র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলন

মাসিক ৩ লাখ টাকায় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিতো কেএনএফ

বান্দরবান প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২২, ০৫:৫৪ পিএম | আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২২, ১০:২৭ পিএম

র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্র, গুলি ও বিভিন্ন সরঞ্জামসহ গ্রেপ্তার জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। ছবি: বান্দরবান প্রতিনিধি।

র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্র, গুলি ও বিভিন্ন সরঞ্জামসহ গ্রেপ্তার জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। ছবি: বান্দরবান প্রতিনিধি।

পার্বত্য অঞ্চলের বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির দুর্গম সীমান্ত এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) অর্থের বিনিময়ে জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দিতো বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

আজ শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সকালে বান্দরবান জেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে র‌্যাবের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

এর আগে, গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি এবং রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৭ জঙ্গিসহ ১০জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাবের নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী।

র‌্যাব জানায়, ২০২১ সালে কেএনএফ প্রধান নাথান বমের সাথে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার হিল হিন্দার শারক্বিয়া’র সম্পর্ক গড়ে উঠে। যার প্রেক্ষিতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য মাসিক চুক্তিতে কাজ শুরু করে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী এই সংগঠনটি। চুক্তি অনুযায়ী কেএনএফ’কে মাসিক ৩ লাখ টাকা এবং তাদের সদস্যদের খাবার খরচ বহন করতো নতুন এই জঙ্গি সংগঠনটি। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারি পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল খন্দরকার আল মঈন জানান, গত ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অভিযানের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) রাতে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি সাইজামপাড়া ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি বাজার এলাকায় র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-১৫ যৌথ অভিযানে ৭ জন জঙ্গি ও ৩ জন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের গাড়িতে তোলা হচ্ছে। ছবি: বান্দরবান প্রতিনিধি

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মৃত সৈয়দ আবুল কালামের ছেলে সৈয়দ মারুফ আহমদ ওরফে মানিক (৩১), পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার মো. শাহ আলমের ছেলে ইমরান হোসাইন ওরফে সাওন (৩১), ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার মৃত গোলাম কিবরিয়ার ছেলে কাওসার ওরফে শিশির (৪৬), সিলেটের বিয়ানিবাজারের ফজলুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর আহম্মেদ ওরফে জনু (২৭), বরিশালের মুলাদির নয়ন মৃধার ছেলে ইব্রাহিম ওরফে আলী (১৯), সিলেটের গোলাপগঞ্জের আতিকুল আলমের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে বাপ্পি (২৩), সুনামগঞ্জ জেলার ছাতকের আব্দুস সালামের ছেলে রুফু মিয়া (২৬)।

এছাড়া বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার লাল মুন সয় বমের ছেলে জৌথান স্যাং বম (১৯), লাল মিন সম বমের ছেলে স্টিফেন বম (১৯) এবং জিক বিল বমের ছেলে মাল সম বমকেও (২০) গ্রেপ্তার করা হয়। তারা কেএনএফ সদস্য বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

র‌্যাব জানায়, অভিযানের সময় এসবিবিএল বন্দুক ৯টি, এসবিবিএল বন্দুকের ৫০ রাউন্ড গুলি, কার্তুজ কেইস ৬২টি, হাত বোমা ৬টি, কার্তুজ কেইস (এসএ) ১টি, কার্তুজ বেল্ট দুটি, দেশীয় পিস্তল ১টি, ওয়াকিটকি ১টি, ওয়াকিটকি চার্জার ১টি, দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র ও প্রপোজড অব কুকি-চিন স্টেট লেখা দশটি মাত্রচিত্র উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের অভিযানে উদ্ধারকৃত অবৈধ অস্ত্র। ছবি: বান্দরবান প্রতিনিধি

র‌্যাবের লিখিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণে থাকা জামাতুল আনসারের সদস্য সংখ্যা ৫০ জনের বেশি। সংগঠনটির আমির মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ। উগ্রবাদী এ সংগঠনে ছয়জন শূরা সদস্য রয়েছেন।

তারা অস্ত্র চালনাসহ সশস্ত্র সংগ্রামের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গোপনে পরিচালনার জন্য বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির দুর্গম এলাকাকে বেছে নেয়। এজন্য তারা স্থানীয় একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সহায়তা গ্রহণ করে।

তারা পার্বত্য অঞ্চলের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হতে তাদের খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রবাদি অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করত। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের সদস্যদের সাথে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করত।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার মারুফ আহমেদ ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা ও কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি হাফেজ নাঈমের আপন ছোটো ভাই। তিনি সিলেট অঞ্চলে জামাতুল আনসারের প্রচার শাখার প্রধান এবং সামরিক শাখার দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি।

জানা যায়, সম্প্রতি বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হওয়া কয়েকজন তরুণের বিষয়ে খোঁজ করতে গিয়ে সম্প্রতি ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায়’ নামে নতুন এক জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পায় র‌্যাব।

র‌্যাবের অভিযানে উদ্ধারকৃত গুলি ও অস্ত্র। ছবি: বান্দরবান প্রতিনিধি

র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উগ্রবাদে আকৃষ্ট হয়ে গত দুই বছরে বাড়ি ছাড়া ৫৫ তরুণের খোঁজ তারা পেয়েছে, তাদের মধ্যে ৩৮ জনের একটি তালিকাও তারা প্রকাশ করা হয়েছে। এবার ১৭ জনসহ মোট ৫৫ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।

এর আগে, র‌্যাবের পক্ষ থেকে রাজধানীতে একটি সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের কয়েকটি জেলা থেকে ‘নিখোঁজ তরুণরা’ পাহাড়ে একটি সশস্ত্র দলের ছত্রছায়ায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। অভিযোগ উঠে নতুনভাবে গড়ে উঠা কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র দলে এই ‘নিখোঁজ তরুণরা’ জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

এরপর গত ১০ অক্টোবর থেকে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়ন এবং বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার তিন সীমান্ত এলাকায় অভিযানে নামে র‌্যাব।

প্রসঙ্গত, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) মূলত কুকি-চিন বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমিদের নিয়ে তৈরি পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একটি সংগঠন। কেএনএফ তাদের ফেসবুক পেজে উল্লেখ করেছে, রাঙ্গামাটির সাজেক উপত্যকা বাঘাইছড়ি থেকে শুরু করে বরকল, জুরাইছড়ি, বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম নিয়ে স্বাধীন কুকি রাজ্য গঠনের আন্দোলন করে যাচ্ছে তারা।

র‌্যাবের অভিযানে উদ্ধারকৃত অন্যান্য সরঞ্জাম। ছবি: বান্দরবান প্রতিনিধি

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh