বরিশালে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড

বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২২, ০৮:২৬ পিএম

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে তলিয়ে গেছে বরিশাল নগরী। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে তলিয়ে গেছে বরিশাল নগরী। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ বাংলাদেশের স্থলভাগে এসে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এরপর এটি আরো উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড পার হয়ে ভারতের আসামের দিকে চলে গেছে। এতে দেশের আবহাওয়া পরিস্থিতি উন্নতি হতে শুরু করেছে।

বরিশালসহ দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে সোমবার রাত সাড়ে ৭ টার দিকে বৃষ্টি থেমে যায়। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দেখা মিলেছে রোদের। ঝড়ের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি ঝরেছে বরিশালে ৩২৪ মিলিমিটার। যা ১৯৬২ সালের পর একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শুরু থেকেই সিত্রাং এলোমেলো আচরণ শুরু করে। বারবার পাল্টাতে থাকে গতিপথও। তাই এর গতিবিধি ঠিকমতো বোঝা যায়নি। আসতে পথে বৃষ্টি ঝরিয়ে নিজের শক্তি ক্ষয় করেছে। এসেছে দ্রুত, চলেও গেছে দ্রুত। সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে। এরপর রাত নয়টার পর মূল অংশ আঘাত হানে। রাত একটার মধ্যেই উপকূল মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যায়।


আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বরিশালে ২৪ ঘণ্টায় চলতি মৌসুমের রেকর্ড ৩২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে বরিশালে। 

মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মাহফুজুর রহমান বলেন, বিগত দিনে বরিশালে একদিনে এত বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড নেই।

পুরনো দিনের তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে তিনি বলেন, এর আগে একদিনে সর্বোচ্চ ২৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ডটি ছিল ১৯৬৭ সালের ১০ নভেম্বর। তবে এযাবতকালের সব রেকর্ড ভেঙেছে সিত্রাংয়ের বৃষ্টিপাত। এতে দেখা যায়, সোমবার সকাল ছয়টা থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বরিশালে ৩২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।


বৃষ্টিপাতের কারণে বরিশাল নগরীর সবগুলো রাস্তাঘাট এমনকি দোকান ও বাড়িঘরে পানি ঢুকে পরে। একে বরিশাল নগরী ও বিভিন্ন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরে। মঙ্গলবার বিকেলেও বেশ কিছু এলাকায় পানি নামেনি।

নগরীর ফকিরবাড়ি সড়কের সরকারি মহিলা কলেজ গেট সংলগ্ন ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান বলেন, বৃষ্টির পানি ঢুকে দোকানের অনেক মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে দুটি ফ্রিজ, কম্পিউটার এবং অন্যান্য মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সকালে দোকানের পানি নামলেও সামনের সড়ক এখনো পানিতে ডুবে আছে।

নগরীর অনেক এলাকার পানি নামলেও বেশকিছু এলাকার রাস্তাঘাট এখনো পানিতে নিমজ্জিত। নগরীর নবগ্রাম রোড এলাকা, ফকিরবাড়ি, ব্রাউন কম্পাউন্ড, পশ্চিম কাউনিয়া, বগুড়া রোড, রূপাতলী হাউজিং, কলেজ রোড, ভাটিখানা, রূপাতলী এলাকা এখনো জলাবদ্ধ।


ঝড়রে কারণে বরিশাল নগরী বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ না হলেও ঝালকাঠি, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুরে বন্ধ হয়ে যায়। তবে মঙ্গলবার সকালে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হলেও অনেক এলাকায় গাছ ভেঙে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখনো সরকরাহ সচল হয়নি।

পশ্চিমাঞ্চলীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানির বরিশাল অঞ্চলের পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, প্রায় সব এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হয়েছে। তবে ঝালকাঠির নলছিটি, কাঁঠালিয়া এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের ওপর অনেক গাছ ভেঙে পড়ে আছে। সে জন্য ওই এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা যায়নি। এ জন্য কাজ চলছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh