প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৪৩ এএম | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৪৯ এএম
জাতীয় সংসদ ভবন। ছবি: সংগৃহীত
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আসার সাথে সাথে সরকারের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে সরকার কিছুটা আর্থিক সংকটে থাকায় পশ্চিমা কোনো কোনো কূটনীতিক গণতন্ত্র রক্ষার অজুহাতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছেন।
দেশের আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা মনে করছেন, পশ্চিমা বিশ্বের এ তৎপরতার পেছনে তাদের জাতীয় স্বার্থ রয়েছে। আবার অনেক সময় শুধু ক্ষমতায় বসার লোভে অনেক রাজনৈতিক দল বিদেশিদের কাছে দেশের জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়। সেই দিক বিবেচনা করেও পশ্চিমাদের এই তৎপরতা বাড়তে পারে।
দেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব যতটা আগ্রহী, আরব বিশ্বের দেশগুলোর তেমন কোনো আগ্রহই নেই। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে সরকারের ওপর চাপের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টারের বক্তব্যে। গত ১৪ অক্টোবর তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় জার্মানি উদ্বিগ্ন। জার্মানি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, গণতন্ত্র ছাড়া কোনো দেশ ভালোভাবে চলতে পারে না। দেশের উন্নতির জন্য ধারাবাহিকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা প্রয়োজন। আমি বিশ্বাস করি, প্রত্যেক ভোটারের তার ভোট কাকে দেবে তা নির্ধারণ করার অধিকার আছে। তাই ভোট অনুষ্ঠান নিরপেক্ষভাবে হওয়া জরুরি। তাই সমালোচিত হলেও এ দেশে আমি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেই যাব।’
এর আগে একাধিকবার একই ধরনের বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। তিনি বলেন, ‘আশা করব আগামী জাতীয় নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে হবে। নির্বাচনে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক চর্চা করা হবে, যাতে ভোটাররা তাদের অধিকার স্বাচ্ছন্দ্যে প্রয়োগ করতে পারেন।’
নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হুইটলিও একই রকম মন্তব্য করেছেন একাধিকবার। এছাড়া নির্বাচন ইস্যুতে ঢাকায় নিযুক্ত পশ্চিমা বিশ্বের কূটনীতিকরা ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠকও করছেন।
অন্যদিকে ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের এমন তৎপরতায় কূটনৈতিক শিষ্টাচারসংশ্লিষ্ট ভিয়েনা আইন মেনে চলার বিষয়টি গত ১৮ জুলাই চিঠির মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
দেশের নির্বাচন ইস্যুতে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের এজেন্ডা পরিষ্কার হলেও বাকিদের ক্ষেত্রে ধোঁয়াশা রয়েছে। অতীতে জাতীয় নির্বাচনে জেতা-না-জেতার ক্ষেত্রে আগে তেল-গ্যাস রপ্তানি ছিল একটা বড় ইস্যু ছিলো, যা জাতীয় স্বার্থ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এখন চিত্র পাল্টে গেছে। বাংলাদেশের এখন মূল স্বার্থ হচ্ছে- অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যেখানে পশ্চিমাদের কোনো আগ্রহ নেই। এখন তাদের আগ্রহের জায়গায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মুদ্রা, ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে কৌশলী অবস্থান ও সেনাবাহিনীর অস্ত্র কেনাবেচা।
সাবেক অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে এখন থেকেই কূটনৈতিক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। যতদিন এগোবে এই তৎপরতা আরো বাড়বে। সরকারে এখন কিছুটা আর্থিক সংকট রয়েছে, তা না থাকলে তারা এতো বেশি তৎপর হতেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যেকোনো উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশের গণতন্ত্রেও ঘাটতি আছে ঠিক। কিন্তু আজকাল তো আমরা উন্নত দেশগুলোর মধ্যেও গণতন্ত্রের ঘাটতি দেখতে পাচ্ছি, যেমন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে তাকালেও তার প্রমাণ মেলে। বিষয়টা হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশে এমন ঘাটতি থাকলে উন্নত দেশগুলো ওই দুর্বলতার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে এবং অলোচনা শুরু করে, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে বড় বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাতীয় স্বার্থ নিয়ে বিভাজন থাকার কারণেও তারা এ সুযোগটা নেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু উন্নত দেশগুলো সুযোগটা গণতন্ত্রের স্বার্থে কতটুকু নেয় তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ এ সুযোগ ব্যবহার করে উন্নত দেশগুলো বিভিন্ন দেশে নিজেদের জাতীয় স্বার্থ বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। এর বেশিরভাগই বাণিজ্য ও নিরাপত্তাবিষয়ক। তাই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে।