এবার লবণ সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২২, ০৯:১২ এএম

লবণ। ছবি: সংগৃহীত

লবণ। ছবি: সংগৃহীত

চিনির পর এবার বাজারে লবণের সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাস সংকট ও যথাসময়ে আমদানি করতে না পারায় দেশে লবণের সংকট দেখা দিয়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। সংকট দেখা দিতেই বেড়েছে লবণের দাম।

আজ বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সরেজমিনে কয়েকটি খুচরা দোকানে গিয়ে লবণ পাওয়া যায়নি। কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলেন তারা লবণ পাচ্ছেন না।

বিষয়টি যাচাই করতে কারওয়ান বাজারের লবণ কোম্পানির পরিবেশকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তারা মিল থেকে লবণ পাচ্ছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসিআইয়ের লবণ পরিবেশক শোভন এন্টারপ্রাইজের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের কাছে কোনো লবণ নেই। তাই সাধারণ বিক্রেতাদের লবণ সরবরাহ করতে পারছি না। আমরা নিজেরাই লবণ পাচ্ছি না।’

কনফিডেন্স লবণের পরিবেশক সিরাজ জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী রবিন বলেন, ‘আমরা আজকে কোনো লবণ সরবরাহ করতে পারিনি। যোগাযোগ করা হলে আমাদেরকে বলা হচ্ছে গ্যাস সংকটরে কারণে নাকি উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই মাসে আমরা ২৫ কেজির বস্তা কিনেছিলাম ৭৬০ টাকায়, আগস্টে ছিল ৭৭০ টাকা। দুইদিন আগে একই বস্তার দাম পড়েছে ৮০০ টাকা। এর সাথে পরিবহন ও মজুরি বাবদ ১০ টাকা খরচ আছে। এ কারণে লবণের দাম কিছুটা বেড়েছে। এর প্রভাব বাজারেও পড়েছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে লবণ পাওয়া যাচ্ছে না।’

এ ব্যাপারে এসিআই লিমিটেডের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘লবণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- এসিআই, কনফিডেন্স, ফ্রেশ, তীর তারা ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণ বাজারজাত করে। অন্যদের চেয়ে তাদের গ্যাস বেশি প্রয়োজন পড়ে। গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। তাই এই সংকট দেখা দিয়েছে।’

তীর কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি হিসাব মতে আমাদের দেশে লবণের উৎপাদন হয় প্রায় ১৮ লাখ টন। কিন্তু চাহিদা ২৩ লাখ টনের মতো। বাকি পাঁচ লাখ টন লবণ আমদানি করা হয়। চলতি বছর আমদানি করা হয়েছে দেড় লাখ টন। এখানে সাড়ে ৩ লাখ টন ঘাটতি। মূলত সেই কারণেই লবণের সংকট তৈরি হয়েছে। তবে ডিসেম্বরে দেশে উৎপাদিত নতুন লবণ বাজারে আসা শুরু করলে সংকট কেটে যাবে বলে আশা করছি। তার আগে কিছুদিন একটু সংকট হতে পারে।’

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সংগঠনের সভাপতি নুরুল কবির বলেন, ‘দেশে মূলত ডিসেম্বর থেকে মধ্য মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়। এই সময়ে দাম তুলনামূলক কম থাকে। আমাদের উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশি। এই যে একটা ঘাটতি একারণেই মূলত লবণের সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের মিলগুলোর কাছে কাঁচামাল নেই যে আমরা লবণ সরবরাহ করব।’

তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের মে মাসের ২০ থেকে ২২ তারিখের দিকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) সাথে আমাদের সভা হয়েছিল। সেখানে আমরা পাঁচ লাখ টন লবণ ঘাটতির কথা বলেছিলাম। কিন্তু জুনের শেষে দেড় লাখ টন লবণ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর আমি সংগঠনের পক্ষ থেকে কয়েকবার চিঠি দিয়েও লবণ আমদানির অনুমোদন পাইনি। এ কারণেই লবণের সংকট দেখা দিয়েছে এবং দাম বাড়ার সম্ভাবনা আছে।’

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরে দেশে লবণের উৎপাদন হয়েছে ১৮ দশমিক ৩ লাখ টন। চাহিদা ২৩ দশমিক ৩৫ লাখ টন। ঘাটতি পাঁচ লাখ টনের কিছু বেশি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান মুহ. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘বাজারে লবণের সংকট বা মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আমাদের মতে বাজারে লবণের কোনো সংকট নেই।’

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh