শরতের শুভ্রতায় দুর্গাবরণ

অনন্যা গোস্বামী

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২২, ০৪:০৯ পিএম | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২২, ০৪:১২ পিএম

 শরৎ মানেই পূজা। ছবি: সংগৃহীত

শরৎ মানেই পূজা। ছবি: সংগৃহীত

শরৎ... স্নিগ্ধতার মাস, শুভ্রতার মাস। শরৎ পূজার মাস। বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসবের মাস, দেবী দুর্গার মাস। শরৎ মানেই পূজা, বাতাসে পূজার গন্ধ। শরতের শুভ্রতার মাঝে দেবী দুর্গাকে বরণ করা হয় ঢাক-ঢোল আর শাঁখ বাজিয়ে। মা দুর্গা পৃথিবীতে আসেন যুগে যুগে, কালে কালে অসুররূপী দুষ্টের বিনাশ করতে। তাই বাঙালির কাছে দুর্গাপূজার আবেদন অপরিসীম।

দুর্গাপূজার শুরু হয় মহালয়ার দিন। এ দিন দেবীপক্ষের সূচনা ঘটে, ঘোষণা করা হয় দুর্গা মায়ের আগমন বাণী। মহালয়ার প্রথম প্রহরে চণ্ডী পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সর্বজনীন শারদোৎসব। পৌরাণিক রীতি মেনে দেবী দুর্গার বোধন হয় মহাষষ্ঠীর দিন। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী- এই তিন দিন দেবীপক্ষের পুণ্য তিথিতে দেবী দুর্গা পূজিত হন মহাসাড়ম্বরে। সবশেষে আসে বিজয়া দশমী। এ দিন সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় শারদীয় দুর্গোৎসব।

পূজার নানা দিকের পাশাপাশি ঘোরাঘুরির বিষয়েও পূজামণ্ডপকে ঘিরে থাকে বিভিন্ন আয়োজন। কারণ দুর্গাপূজা মানেই বিশাল হৈ-হুল্লোড়, বিভিন্ন পদের খাওয়া-দাওয়া, নতুন সাজপোশাক। তবে পূজার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরাঘুরি, আর সেটা অবশ্যই সব বয়সীদের জন্য। তাই সারা দিন বিভিন্ন পূজাম-পে নানা আয়োজন দেখতে সব বয়সের নারী পুরুষদের ভিড় দেখা যায়। মাকে ভোগ দেওয়ার ভিন্ন ভিন্ন পদের খাবার থাকে এসব মণ্ডপে। আর খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রে বাঙালির ঐতিহ্য কাঁসার ছোট বাটি, গ্লাস, চামচ-খুন্তি-হাতা ও থালার প্রাধান্য দেখা যায়। 

খাবারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকে মিষ্টিজাতীয় খাবার। ছোট ছোট ধাতব পাত্রে নারকেলের নাড়ু, লাড্ডু সন্দেশ, মালপোয়াসহ হরেক রকম মিষ্টিজাতীয় খাবার যেমন থাকে, তেমনি থাকে নানা পদের ফল আর লুচির সঙ্গে সবজি দিয়ে তৈরি খাবার।

দুর্গাপূজার সময় মণ্ডপে মণ্ডপে সমাগম ঘটে ভক্তদের। তারা ধূপদানি হাতে আরাধনা করেন দেবী দুর্গাকে। ধূপদানি, প্রদীপ, আগরদানি, কাঁসর-ঘণ্টা ইত্যাদি উপকরণের ভেতর কাঁসার ও পিতলের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। কোনো কোনো ধূপদানি আবার বেশ কয়েকটি ধূপদানির মিশ্রণে তৈরি হয়ে থাকে।

পূজার ঘোরাঘুরির ক্ষেত্রে পোশাক একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই উৎসবে নারীরা সাজেন তাদের মনের সবটুকু মাধুরী ঢেলে। নারীদের পরনে শাড়ির আধিক্য দেখা গেলেও শাড়িতে থাকে ভিন্নতা। লাল পাড়ের সাদা শাড়ির প্রাধান্য দেখা যায় এ সময়। ছেলেদের পোশাকের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায় ধুতি আর পাঞ্জাবি। কম বয়সী মেয়েরা সেজে ওঠে রংবেরঙের ফ্রক, সালোয়ার কামিজ কিংবা শাড়িতে। আর ছেলেরা সাজে নতুন ধুতি-পাঞ্জাবিতে। তাই বড়দের পাশাপাশি ছোটদের আনন্দ উল্লাস চোখে পড়ে দুর্গাপূজার মণ্ডপগুলোয়। 

অনেকেই পূজা উপলক্ষে পছন্দের মানুষ কিংবা পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে যান দূর-দূরান্তে। যারা নানা ব্যস্ততার কারণে দূরে যেতে পারেন না, তারা ঘুরে আসেন আশপাশের মণ্ডপ থেকে কিংবা কাছাকাছি দর্শনীয় কোনো জায়গা থেকে। শহরের পূজার সঙ্গে গ্রামের পূজার নানা মিল থাকলেও আছে কিছু অমিলও। শহরের পূজায় মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে যেমন দেখা হয় কোনো কোনো মণ্ডপের সাজে ভিন্নতা আছে। গ্রামের পূজায় আবার আত্মীয়স্বজন সবাই একত্র হয়ে বেড়াতে যান কাছে বা দূরে কোথাও।

দুর্গাপূজার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে সিঁদুর খেলা। বাঙালি নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় একে অপরকে রাঙিয়ে দেয় আবির রঙা সিঁদুর দিয়ে। এভাবে পরিবারের সবাই মিলে পূজার আয়োজনের সঙ্গে নানা পদের ভোগের ব্যবস্থায় কেটে যায় পূজার পুরোটা সময়। দেখতে দেখতে চলে আসে মাকে বিদায় দেওয়ার বেলা। পরের বছর পৃথিবী থেকে সব খারাপ বিনাশ করতে মা আবার আসবেন, এই আশা নিয়ে বিসর্জনের মাধ্যমে মা দুর্গাকে বিদায় জানায় তার সন্তানেরা। বিদায়বেলায় অশ্রুসিক্ত চোখে পরের বছরের আগমনের পথে তাকিয়ে থাকে মায়ের ভক্তরা।


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh