, দুর্গা মায়ের গহনা, পদ্ম, ওম, অস্ত্র প্রভৃতি মোটিভ ব্যবহার হয়েছে পূজার শাড়িতে।
নকশা ফুটিয়ে তুলতে এবার স্ক্রিন প্রিন্ট এবং হ্যান্ড অ্যাম্ব্র্র্রয়ডারির ব্যবহার বেশি হয়েছে। এ ছাড়া টাই-ডাই, অ্যাপলিক, মেশিন অ্যাম্ব্রয়ডারি, আড়িও নান্দনিক রূপে এসেছে শাড়ির নকশায়। পূজার শাড়ির সঙ্গে বেশ মানায় থ্রি-কোয়ার্টার হাতা, ঘটি হাতা, টিউলিপ হাতা, লম্বা হাতায় কুঁচি দেওয়া নকশার ব্লাউজ।
ছেলেদের বেলায় পাঞ্জাবি ছাড়া পূজা যেন ভাবাই যায় না। প্রতিবারের মতো এবার পূজাতেও পাঞ্জাবির কাটছাঁট, ডিজাইন আর কলারে এসেছে পরিবর্তন। লং প্যাটার্নের পাশাপাশি সেমি লংও চলছে। রেগুলার ফিটের পাশাপাশি স্লিমফিট এখন ফ্যাশনেবল। পাঞ্জাবির গলায় এবার ব্যান্ড কলার, শার্টের কলার ছাড়াও সাদামাটা কাট চোখে পড়বে। শেরওয়ানি গলার পাঞ্জাবি এখন অনেকেরই পছন্দ। সুতার কাজ ছাড়াও ভিন্ন কাপড়ের প্যাঁচওয়ার্ক, মেশিন অ্যাম্ব্রয়ডারি, ব্লক বেশ চলছে। স্ট্রাইপ ও প্রিন্ট পাঞ্জাবিও রয়েছে। পূজা কিছুটা গরম আর বৃষ্টির সময়টাতে হওয়ায় পাঞ্জাবির কাপড় যাতে আরামদায়ক হয় সেদিকে বিশেষ লক্ষ রাখা হয়েছে।
ছেলেরা ষষ্ঠী থেকে নবমীতে পরতে পারেন ক্যাজুয়াল পোশাক। ক্যাজুয়াল পোশাকের মধ্যে গোল গলা ও কলার দুই ধরনের টি-শার্টই এখন চলছে। একরঙা ও চেকের টি-শার্টেরও কদর বেশ। চাইলে যে কোনো পূজায় দুপুরে বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় কিংবা পূজামণ্ডপে ঘোরার সময় টি-শার্ট, শার্ট, ফতুয়া পরা যায়। এখন ব্লক, বাটিক, স্ক্রিনপ্রিন্টসহ নানা ধরনের কাজ হচ্ছে টি-শার্টগুলোতে।
শিশুদের জন্য নানা ধরনের স্টাইলিশ পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। আরাম পেতে সুতি কাপড়ে তৈরি হয়েছে অধিকাংশ পোশাক। রঙের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রংকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য অ্যালাইন কাট, হাতাকাটা পোশাক ছাড়াও ঘটি হাতার ফ্রক, টপসের কালেকশন বেড়েছে। পার্টির জন্য কিনতে পারেন অ্যান্ডি সিল্ক, জর্জেট, লিনেনের ফ্রক, স্কার্ট, গাউন। ছেলে শিশুদের শার্ট, টি-শার্ট, ফতুয়া, কাতুয়ায় প্রাধান্য পেয়েছে শর্ট ও ফুল স্লিভ। সাদা পাঞ্জাবির পাশাপাশি ভাইব্রেন্ট কালারের পাঞ্জাবি রাখা হয়েছে।