পাবনায় ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২২, ০৫:২০ পিএম

সোনালী সৈকত প্রাঙ্গণ উৎসে মুখরিত হয়ে উঠে দর্শক সমাগমে। ছবি: পাবনা প্রতিনিধি

সোনালী সৈকত প্রাঙ্গণ উৎসে মুখরিত হয়ে উঠে দর্শক সমাগমে। ছবি: পাবনা প্রতিনিধি

শেখ রাসেল স্মৃতি স্মরণে পাবনা ভাঙ্গুড়া উপজেলার হাটগ্রাম সোনালী সৈকতে সমাপ্ত হলো মাসব্যাপী গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। পার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা দেখার জন্য হাজারো দর্শকের সমাগম ঘটে বিল পারে। সোনালী সৈকত প্রাঙ্গণ উৎসে মুখরিত হয়ে উঠে দর্শক সমাগমে।

বাজনার তালে তালে রঙিন পোশাক আর দেশের পতাকা নিয়ে ছুটে চলে বাইচের নৌকা। নৌকার হাল ধরে আছেন মাঝি আর ছন্দের তালে বৈঠা ফেলছেন মাল্লারা। স্থানীয় ও জেলা বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে ছুটে আসা দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে উৎসব মুখোর হয়ে উঠে সোনালী সৈকত প্রাঙ্গণ। জেলা ও জেলার বাহিরের প্রায় ২০টি নৌকা অংশ নিয়েছে এবারের প্রতিযোগিতায়। সপ্তাহের ছুটির দুইদিন শুক্র ও শনিবার বিকালে প্রথম পর্বের খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাপনি দিনে স্থানীয় চারটি নৌকা প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন। বিলের দক্ষিণের দিকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূর থেকে উত্তরের দিকে ছুটে আসে দুটি করে নৌকা। নৌকার গতির সাথে উপস্থিত দর্শকদের উল্লাসে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে বাইচ প্রাঙ্গণ। স্থানীয়রা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে এই নৌকা বাইচ দেখার জন্য। গ্রামের সাধারণ মানুষের চাহিদা ও বিনোদন বিমুখ মানুষদের আনন্দ দিতেই এই আয়োজন বলে জানা গেছে। 

স্থানীয় দর্শক মো. আলতাব সিফাত ও প্রভাষক আনোয়ার হোসেন বলেন, সোনালী সৈকতের ঐতিহ্য হলো নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি এই স্থানটিকে পর্যটন এলাকা হিসাবে ঘোষণা করা। এখানে সারা বছর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য দর্শনার্থীর সমাগম থাকে। এই অঞ্চলের যাতায়াতের সড়কের বেহালদশা। এখানে সন্ধ্যার পরে আলোর ব্যবস্থা ঠিকমত থাকেনা। বসার স্থান বাচ্চাদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা হলে এই অঞ্চল ও জেলার মানুষ ছুটির দিন গুলিতে এখানে ঘুরতে আসতো। কিন্তু প্রশাসনের নজরদারি অভাবে কোন উন্নয়ন হয়নি। তাই আমাদের দাবি এই স্থানটিকে পর্যটন উপযুক্ত করে গড়ে তুলবে সরকার।


নৌকার মালিক আজহার প্রামানিক বলেন, এই অঞ্চলের ঐতিহ্যের সাথে নৌকা বাইচের সম্পর্ক। এই গ্রামের নৌকা আগে সরকারিভাবে ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীতে বাইচে যেতো। সারা বাংলাদেশ থেকে সেখানে নৌকা নিয়ে আসতো সকলে। এই গ্রামের নৌকা প্রথম স্থান দখল করেছে বহুবার। আজ হারি হাওয়া পথে নৌকা বাইচ। তাই এই সোনালী সৈকতের বিশাল জলরাশিতে জাতীয়ভাবে নৌকা বাইচ করা সম্ভব। তবে তার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। কারণ একটি নৌকা তৈরি করতে আর তাকে যত্ন করতে অনেক অর্থের দরকার হয়। তাই অর্থের অভাবে অনেকেই নৌকা বাইচের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। সরকারে সুদৃষ্টি পেলে আবারো জাগ্রত হতে পারে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা।

নৌকা বাইচের আয়োজক পার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেদায়েতুল হক বলেন, দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতীক নৌকা। এই নৌকার সাথে আবেগ অনুভূতি জড়িত রয়েছে। গ্রামের মানুষ অধির আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে নৌকা বাইচ দেখার জন্য। তাইতো প্রতিবছর মাসব্যাপী এই সোনালী সৈকতে বাইচের আয়োজন করা হয়। লক্ষাধিক দর্শকের সমাগম ঘটে এই নৌকা বাইচ দেখার জন্য। আমরা আশা করি জাতীয়ভাবে এখানে নৌকা বাইচের আয়োজন করা সম্ভব। যদি সরকার সহযোগিতা করে তবে সারা দেশ থেকে নৌকা এনে আমরা আরো বড় পরিসের এই আয়োজন করতে পারবো।


অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন,পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম পাকন, উপজেলা চেয়ারম্যান মো. বাকী বিল্লাহ, জেলা পরিষদ সদস্য আসলাম আলী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ রঞ্জু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, আজিদা পারভীন, ইউপি চেয়ারম্যান মো. সরোয়ার, আওয়ামী লীগ নেতা লুকমান হোসেন, এমপি ছেলে ইবনুল হাসান সাকিল প্রমুখ।

জেলাতে ৮ম বারের মত এই নৌকা বাইচের আয়োজন। প্রতিটি নৌকাতে একজন মাঝি আর ৬০ থেকে ৭০ জন করে বৈঠাল তাদের নৌকাকে রকেট গতিতে এগিয়ে নিচ্ছে বিজয় নিশানের দিকে। নৌকা যত এগিয়ে আসছে দর্শকদের উল্লাস ততই উচ্ছ্বাসিত হয়। পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও কুষ্টিয়া জেলার প্রায় ২০টি নৌকা এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন। হাটগ্রাম সোনালী সৈকতে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। গত মাসে ১৪ তারিখ থেকে এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সমাপনি দিনে স্থানীয় চারটি নৌকা  হাদল একতা এক্সপ্রেস, হাদল দুরন্ত এক্সপ্রেস, জনতার সংগ্রাম এক্সপ্রেস, চানদাই জনতা এক্সপ্রেস অংশ গ্রহণ করেন। সমাপনি দিনের প্রথম বাইচে অংশ গ্রহণ করেন হাদল দুরন্ত এক্সপ্রেস ও হাদল নিউ একতা এক্সপ্রেস। দ্বিতীয় খেলাতে অংশ গ্রহণ করেন জনতার সংগ্রাম ও চানদাই এক্সপ্রেস। এবারের প্রতিযোগিতায় দুরন্ত এক্সপ্রেস প্রথম ও চানদাই জনতার সংগ্রাম এক্সপ্রেস দ্বিতীয় স্থান দখল করে। পরে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কারের নগদ অর্থ তুলে দেন অতিথিরা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh