‘বিমান এমডির কক্ষ থেকেই নিয়োগের প্রশ্নফাঁস হয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২২, ০২:৫৭ পিএম

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বক্তব্য রাখছেন। ছবি: সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বক্তব্য রাখছেন। ছবি: সংগৃহীত

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষ থেকেই নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।

আজ বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

এসময় তিনি বলেন, পরীক্ষা বাতিল ও সার্বিক তদন্তে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (লালবাগ) বিভাগ। তদন্তে ও গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে ৯ জনের দেওয়া জবানবন্দিতে স্পষ্ট হয়েছে, এমডির কক্ষ থেকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে। উদ্ধার করা হয়েছে আরো অনেক ব্ল্যাঙ্ক চেক।

তিনি আরো বলেন, বিমান বাংলাদেশ একটি পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের এমডির কক্ষ থেকে প্রশ্নফাঁস করেছেন জাহিদ নামে একজন অফিস সহকারী। নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে একটি কমিটি রয়েছে। তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। এখানে অনেক লোকের চাকরি হওয়ার কথা। তারা দায় এড়াতে পারেন না।

হারুন অর রশীদ বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়োগ পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির ঘটনায় গত ২১ নভেম্বর ডিবি লালবাগ প্রথম দিনই বিমানবন্দর, কাউলা থেকে আওলাদ হোসেন (২১), জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), এনামুল হক (২৮), হারুন-অর-রশিদ (৪০) ও মাহফুজুল আলম (৩১) নামে বিমান বাংলাদেশের পাঁচ কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে।

এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্রের সফট কপি, টাকা, ব্যাংকের চেক, স্ট্যাম্পসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।

এরপর প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আরো ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. মাসুদ (৩৪), জাহিদ হাসান (২৮), সমাজু ওরফে সোবহান (৩০), জাবেদ হোসেন (২৮) এবং জাকির হোসেন (২৯)।

ডিবির প্রধান হারুন বলেন, গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে ৯ জন প্রশ্নফাঁসে নিজেদের ও অন্যদের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তারা প্রশ্নফাঁসের যাবতীয় অপকর্মের বিবরণ দিয়েছেন।

হারুন অর রশীদ বলেন, পরীক্ষা কমিটির প্রধান, জিএম অ্যাডমিনের কক্ষে প্রশ্নপত্র রেডি হয়। সেখান থেকে একজন প্রশ্নপত্রের ছবি তোলেন। ২০ নভেম্বর বিমানের লোগো মুছে ফেলে ৮০টি প্রশ্ন টিক চিহ্ন দিয়ে আরও দুজনের কাছে সরবরাহ করে। ওই দুজন মোটরসাইকেলযোগে চলে যায়।

আবার ১৯ নভেম্বরের সামারাইজ প্রশ্নের ফটোকপি এমডির অফিস সহকারী জাহিদ হোসেনের দায়িত্বে দেওয়া হয়। তিনি স্মার্টফোন সাথে নিয়ে গিয়ে ফটোকপির সময় ছবি তুলে সোবহানের কাছে পাঠিয়ে দেন। সোবহান সরবরাহ করেন আরো কয়েকজনের কাছে।

এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশিদ বলেন, বিমান বাংলাদেশ একটি পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের (এমডি) কক্ষ থেকে প্রশ্নফাঁস করেছেন অফিস সহকারী জাহিদ। নিয়োগ পরীক্ষা কমিটির সদস্যদের দায়িত্ব ছিল সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা। তারা দায় এড়াতে পারেন না। এ ঘটনায় গ্রেপ্তাররা নিয়োগ কমিটির সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি বলেছেন। তাদের দায় রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২১ নভেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ১২টি পদে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু পরীক্ষার আগে একটি অসাধু চক্র বিমান বাংলাদেশের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় গত ২৬ নভেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগে তদন্তাধীন রয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh