উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ দিপালী উৎসব বরিশাল মহাশ্মশানে

বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২২, ০১:৩৪ পিএম

সমাধি ধোয়ামোছার কাজ চলছে পুরোদমে। ছবি: প্রতিবেদক

সমাধি ধোয়ামোছার কাজ চলছে পুরোদমে। ছবি: প্রতিবেদক

আর দুদিন পরেই আগামী রবিবার (২৩ অক্টোবর) সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্মশান দিপালী উৎসব। এদিন সন্ধ্যা নেমে আসতেই প্রদীপের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে শ্মশান। প্রিয়জনদের সমাধিতে আলো জ্বালিয়ে প্রার্থনা করবেন স্বজনরা।

শ্মশান দিপালীকে ঘিরে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো সাজছে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ বরিশালের আদি মহাশ্মশান। কবি জীবনানন্দ দাশের পিতা সত্যামনন্দ দাশ গুপ্ত, পিতামহ সর্বানন্দ দাশ গুপ্ত, ব্রিটিশ বিরোধী নেতা বিপ্লবী দেবেন ঘোষ, মনোরমা বসু মাসিমাসহ বহু খ্যাতিমান মানুষের সমাধি রয়েছে এই শ্মশানে।

এরইমধ্যে দুইশো’ বছরের পুরানো এই শ্মশানে প্রিয়জনদের সমাধি ধোয়ামোছার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়। এখন চলছে রং-তুলি আর আলোকসজ্জার কাজ। মোট কথা গোটা শ্মশানজুড়েই চলছে শেষ মুহূর্তের কর্মযজ্ঞ।

এদিকে, শ্মশান রক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছে, এবছরের দিপালী উৎসবে দেড় লাখের বেশি মানুষের সমাগম ঘটবে। আর সেই বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তার ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। শ্মশানজুড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পাশাপাশি থাকছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

সরেজমিনে বরিশাল নগরীর কাউনিয়া এলাকায় অবস্থিত মহাশ্মশান ঘুরে দেখা গেছে, ‘মৃত স্বজনদের বেশিরভাগ সমাধি ধোয়ামোছা, পরিষ্কার ও রং করার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে কেউ কেউ আবার এখনো কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সে সাথে কমিটির পক্ষ থেকে শশ্মানের ভেতরের সড়কগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি রোড লাইটগুলো চেক করে দেখছেন।

শ্মশান রক্ষা কমিটির তথ্যানুযায়ী, বরিশাল মহাশ্মশানে কাঁচা-পাকা মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার সমাধি রয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৯০০ সমাধি রয়েছে, যাদের স্বজনরা এ দেশে থাকেন না। সেসব সমাধিগুলোকে হলুদ রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সমাধিগুলোতে কমিটির উদ্যোগে দিপালী উৎসবের দিন সন্ধ্যায় মোমবাতি, ধূপকাঠি ও প্রদীপ প্রজ্বলন করা হবে।

বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার বলেন, ‘ভূত চতুর্দশীর পুণ্য তিথিতে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও আয়োজন করা হয়েছে দিপালী উৎসবের। শ্মশানে চলছে ধোয়া মোছার শেষ মুহূর্তের কাজ। প্রিয়জনের সমাধি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আর রং-তুলির কাজ আজকের মধ্যে (শুক্রবার) শেষ হবে। গত দুদিন ধরে শ্মশানের ভেতরে এবং বাইরে আলোকসজ্জার কাজ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রিয়জনের সমাধিতে মোমবাতি প্রজ্বলন করাই শ্মশান দিপালীর প্রধান উদ্দেশ্য। সেই সাথে মৃত ব্যক্তিদের সমাধিতে দেয়া হয় তাঁর প্রিয় খাবার ও পছন্দের সামগ্রীও। সমাধি প্রাঙ্গণ সাজানো হয় ফুল দিয়ে।’

তমাল মালাকার বলেন, ২০২ বছরের অধিক সময় ধরে বরিশাল মহাশ্মশানে দিপালী উৎসব আড়ম্বর পরিবেশে পালিত হয়ে আসছে। দিন যতো যাচ্ছে আয়োজনের পরিধি ততোই যেন বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ উপমহাদেশ এবং বাইরের অনেক দেশ থেকে প্রচুর লোকের সমাগম ঘটে এখানে। ইতিমধ্যে এসব দেশ থেকে অনেকেই এসেছেন। তারা হোটেল ও আত্মীয়স্বজনদের বাসায় অবস্থান করছেন। উৎসব শেষে আবার নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবেন।

তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই বছর মহাশ্মশানে জনসমাগম কম হয়েছিল। প্রবাসের লোকেরা আসতে পারেনি। তাই এ বছর সর্বোচ্চ জনসমাগম ঘটবে বলে আমশা আসা করছি। এক থেকে দেড় লাখ লোকের সমাগম হতে পারে। সেই দিকটি মাথায় রেখে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আগত মানুষের নিরাপত্তার জন্য শ্মশানের পক্ষ থেকে এবার ২৬টি সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এছাড়া শ্মশান কমিটির পক্ষ থেকে ১৫০ জন নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবী থাকবে। এর বাইরে পুলিশ, র‌্যাবসহ সকল গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। যেকোনো দুর্ঘটনা মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিস টিম থাকবে। শ্মশানের বাইরে এবং ভেতরে সিটি কর্পোরেশন থেকে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে, উপ-মহাদেশের সর্ববৃহৎ দিপালী উৎসব ঘিরে এরইমধ্যে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তার স্বার্থে এরইমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যা মহাশ্মশানসহ আশপাশের এলাকার টহল ব্যবস্থা জোরদার করেছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এশিয়া মহাদেশের মধ্যে এটা সর্ববৃহৎ উৎসব। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে আমাদের পক্ষ থেকে ৃ নিরাপত্তা দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, পাঁচ একর ৯৬ শতাংশের এ বরিশাল মহাশ্মশানে প্রতিবছর শ্মশান দিপালী উৎসব দেখতে আসেন মানুষ। কেউ দিপালীর আয়োজন দেখতে আসেন, আবার কেউ স্বজনদের সমাধিতে মোমবাতি, প্রদীপ প্রজ্বলন করেন, আবার কেউ মৃত স্বজনদের প্রিয় খাদ্য দিয়ে স্মরণ এবং আত্মার শান্তি কামনা করেন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh